মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সাধারণ মানুষ এ বার সিদ্ধ ভাত খেতে গেলেও আলু সিদ্ধ মাখার তেল পাবেন না। এই সুরেই কেন্দ্রীয় বাজেটকে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সোমবার যা সংসদে পেশ করেছেন, তা আসলে ‘হুক্কাহুয়া বাজেট। ভেকধারী সরকারের ফেকধারী বাজেট’!
বাজেট প্রসঙ্গে এ দিন শিলিগুড়ির সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘পেট্রল, ডিজেলে সেস বসাল নতুন করে। এই নিয়ে আট বার বাড়াল। এ যেন নীলকর, জিজিয়া কর! চাষিরা বিপদে পড়ছে। সব জিনিসের দাম বাড়বে। আলু সিদ্ধ মাখার তেল পাওয়া যাবে না এরা থাকলে! ভোটের আগে এ সব করছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘সব বিক্রি করে দিচ্ছে। রেল, বিমানবন্দর, বিমা, এয়ার ইন্ডিয়া, বিএসএনএল সব বিক্রি করে দিচ্ছে। হাতে গোনা দু-এক জন এ সব পাবে। কোটিপতিদের টাকা ছাড় দিয়ে গরিবদের মারছে। এলআইসি ৭৪% নাকি বিক্রি হবে। কী করছে এরা!’’ জনতার প্রতি মমতার আবেদন, ‘‘আপনারা এদের বিক্রি করে দিন!’’
ভোটমুখী চার রাজ্য বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরল ও অসমে রাস্তা নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেটে। এ রাজ্যে কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রাস্তার কাজে টাকার কথা বলা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘তোমরা আবার কী করবে. আমরা তো রাস্তা করে দিয়েছি! এশিয়ান হাইওয়ে হয়েছে। ইস্ট ওয়েস্ট করিডর হচ্ছে ৩২০০ কোটি টাকা খরচ করে। ইসলামপুরের দিকে রাস্তার সমস্যা ছিল। মিটেছে। ভোটের আগে খালি মিথ্যা কথা!’’
মুখ্যমন্ত্রীর আরও সংযোজন, ‘‘রাস্তা তো আমরা করছি আর একটা। পাঁশকুড়া থেকে হুগলি, বর্ধমান হয়ে শিলিগুড়ি অবধি। নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কাজ এ ভাবে আমরা করি। মিথ্যা না বলে ওই টাকা চাষিদের দিন! যাঁরা রাস্তায় বসে রয়েছে।’’
রাস্তা-সহ পরিকাঠামো প্রসঙ্গে তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও। তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতার আমলে ১০ বছরে রাজ্যে ৮৮ হাজার ৮৪১ কিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সড়ক, হাইওয়ে মিলে তৈরি হয়েছে ৫ হাজার ১১১ কিলোমিটার। এখনও কাজ চলছে ১১৬৫ কিলোমিটার রাস্তার। কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে অমিতবাবুর মন্তব্য, ‘‘এত রাস্তা যখন তৈরি হল, তোমরা কোথায় ছিলে? ঘুমোচ্ছিলে? এখন বলছ ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা করবে! ভোট বলে এ সব মনে পড়ছে? আমরা তো রাজ্যে ৫ হাজার ১১১ কিলোমিটার রাস্তা করেছি।’’
বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলার জন্য বরাদ্দকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের রাস্তার জন্য যে ২৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। বাংলার একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণ এবং সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য পথ তৈরি করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।’’ একই সুর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষেরও।
বিরোধী বাম ও কংগ্রেস অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই এই বাজটকে ‘জনবিরোধী’ আখ্যা দিয়েছে। আব্দুল মান্নান, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তীরা মুখ্যমন্ত্রীর মতোই পেট্রল, ডিজেলের উপরে সেস বসানো নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের মতে, আম জনতার জন্য এই সিদ্ধান্ত ‘মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘা’। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে সেস বসানো হয়েছে। ফলে, জনতার ঘাড়ে বাড়তি মাসুল চাপবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy