বিধানসভা থেকে বেরনোর সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপাল। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
ইতিহাস তৈরি করতে প্রস্তুত তিনি, রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন নিয়ে এ দিন সকাল পর্যন্ত এমনই সুর ছিল রাজ্যপালের গলায়। কিন্তু, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথে হাঁটলেনই না রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কোনওরকম ‘টিপ্পনী’ তো দূর, বরং রাজ্য সরকারের দেওয়া লিখিত ভাষণই হুবহু পাঠ করে শোনালেন তিনি। তাতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর) নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থানের উল্লেখও ছিল।
বাজেট অধিবেশনে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের দেওয়া লিখিত ভাষণই সাধারণত পাঠ করেন রাজ্যপালেরা। এত দিন ধরে চলে আসা সেই প্রথায় তিনি পরিবর্তন ঘটাবেন বলে বৃহস্পতিবার নিজেই ঘোষণা করেছিলেন জগদীপ ধনখড়। জানিয়েছিলেন, রাজ্যপালের ভাষণের মাধ্যমে সরকার নিজের নীতি নিয়ে কথা বলতেই পারে। কিন্তু তার উপর ‘টিপ্পনী’ দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাঁর। প্রয়োজনে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে নিজের মতামত এবং পর্যবেক্ষণ জানাবেন তিনি। তাঁর এই ঘোষণা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি ফের একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পথে যেতে চলেছেন রাজ্যপাল?
কিন্তু শুক্রবার রাজ্যপালের ভাষণ শুরু হতেই সেই ধন্দ কেটে যায়। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিয়ে কোনও ‘টিপ্পনী’ তো দূর, বরং বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন রাজ্যপাল। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, ঐক্যশ্রী-সহ সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের প্রশংসা করেন তিনি। জানান, বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা শান্তিপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক কারণে কিছু গোষ্ঠী নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা চালালেও, শান্তিপূর্ণ ভাবে তার মোকাবিলা করেছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়াই সরকার বুলবুলের মোকাবিলা করেছে।
আরও পড়ুন: নির্ভয়া কাণ্ডের চার দণ্ডিতের ফাঁসি আলাদা ভাবে? মঙ্গলবার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে
সম্প্রতি লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে সরস্বতী পুজোয় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন হুগলির সাংসদ লকেট চট্টেপাধ্যায়। এ দিনের ভাষণে তা-ও খারিজ করেন রাজ্যপাল। রাজ্যে সব উৎসব একই রকম ভাবে পালিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেন তিনি। যে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর নিয়ে বার বার বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে, এ দিন তা নিয়েও রাজ্যের সুরে কার্যত গলা মেলাতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। নিজের ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘ভিন্ন মতকে প্রত্যাখ্যান করাই নতুন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর-এর নামে বিভেদ সৃষ্টি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সিএএ আইন প্রত্যাহার করতে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানোর কথাও বলা হয় তাতে। সিএএ বিরোধী আন্দোলনে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন রাজ্যপাল।
বিধানসভায় নিয়ম মাফিক সব কিছু শেষ করলেও, ভাষণ শেষে বেরনোর সময় প্রথা ভেঙে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে যান রাজ্যপাল। কিছু ক্ষণ পর অধ্যক্ষের ঘরে গিয়ে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে তিন জনের মধ্যে আধঘণ্টা বৈঠকও হয়। মুখ্যমন্ত্রী এবং অধ্যক্ষের সঙ্গে রাজ্যপাল চা পান করেন বলে জানা গিয়েছে। সেই বৈঠক শেষে বেরোতেই রাজ্যপালকে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজভবনে ফিরে এ দিনের ভাষণ নিয়ে টুইট করেন ধনখড়। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘সংবিধানের মর্যাদা রেখেই আজকে ভাষণ দিয়েছি আমি। আমার আশা, সকলেই সংবিধানের প্রতি আনুগত্য দেখাবেন। এ ভাবেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বাড়িয়ে মানুষের সেবা করা যায়।’’
I delivered the address in the high traditions of constitution. I do hope all will pay due obeisance to the constitution. This is the only way to serve the people and enhance democratic values. I urge those in authority to desist from methodology not sanctified by constitution.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) February 7, 2020
রাজ্যপালের টুইট।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্ক করে পড়েছিলেন সরকারি কোপে, চিনে মৃত্যু সেই ডাক্তারের
অন্য দিকে, এ দিন বিকালে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফের এক দফা বৈঠকে বসতে পারেন রাজ্যপাল।মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। অর্থ বিল নিয়ে আলোচনার জন্য ফের এক দফা বৈঠক হতে পারে। এ দিনবিকেলে রাজ্যের ৩ প্রিন্সিপাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলকেও রাজ ভবনে তলব করেছেন রাজ্যপাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy