Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Calcutta High Court

বংশরক্ষার তাগিদে স্ত্রীকে ধর্ষণ করানোয় অভিযুক্ত স্বামীকে কেন হেফাজতে নয়? প্রশ্ন হাই কোর্টের

নির্যাতিতার দাবি, তাঁদের দু’টি সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় মারা যাওয়ায় তিনি আর মা হতে চাননি। কিন্তু স্বামী ‘বংশরক্ষার’ তাগিদে পরিচিতদের দিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করান। সহবাসে বাধ্য করেন।

— প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ১৫:৪৭
Share: Save:

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মহিলাকে ধর্ষণের ঘটনায় তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হয়নি? কেন হেফাজতে নেওয়া হয়নি তাঁকে? প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের প্রশ্ন, প্রথমে অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ কেন অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেনি। কেনই বা লিখিত অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করেছিল পুলিশ। এই মামলায় তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হবে না, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি সিংহ।

বৃহস্পতিবার এই মামলা চলাকালীন পুলিশকে নির্যাতিতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি সিংহ। পাশাপাশি এই মামলাতে ১২ জুন সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১৩ জুন রাত ৯টা পর্যন্ত বারুইপুর থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি সিংহের নির্দেশ, বারুইপুর পুলিশ সুপারের অফিসেরও ফুটেজ সংরক্ষণ করতে হবে। সেখানে ১৩ জুনের রিপোর্ট সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এই মামলায় রাজ্যের কাছেও রিপোর্ট চেয়েছে হাই কোর্ট। আগামী ৩০ জুলাই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন আদালতকে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্টও জমা দিতে হবে।

স্বামীর বিরুদ্ধে বংশরক্ষার জন্য একাধিক পুরুষকে দিয়ে ধর্ষণ করানোর অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বারুইপুর থানা এলাকার এক মহিলা। ওই মহিলা এবং তাঁর স্বামী— দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক। দম্পতির দুই সন্তানই থ্যালাসেমিয়ায় ভুগে অল্প বয়সেই মারা যায়। নির্যাতিতার দাবি, তাঁদের দু’টি সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় মারা যাওয়ায় তিনি আর মা হতে চাননি। কিন্তু স্বামী ‘বংশরক্ষার’ তাগিদে তাঁর পরিচিত তিন জনের রক্তপরীক্ষা করান। প্রথমে তাঁদের মধ্যে এক জনের সঙ্গে তাঁকে সহবাস করতে বাধ্য করেন। কিন্তু, তিনি সন্তানসম্ভবা না-হওয়ায় আবার অন্য পুরুষকে দিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করিয়েছেন স্বামী। একাধিক বার তিনি ধর্ষণের শিকার বলেও অভিযোগ নির্যাতিতার।

নির্যাতিতার দাবি ছিল, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেও ছেড়ে দেয় পুলিশ। স্বামীকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েও নিরাপত্তার অভাববোধ করেন তিনি। মহিলার অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গিয়েছেন অভিযুক্তেরা। তার পর থেকে তিনি আতঙ্কে রয়েছেন। আপাতত বাড়িছাড়া। বার বার আশ্রয় বদল করেছেন। শেষমেশ তিনি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি সিংহের এজলাসে।

শুনানি চলাকালীনই অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশি পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রথমে অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ কেন পদক্ষেপ করেনি। লিখিত অভিযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলেন? স্বামীর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে? এখনও তাঁকে কেন হেফাজতে নেওয়া হয়নি।’’

এর পর নির্যাতিতার আইনজীবী আদালতে জানান, এই মামলায় এক অভিযুক্তকে প্রথমে পুলিশ গ্রেফতার করলেও পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সংবাদমাধ্যমে খবর দেখে আবার তাঁকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। সেই প্রসঙ্গে বিচারপতি সিংহের মন্তব্য, ‘‘কোন অফিসার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন? ওই অফিসারের বিরুদ্ধে কেন পদক্ষেপ করা হবে না? এত বড় অভিযোগ পাওয়ার পরও কেন তিনি ছেড়ে দিলেন?’’

এর পরেই এই মামলায় বারুইপুর থানার সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নির্যাতিতা মহিলার পুলিশি নিরাপত্তারও।

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court Rape Husband Wife
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE