সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন ব্রাত্য।
তিনি তৃণমূলের মন্ত্রী। এখন বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর দূরত্ব আর পাঁচজন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের তুলনায় অনেক বেশি। ত্রিপুরা থেকে গোয়া—ব্রাত্য চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন বিজেপি-কে। লাগাতার তাঁর সঙ্ঘাত চলছে ‘কেন্দ্রের প্রতিনিধি’ রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে কী ভাবে রাজ্যপালকে সরানো যায় সে ভাবনার কথা বলেছেন। সেই আবহে বৃহস্পতিবারই নতুন টুইট-বাণ ছেড়েছেন রাজ্যপাল। দাবি করেছেন, কলকাতা, যাদবপুর-সহ রাজ্যের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে উপাচার্য নিয়োগ করা হয়েছে। ব্রাত্যর দফতরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে রাজ্যপাল ময়দানে নামার পর ব্রাত্য নাম না করে রাজ্যপালকে ‘পাগলা জগাই’ বলে অভিহিত করেছেন।
সেই উত্তাপ-ভরা আবহেই কেন্দ্রের তরফে সুসংবাদ এল নাট্যকার ব্রাত্যের জন্য। চলতি বছরে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছেন ব্রাত্য। তাঁর ‘মীরজাফর ও অন্যান্য নাটক’ গ্রন্থটির জন্য পুরস্কার পাচ্ছেন নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা ব্রাত্য।
এই খবর পেয়ে ফেসবুকে ব্রাত্য লিখেছেন, ‘এসো, সুসংবাদ এসো...’। কিন্তু দুষ্টু লোকেরা বলছে, ব্রাত্যর সঙ্গে বিজেপি-র যেমন সম্পর্ক, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থার এমন পুরস্কার ঘোষণার পিছনে নিশ্চয়ই কোনও ‘রাজনীতি’ আছে!
ব্রাত্যর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের হলেও এই পুরস্কার ঘোষণা করে একটি স্বশাসিত সংস্থা।’’ তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়ের বক্তব্য, ‘‘সাহিত্য অ্যাকাডেমির জুরি বোর্ডে বিজেপি-ঘেঁষা লোকেরা থাকলেও বইটির গুণগত মানের জন্যই ব্রাত্যকে এড়িয়ে যেতে পারেননি তাঁরা।’’ রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিজেপি রাজনীতির সঙ্গে সংস্কৃতিকে মেলাতে চায় না। সর্বত্র এমনটা হওয়াই তো দরকার।’’
রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অবশ্য ব্রাত্যর দল তৃণমূলকে আক্রমণও করেছেন সুকান্ত। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শ্রেণিশত্রু মনে করার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বাংলায়। সেটা তৃণমূলের অবদান। বিজেপি এমন সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। ফলে দেশের বেশির ভাগ জায়গায় এমন পরিবেশ নেই।’’
প্রসঙ্গত, ‘মীরজাফর ও অন্যান্য নাটক’ বইয়ে রয়েছে ‘একদিন আলাদিন’, ‘আমি অনুকূলদা আর ওরা’ এবং 'মীরজাফর' নামের তিনটি নাটক।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার লড়াই চললেও খুশি সকলেই। কারণ, সৌগতর কথায়, ‘‘বাংলা নাট্যসাহিত্য এই প্রথম এমন সম্মান পেল।’’
প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করা ব্রাত্য পরে কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। নাটকের দুনিয়ায় পা রেখেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। ‘গণকৃষ্টি’ নামে এক থিয়েটার গ্রুপে সাউন্ড অপারেটর হিসেবে তাঁর নাট্যজীবন শুরু। এরপর সেই গ্রুপেই পরিচালনার কাজ করেছেন। এরপর সেলুলয়েডেও কাজ শুরু করেন। ২০০৮ সালে 'ব্রাত্যজন' নামে নিজস্ব একটি থিয়েটার গ্রুপ তৈরি করেন। মঞ্চ এবং বড়পর্দা, দুটোতেই ব্রাত্যর সাবলীল অভিনয় নজর কেড়ে নিয়েছে সকলের। ব্রাত্যর প্রশংসায় পঞ্চমুখ সৌগত বলেন, ‘‘সবদিক সামলে এত কিছু করাটা সত্যিই অসাধারণ প্রচেষ্টা। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ব্রাত্যকে অভিনন্দন জানাব। কারণ, ওঁর হাত ধরে আজ বাংলা সম্মানিত, বাংলা নাটক সম্মানিত।’’
গেরুয়া শিবির অবশ্য এই দিনে সাম্প্রতিক অতীতে আর এক ঘটনার কথা উল্লেখ করছেন। গত নভেম্বরেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরেও আন্তর্জাতিক গোয়া চলচ্চিত্র উৎসবের ভারতীয় প্যানোরামা বিভাগ থেকে বাদ পড়ে ব্রাত্য বসুর ‘ডিকশনারি’। কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ব্রাত্য জানিয়েছিলেন, শেষ মুহূর্তে মেল পাঠিয়ে তাঁকে জানানো হয়, ডিকশনারি দেখানো যাবে না। পরিবর্তে অন্য ছবি পাঠাতে হবে। সেই সুযোগ না থাকায় উৎসব থেকে বাদ দেওয়া হয় তাঁর ছবি। ব্রাত্য জানিয়েছিলেন, তাঁর নামের বানানে ভুল ছিল। এই অজুহাতে বাদ পড়েছে তাঁর ছবি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সঙ্ঘাতের কারণে এমন পদক্ষেপ বলে অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়। বলা হয়েছিল, বিজেপি-র হস্তক্ষেপেই ব্রাত্য ও তৃণমূলের আর এক সাংসদ নুসরত জাহানের অভিনীত ছবিকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ব্রাত্যর বই পুরস্কার পাচ্ছে খবর পাওয়ার পরে রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা বলেন, "এ বার আশাকরি, মন্ত্রীমশাই সেদিনের অভিযোগ গুলো ফিরিয়ে নেবেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy