রতন টাটাকে নিয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিমের বেনজির আক্রমণে প্রায় সর্বত্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তারই জেরে শুক্রবার কিছুটা সুর নরম করল সরকার।
দু’বছর বাদে বুধবার কলকাতায় এসে রাজারহাটে শিল্পায়নের কোনও ছবি তাঁর চোখে পড়েনি বলে মন্তব্য করেছিলেন রতন টাটা। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে আক্রমণ করে শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন, “ওঁর মতিভ্রম হয়েছে।” পুরমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল, “ওঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।”
এ দিন মহাকরণে সেই ফিরহাদ হাকিমই বললেন, “রতন টাটা এক জন শিল্পপতি। তাঁকে আমরা শ্রদ্ধা করি।”
তা হলে সে দিন টাটাকে ও ভাবে আক্রমণ কেন? পুরমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “টাটা শিল্প সম্পর্কে পরামর্শ দিতেই পারেন। কিন্তু রাজনীতিকের মতো কথা বললে আমাদের তা রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।” মন্ত্রী এমনও দাবি করেন, “সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন রতন টাটার বিরুদ্ধে ছিল না। তা ছিল তদানীন্তন বাম সরকার যে ভাবে চাষিদের জমি অধিগ্রহণ করেছিল, তার বিরুদ্ধে।” যদিও ঘটনা হল, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় রতন টাটার নাম করে প্রায়ই আক্রমণ শানাত তৃণমূল। তবে আগের দিন এই প্রবীণ শিল্পপতি সম্পর্কে যে ভাবে তাঁরা বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেছিলেন, তাতে শিল্পমহল তো বটেই, প্রশাসনের অন্দরেও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বিশেষত শিল্পমন্ত্রীর মন্তব্যে সকলেই বিস্মিত ছিলেন। তারই জেরে শুক্রবার তৃণমূলের তরফে কিছুটা সুর নরম করা হল বলে মনে করা হচ্ছে। অন্তত পুরমন্ত্রীর বক্তব্যে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
রাজারহাটের শিল্পায়ন নিয়ে রতন টাটার মন্তব্য প্রসঙ্গে এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে জবাব দেন, তার সুরও ছিল মার্জিত। এ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার বিভাগের এক অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী বলেন, “বিমানবন্দর থেকে বাইপাসের ধারের হোটেল পর্যন্ত কি শিল্পের জায়গা? উনি (রতন টাটা) কি দেখাতে পারবেন যে মুম্বই বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢুকতে গেলে শিল্প চোখে পড়ে?”
একই সঙ্গে পার্থবাবুর মন্তব্য, “নিজের অজান্তেই উনি একটা ভাল কথা বলেছেন যে অনেক বাড়িঘর হয়েছে। তার মানে একটা পরিবর্তন হয়েছে। সেই পরিবর্তনটার কেউ অন্য ভাবে ব্যখ্যা করলে আমার কিছু করার নেই।” পার্থবাবুর দাবি, যে রাস্তা দিয়ে রতন টাটা এসেছেন, সেটা শিল্প করার রাস্তা নয়। উনি যদি সেক্টর ফাইভ দিয়ে আসলে দেখতেন আইটি সেক্টর দেখতে পেতেন। মন্ত্রীর অভিযোগ, টাটাকে যাঁরা বুঝিয়েছেন বা উনি যে ভাবে বুঝেছেন, তাতে গণ্ডগোল রয়েছে। বরং পার্থবাবুর মতে, টাটার উচিত ছিল দু’বছর বাদে এসে সিঙ্গুরের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। তাঁর কথায়, “সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি তিনি ফিরিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু সে ব্যাপারে তিনি নীরবই থাকলেন।”
শিক্ষামন্ত্রী ও পুরমন্ত্রী যখন এ দিন এই ভাবে সংযত সমালোচনার পথে হাঁটছেন, আগের দিনের ঝাঁঝই কিন্তু বজায় রাখেন আর এক মন্ত্রী। এ দিন মেদিনীপুরে জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, “রতন টাটা অনেক দিন হল অবসর নিয়েছেন। তাই শিল্পায়নের জায়গাগুলি দেখতে পাচ্ছেন না। উনি হয়তো আবাসন ব্যবসার মাধ্যমে প্রোমোটারি করবেন। তাই যেখানেই যাচ্ছেন, আবাসন দেখছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy