শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার দিনেই সন্দেশখালি গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।
আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার আবার সন্দেশখালি গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে রওনা হওয়ার আগেই তিনি জেনে গিয়েছেন, সন্দেশখালিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও তাকে ‘গ্রেফতার’ বলে মানতে নারাজ শুভেন্দু। সন্দেশখালি যাওয়ার পথে তিনি বলেন, ‘‘এটা গ্রেফতার নয়, মিউচ্যুয়াল অ্যাডজাস্টমেন্ট। রাজকীয় ভাবে থাকবেন শাহজাহান। মোবাইল ফোনে এলাকা কন্ট্রোল করবেন।’’ বিজেপি যে সন্দেশখালিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চালিয়ে যাবে, তা বোঝাতে শুভেন্দু বলেন, ‘‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়।’’
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আপাতত জেলায় জেলায় ‘শাহজাহান’-এর খোঁজে ব্যস্ত থাকবে। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কথায়, ‘‘একটি এলাকার শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের সব জেলাতেই অনেক শাহজাহান রয়েছেন!’’
শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর রাজ্যে থাকার কথা শনিবারেও। সন্দেশখালির ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে গড়াচ্ছিল, তাতে বিজেপি ভেবে রেখেছিল, কেন শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু মোদীর সফরের আগের দিনই গ্রেফতার হয়ে গেলেন শাহজাহান! তবে এমনটা যে হতে পারে, সে ইঙ্গিত বুধবারেই দিয়েছিলেন শুভেন্দু। নিজস্ব এক্স হ্যান্ডেলে বিরোধী দলনেতা দাবি করেছিলেন, ‘‘চুক্তি হয়েছে পুলিশ এবং বিচার বিভাগীয় হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর (শাহজাহানের) যথাযথ যত্ন নেওয়া হবে। কারাগারে থাকাকালীন তাঁকে বিলাসবহুল হোটেলের সুবিধা দেওয়া হবে এবং একটি মোবাইল ফোনও হাতে পাবেন।’’ শুভেন্দু আরও লেখেন, ‘‘এমনকি, উডবার্ন ওয়ার্ডের (এসএসকেএম হাসপাতালে) একটি শয্যা তাঁর জন্য প্রস্তুত এবং খালি রাখা হবে। যদি তিনি কিছু সময় সেখানে কাটাতে চান।’’
বৃহস্পতিবারেও একই সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশের যে দল পরশু দিন (মঙ্গলবার) রাত ১২টার সময়ে শাহজাহানকে তুলেছে, সেই দলে আমার লোক ছিল। সকালেই তারা আমায় খবর দেয় যে, ফলতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ডিআইজি বারাসত রেঞ্জ ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের গাড়িতে।’’ শুধু এটুকুই নয়, শুভেন্দু আরও বলেন, ‘‘ওঁকে (শাহজাহান) আবার এখানে বসিরহাটের মিনাখাঁতে আনে। তার আগে আকুঞ্জিবাগানে ওঁর বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করায়। এবং বাড়ির লোকেদের উনি বলেছেন, আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। তোমরা এখন শান্ত থাকো। আইনের উপরে ভরসা রাখো। আমি ফিরে এসে সব ঠিকঠাক করব।’’ শুভেন্দু বৃহস্পতিবার দাবি তুলেছেন, ইডির হেফাজতে চাই শাহজাহানকে। সিবিআই তদন্তেরও দাবি তুলেছেন।
একই সুর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরও। তিনি বলেন, ‘‘শাহজাহান গ্রেফতার মানেই তো সব শেষ হয়ে গেলে না! সন্দেশখালির মা-বোনেরা তাঁদের সম্ভ্রম ফিরে পেলেন না। তাঁদের ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য বিজেপির লড়াই চলবে।’’ একই সঙ্গে সুকান্ত বলেন, ‘‘একা শাহজাহান কিছু করেনি। ওঁর দলবল রয়েছে। ওঁর মাথার উপরেও অনেকের হাত রয়েছে। তাঁদেরও গ্রেফতার করতে হবে।’’
সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গেলে ইডির উপরে গ্রামবাসীরা চড়াও হয়েছিলেন। তার পরেই বিজেপি সরব হয়েছিল। এর পরে নতুন করে সন্দেশখালিতে উত্তাপ ছড়ালে লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হাতে পেয়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। তাদের মূল দাবি ছিল, শাহজাহানের গ্রেফতার। সেই দাবি মিটে গিয়েছে। তবে বিজেপি যে সন্দেশখালিকে ‘হাতছাড়া’ করতে চাইছে না, তা বৃহস্পতিবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের দুই নেতা সুকান্ত-শুভেন্দু। কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে বৃহস্পতিবারও চলছে বিজেপির ধর্না। অন্য দিকে, আগামী ৬ মার্চ মোদীর বারাসতের সভায় সন্দেশখালিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ তোলা মহিলাদের নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বিজেপির। সেই সঙ্গে শুধু বাংলাতেই নয়, অন্য রাজ্যেও বাঙালি প্রধান এলাকাগুলিতে সন্দেশখালি নিয়ে প্রচার চায় পদ্মশিবির। সুকান্তের কথায়, ‘‘একটি জায়গার শাহজাহান গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু রাজ্যের সব জেলাতেই অনেক শাহজাহান রয়েছেন। মানুষ তৃণমূলকে ক্ষমা করবেন না। আর বিজেপিও মানুষের লড়াইয়ে সর্বত্র পাশে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy