(বাঁ দিকে) বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অনিল মিত্র (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
সেই ১৯৬৬ সালে সিপিএমের পার্টি সদস্যপদ পেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সেই ফর্মে ‘প্রস্তাবক’ হিসাবে সই করেছিলেন কলকাতার বাগবাজার এলাকার তৎকালীন সিপিএম নেতা দুই ভাই অনিল মিত্র এবং শিশির মিত্র। আজীবন বুদ্ধদেব সেই পরিবারের ‘মিত্র’ই ছিলেন। বৃহস্পতিবার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর পরে সেই মিত্র পরিবার হাঁটছে স্মৃতির সরণিতে। শুক্রবার সকালে বৈদ্যবাটির মিত্রবাড়িতে গিয়ে দেখা গেল পুরনো সব ছবি বার করা হয়েছে আলমারি থেকে। আপাতত পারিবারিক বন্ধু বুদ্ধদেবের পুরনো ছবি নিয়েই ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ নিয়ে চর্চা করছেন তাঁরা।
প্রয়াত শিশিরের পরিবার বাগবাজারে থেকে গেলেও ১৯৭২ সালে ‘ঘরছাড়া’ হয়ে অনিল চলে এসেছিলেন হুগলির বৈদ্যবাটিতে। রাজনৈতিক সংঘাতের সেই পর্বে পায়ে গুলি লেগেছিল অধুনাপ্রয়াত অনিলের। তার পর থেকে আমৃত্যু অনিল ছিলেন বৈদ্যবাটিতেই। ছিলেন সিপিএমের হুগলি জেলা কমিটির সদস্যও। অনিলের ছোট ভাই পিনাকী মিত্র বলেন, ‘‘১৯৮২ সালের বিধানসভা ভোটে বুদ্ধদা হেরে যাওয়ার পরে দাদার কাছে চলে এসেছিলেন। দিন তিনেক ছিলেন অনিলদার কাছে।’’
অনিল জীবনের শেষ দিকে ক্রাচে ভর করে হাঁটতেন। রিকশা ছাড়া চলতে পারতেন না। স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ২০০২ সালে চাঁপদানিতে বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের রাজ্য সম্মেলন হয়েছিল। তার প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তা ছিলেন জ্যোতি বসু, মহম্মদ আমিন এবং বুদ্ধদেব। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ক্রাচ হাতে নিয়ে রিকশায় বসে থাকা অনিলকে দেখে নেমে এসেছিলেন মঞ্চ থেকে। শিশির, অনিলেরা প্রয়াত হয়েছেন অনেক দিন। চলে গেলেন মিত্র পরিবারের আজীবনের মিত্রও। বৈদ্যবাটির বৈদ্যপাড়ায় বাড়ি অনিলের। যে বাড়িতে এখন থাকেন তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রের স্ত্রী, মেয়ে এবং বোন। পাশের বাড়িতেই থাকেন পিনাকীরা। বাড়ির পিছনে রয়েছে একটি প্রকাণ্ড পুকুর। মিত্র পরিবার জানিয়েছেন, বৈদ্যবাটিতে থাকার সময়ে এই পুকুরে মাছও ধরতেন বুদ্ধদেব।
উল্লেখ্য, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের জমানাকে ‘আধা ফ্যাসিবাদী’ পর্ব বলে অভিহিত করে সিপিএম। দলীয় সূত্রে জানা যায়, তাঁকে দলে আনা অনিলকে হুগলিতে আশ্রয় দেওয়ার নেপথ্যে বুদ্ধদেবেরই ভূমিকা ছিল। প্রাদেশিক যুব ফেডারেশনে সেই সময়ে হুগলির নেতা ছিলেন প্রয়াত সুনীল সরকার। তাঁরও বাড়ি বৈদ্যবাটিতেই। বুদ্ধদেবের কথায় সুনীলই অনিলকে বৈদ্যবাটিতে আশ্রয় দিয়েছিলেন। বুদ্ধদেবের জন্ম বাম মনোভাবাপন্ন পরিবারে। যে পরিবারে সাংস্কৃতিক আবহও ছিল। বাম মনোভাবাপন্ন সেই বুদ্ধদেবকেই রাজনীতিতে আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন অনিল এবং শিশির। শিশিরের স্ত্রী কল্যাণী মিত্র কলকাতা পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর। তাঁর কথায়, ‘‘বুদ্ধদার সঙ্গে আমাদের পরিবারের সম্পর্ক আত্মীয়ের মতো হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৭ সালে প্রথম যখন বুদ্ধদা কাশীপুরে দাঁড়ালেন, তখন চার মাস আমাদের উত্তর কলকাতার বাড়িতে থেকেই প্রচার এবং নির্বাচনের কাজ করেছিলেন।’’ শিশির, কল্যাণীদের সঙ্গে বুদ্ধদেব দেওঘরে বেড়াতেও গিয়েছিলেন।
১৯৭৭ সালে নির্বাচনে জিতলেও ১৯৮২ সালে কাশীপুরে দাঁড়িয়ে হেরে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। তার পর ১৯৮৭ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত যাদবপুরই ছিল বুদ্ধদেবের কেন্দ্র। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকার পতনের বছরে যাদবপুর থেকে পরাস্ত হন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বাম আমলেরই আমলা মণীশ গুপ্তের কাছে পরাস্ত হতে হয়েছিল তাঁকে। তার পর থেকে আর ভোটে দাঁড়াননি বুদ্ধদেব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy