গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
তৃণমূল জমানায় দেওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্তদের সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে যে শংসাপত্র দেওয়া হয়, তা-ই হল ওবিসি সার্টিফিকেট। বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, এই রায় ঘোষণার পর থেকেই বাতিল হওয়া শংসাপত্র আর কোনও চাকরি প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যাবে না। হাই কোর্টের এই নির্দেশের ফলে বাতিল হল প্রায় পাঁচ লক্ষ ওবিসি সার্টিফিকেট। তবে একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছে, এই সার্টিফিকেট ব্যবহারকারী যাঁরা ইতিমধ্যে সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন এই রায়ে তাঁদের উপর প্রভাব পড়বে না।
বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট অবশ্য নির্দিষ্ট করে তৃণমূল সরকারের কথা বলেনি। আদালত জানিয়েছে, ২০১০ সালের পরে জারি হওয়া সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হবে। ঘটনাচক্রে, ২০১১ সাল থেকে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। ফলে আদালতের নির্দেশ মূলত কার্যকর হতে চলেছে তৃণমূল জমানায় ইস্যু করা ওবিসি সার্টিফিকেটের উপরেই।
কেন এই সিদ্ধান্ত? কলকাতা হাই কোর্ট বলছে, ২০১০ সালের পরে যে সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছে, তা যথাযথ ভাবে আইন মেনে বানানো হয়নি। তাই ওই শংসাপত্র বাতিল করতে হবে। তবে একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানিয়েছে, যাঁরা এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন বা চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কোনও প্রভাব ফেলবে না। বাকিরা আর চাকরি প্রক্রিয়ায় ওই শংসাপত্র ব্যবহার করতে পারবেন না।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বুধবার এই রায় ঘোষণা করেন। তাঁদের বেঞ্চ বলে, ‘‘এর পরে কারা ওবিসি হবেন তা রাজ্যের আইনসভা অর্থাৎ বিধানসভাকে ঠিক করতে হবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার কমিশনকে ওবিসিদের তালিকা নির্ধারণ করতে হবে। সেই তালিকা রাজ্যের আইনসভা বা বিধানসভাকে পাঠাতে হবে। যাঁদের নাম বিধানসভা অনুমোদন দেবে পরবর্তী কালে তাঁরাই ওবিসি বলে গণ্য হবেন।’’
বুধবার যে মামলার ভিত্তিতে এই নির্দেশ দিল হাই কোর্ট, সেই মামলাটি দায়ের হয় ২০১২ সালে। মামলাকারীদের তরফে আদালতে হাজির ছিলেন আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এবং বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা জানিয়েছেন, ২০১০ সালে একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্টের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গে ‘অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি’ তৈরি করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। ওই শ্রেণির নাম দেওয়া হয় ‘ওবিসি-এ’। কিন্তু তার পরের বছরই বাংলার মসনদ থেকে সরে যায় বামফ্রন্ট। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে ওই শ্রেণি সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট ছাড়াই একটি তালিকা তৈরি করে এবং আইন প্রণয়ন করে। যার ভিত্তিতেই মামলা করা হয় তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালে হওয়া ওই মামলায় মামলাকারীরা আদালতে আর্জি করেন অবিলম্বে ওই আইন খারিজ করার জন্য। যুক্তি হিসাবে তাঁরা বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ১৯৯৩ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ওয়েলফেয়ার কমিশনের আইনের পরিপন্থী। এর ফলে সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষেরা। তাই সরকার যেন ওই আইন মেনেই শংসাপত্র দেয়।’’
বুধবার প্রায় ১২ বছর পরে ওই মামলার রায় ঘোষণা করল উচ্চ আদালত। ঘটনাচক্রে সেই সময়, যখন রাজ্যে ভোট চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy