Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

চালক বন্দি লক-আপে, বন্ধ হল বাস

মালিক থেকে শাসকদলের নেতা, কেউই তাঁদের নিরস্ত করতে পারলেন না। দিনভর নাকাল হলেন হাজার-হাজার যাত্রী। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৫
Share: Save:

তেহট্টে দুর্ঘটনায় পড়া বাসের চালককে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার ও পাঁচ দিন পুলিশ হেফাজতের প্রতিবাদে নদিয়া জেলা জুড়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দিলেন চালকেরা। মালিক থেকে শাসকদলের নেতা, কেউই তাঁদের নিরস্ত করতে পারলেন না। দিনভর নাকাল হলেন হাজার-হাজার যাত্রী। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নিশ্চিত নয়।

দুই বাসের রেষারেষিতে মঙ্গলবার তেহট্টে গলাকাটা এলাকায় রাস্তার পাশে নয়ানজুলিতে বাস উল্টে গিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আশি জনেরও বেশি। ঘটনার পর পলাতক ছিলেন বাসচালক ইন্দ্রজিৎ সর্দার। বুধবার তাঁকে শোলুয়া থেকে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার তেহট্ট আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।

শুক্রবার বেলা ১০টা নাগাদ প্রথমে কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর ও পলাশিপাড়া রুটের বাস বন্ধ করে দেন চালকরা। তার পরে একে-একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে অন্যান্য রুটের বাসও। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যত দিন না ইন্দ্রজিৎ জামিনে মুক্তি পাচ্ছেন, তত দিন জেলার সব রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বাস মালিক সমিতির পক্ষে অসীম দত্ত অবশ্য বলেন, “আমরা এ ভাবে হঠাৎ বাস বন্ধ করে দেওয়া সমর্থন করি না।”

বাস চালক সুবীর চক্রবর্তী, রাজেশ সিংহেরা বলেন, “আমরা কি দুষ্কৃতী যে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হবে? কোন চালকই ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটান না। বরং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দুর্ঘটনা এড়ানোরই চেষ্টা করেন। কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি না সেটা আগে প্রমাণ হোক! প্রয়োজনে সকলে আরটিও-র কাছে লাইসেন্স জমা দিয়ে আসব।” থানায় ইন্দ্রজিৎকে মারধর করা হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ।

দুপুরের আগেই বাস উধাও হয়ে যাওয়ায় সুযোগ নিতে নামে টোটো ও ম্যাজিক গাড়ি। কৃষ্ণনগরের তিনটি বাসস্ট্যান্ডেই বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। নবদ্বীপ থেকে দুই নাতনিকে নিয়ে এসেছিলেন প্রতিমা সাধুখাঁ। মোটা টাকা লছিমন ভাড়া দিয়ে তাঁরা ভীমপুরে ফেরেন। অনেকে আবার কৃষ্ণনগর স্টেশনে ফিরে ট্রেনে বহরমপুর গিয়ে ঘুরপথে করিমপুরে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে ম্যাজিক গাড়ি বেশি ভাড়ায় যাত্রী তুলতে শুরু করলে খেপে যান বাসকর্মীরা। কোনও কোনও ম্যাজিক গাড়ির চালক মারও খেয়েছেন বলে অভিযোগ।

নদিয়ার বাসকর্মীদের মধ্যে তৃণমূল অনুগামী আইএনটিটিইউসি-র প্রভাব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সংগঠনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিঠু শেখ চালকদের বোঝাতে ব্যর্থ হন। তাঁর দাবি, “পিছন থেকে অনেকে উস্কানি দিচ্ছে ওঁদের।” সিটু অনুমোদিত নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট মোটর এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সম্পাদক সমরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার দায় মালিক এড়াতে পারেন না। এতে নৈতিক সমর্থন আছে।’’ জেলাশাসক সুমিত গুপ্ত বলেন, “সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। আশা করছি, দ্রুত সুরাহা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Tehatta Accident Bus Strike Krishnagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE