রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে বরাবরই ‘চিরকুট’-এ চাকরি ছিল। এখন প্রযুক্তি থাকার জন্য সেটা সামনে এসে গিয়েছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বাম আমলে ‘চিরকুট’ দিয়ে চাকরি সম্পর্কে তাঁরা শ্বেতপত্র প্রকাশ করবেন বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের শিক্ষা সেল এবং কাউন্সিলরদের বলেছি, ১৯৯৭ সাল, যখন থেকে এসএসসি (স্কুল সার্ভিস কমিশন) শুরু হয়েছে, সেই সময় একটি নির্দিষ্ট দলের ‘সর্বক্ষণের কর্মী’দের মধ্যে কারা কারা চাকরি পেয়েছেন, তার একটা তালিকা তৈরি করতে। তার শ্বেতপত্র আমরা প্রকাশ করব।’’ শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে সিপিএম দাবি করেছে, দ্রুত ওই শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক এবং শিক্ষামন্ত্রীর নামও রাখা হোক। প্রসঙ্গত, ব্রাত্য নিজেই বৃহস্পতিবার উল্লেখ করেছেন, বাম আমলেই তিনি কলেজে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, শুধু ‘চিরকুট’ দিয়ে বাম শিবিরের লোকজনই যে বাম জমানায় চাকরি পাননি, তা বোঝাতেই শিক্ষামন্ত্রীর নাম তালিকায় রাখার কথা বলছে সিপিএম।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শোরগোল শুরু হওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম বাম আমলে ‘চিরকুট’ দিয়ে নিয়োগের পাল্টা অভিযোগ করেছিলেন। পুরনো ফাইল খোলা হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। সিপিএম তখনই বলেছিল, সরকারে আসার পরে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এমন ফাইল খোলা হল না কেন? শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রসঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য এ দিন বলেছেন, ‘‘আমাদের সময়ে নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠন না করলে স্কুলে চাকরি পাওয়া যেত না। আমার এম এ পাশ করা ছিল এবং নেট পাশ করা ছিল বলে কলেজে শিক্ষকতা পেতে অসুবিধা হয়নি। আমার বহু বন্ধু ও পরিচিত আছেন, যাঁরা একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠন করতেন।’’ তিনি জানান, শ্বেতপত্রের জন্য তালিকা তৈরিতে সব ক্ষেত্রই ধরা হবে। লোকাল কমিটি, জ়োনাল কমিটি, কাউন্সিলর, গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন, যাঁরাই সেই সময়ে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছেন, সবই তালিকায় থাকবে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী পাল্টা বলেছেন, ‘‘রাজ্যে দুর্নীতি, ঋণের বোঝা নিয়ে শ্বেতপত্র আর হল না! এখন শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, বাম আমলে নিয়োগ নিয়ে শ্বেতপত্র দেবেন। বাম আমলে চাকরির জন্য টাকার থলি নিয়ে কারও পিছনে ঘুরতে হত না। যোগ্যতার নিরিখে চাকরি হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করছি, বাম আমলের নাম, ধাম এবং কর্মসংস্থানের জায়গা জানিয়ে চাকরি পাওয়ার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন! তাতে তাঁর নিজের এবং তাঁদের হয়ে টিভি চ্যানেলে যাঁরা বক্তৃতা করেন, সেই সব নামও যেন থাকে।’’ সুজনবাবুর সংযোজন, ‘‘ষত কমিশন হয়েছিল তৃণমূল আমলে, তার অনেকগুলোর রিপোর্টই প্রকাশিত হয়নি। এই শ্বেতপত্র প্রকাশিত হবে, আশা করছি!’’ প্রসঙ্গত, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে বারাসত পুরসভার এক নির্দল কাউন্সিলরের দেওয়া একটি পোস্টার প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে তিনি নিজের পরিচয়ে ২০০৬ সালে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগের তথ্যও উল্লেখ করেছেন। এই পোস্টারও তৃণমূল আমলের ‘দুর্নীতি’ বোঝাতে বামেদের হাতিয়ার হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘বাম আমলে তো উনিও চাকরি পেয়েছিলেন। বাম আমলে যে দলীয় আনুগত্যের বিনিময় চাকরি দেওয়া হত, সেই অভিযোগ সব বিরোধীদের ছিল। তার মানে কি সেই ঘটনাকে ঢাল করে শিক্ষামন্ত্রী টাকার বিনিময় চাকরি বিক্রিকে মান্যতা দিচ্ছেন? এই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতিকে সমর্থন করছেন?’’
মে মাসের মধ্যে প্রাথমিকে ১২ হাজারের মতো শিক্ষক নিয়োগ, আড়াই হাজারের মতো প্রধান শিক্ষকের নতুন নিয়োগ এবং এসএসসি-র মাধ্যমে উচ্চ প্রাথমিক থেকে শুরু করে নবম থেকে দ্বাদশে ধাপে ধাপে নিয়োগের কথা ব্রাত্য বুধবারই বলেছিলেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু বিধি তৈরি করছে এসএসসি। শিক্ষকের পাশাপাশি শিক্ষাকর্মীও নিয়োগ হবে।’’ কিন্তু এত শিক্ষক এবং গ্রুপ সি-র চাকরি বাতিল হচ্ছে, তাতে স্কুলের পঠনপাঠনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, ‘‘একটা জট থেকে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে। তার খেসারত আমরা দিচ্ছি। আমার মনে হয়, তার মূল্য চোকানোর সময় হয়ে এসেছে। আমরা গুটিয়ে এনেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy