যাতায়াতের অপেক্ষায়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
কলকাতায় চিকিৎসক দেখাতে এসেছিলেন খুলনার বাসিন্দা পারভিন খাতুন। মঙ্গলবার তিনি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরার সময় দেখলেন সীমান্তে যশোর রোডে দাঁড়িয়ে আছে দু’টি বাস। তাতে লেখা ‘কলকাতা যশোর খুলনা আন্তর্জাতিক বাস পরিষেবা’। থমকে দাঁড়ালেন তিনি। প্রশ্ন করে জানলেন কিছুদিনের মধ্যে চালু হতে চলেছে এই পরিষেবা। শুনে খুশির হাসি ছড়িয়ে গেল পারভিনের মুখে।
চিকিৎসার প্রয়োজনে পারভিনের মতো অনেকেই খুলনা থেকে এ দেশে আসেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক না হওয়ায় যাতায়াতের সময় তাঁদের প্রায়শই সমস্যায় পড়তে হয়। লেগে যায় অনেক সময়। কলকাতা-খুলনা বাস চালু হলে এই সমস্যা থেকে নিস্তার মিলবে বলে মনে করেন পারভিনের মতো বহু মানুষ। শুধু খুলনা নয়স এতে উপকৃত হবে যশোর এলাকার মানুষও।
মঙ্গলবার কলকাতা-খুলনা আন্তর্জাতিক বাস পরিষেবার পরীক্ষামূলক চলাচলের সূচনা হয়েছে। কলকাতায় এ দিন ওই বাস পরিষেবার সূচনা করেছেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। দুপুর দেড়টা নাগাদ কসবা থেকে দু’টি বাস রওনা দেয়। বিকেল ৪টা নাগাদ বাস দুটি এসে পৌঁছয় পেট্রাপোল বন্দরে। বাসে ছিলেন পরিবহণ দফতরের তিন বিশেষ সচিব-সহ পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা।
খুলনাবাসীরা জানিয়েছেন, কলকাতায় আসতে হলে প্রথমে তিন ঘণ্টা ট্রেনে করে বেনাপোলে পৌঁছতে হয়। সেখান থেকে পেট্রাপোল সীমান্তে পেরিয়ে এ দেশে এসে কোনও গাড়ি ধরে বা বনগাঁ স্টেশনে এসে ট্রেন ধরে শিয়ালদহে আসতে হয়। সব মিলিয়ে প্রায় দশ ঘণ্টা সময় লাগে। মাধব ভট্টাচার্য নামে এক বাংলাদেশির কথায়, ‘‘খুলনা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত সরাসরি কোনও বাস নেই। একমাত্র ট্রেনই ভরসা।’’
প্রত্যেকদিন পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে বহু মানুষ যাতায়াত করেন। খুলনা থেকেও অনেক মানুষ নানা কারণে এ দেশে আসেন। বিশেষ করে দুর্গা পুজোর সময় খুলনার বহু মানুষ কলকাতায় বেড়াতে আসেন। এই বাস চালু হলে মানুষের আসা যাওয়ায় সুবিধেই হবে। বাড়বে যাতায়াতও।
এ দিন পেট্রাপোল সীমান্তে বাস দুটি দেখতে এসেছিলেন বহু মানুষ। ফুল ও বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছিল। এ দিনের বাস যাত্রার নাম দেওয়া হয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সৌহার্দ্য যাত্রা।
পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাসগুলো কলকাতা থেকে খুলনা যাবে যশোর হয়ে। শুধু খুলনার মানুষেরাই নন, যশোরের মানুষও ওই পরিষেবায় উপকৃত হবে। মোট পথের দূরত্ব ১৮৫ কিলোমিটার। রাজ্য পরিবহণ দফতরের বিশেষ সচিব নীলাঞ্জন শাণ্ডিল্য বলেন, ‘‘আজ পরীক্ষামূলক ভাবে বাস যাত্রার সূচনা হল। কবে থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাস চলাচল শুরু হবে তা ঠিক করবে সরকার। কত ভাড়া হবে তার সিদ্ধান্ত পরে হবে।’’ পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান ওই চারটি দেশের মধ্যে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ওই বাস পরিষেবা চালু হতে চলেছে। বর্তমানে পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে কলকাতা-ঢাকা ও কলকাতা-ঢাকা-আগরতলার বাস চলাচল করে।
বাংলাদেশি কয়েকজন বলেন, ‘‘সরকারি বাসে যাতায়াত করলে পথে নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয় না। নিরাপত্তাও থাকে। সরাসরি গন্তব্যে পৌঁছনো যায়।’’ তবে বাংলাদেশিদের একটাই অনুরোধ, পাসপোর্ট ভিসা পরীক্ষার কাজ যাতে দ্রুত শেষ করা হয় সে দিকে কর্তৃপক্ষ যেন নজর রাখেন। এ দেশেরও বহু মানুষের পূর্বপুরুষের ভিটে খুলনাতে। তাঁদেরই একজন ননী কর্মকার। তিনি বলেন, ‘‘বৃদ্ধ বয়সে যাতায়াতের ঝক্কির জন্য জন্মভিটেতে বহুদিন যাওয়া হয়নি। এ বার ভাবছি বাসে করে একবার ঘুরেই আসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy