ফাইল চিত্র।
ক্লাসে একটু বেশিই অন্যমনস্ক ছিল ছেলেটা। প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেননি। শিক্ষিকা ডেকে দু’এক বার জিজ্ঞেস করতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। জানা যায়, মাসখানেক ধরেই ‘নীল তিমি’র খপ্পরে পড়েছে গুসকরা কলেজের দর্শনের দ্বিতীয় বর্ষের ওই পড়ুয়া। লেভেল-১৩ পর্যন্ত খেলেওছেন। কিন্তু তারপরে খেলতে অস্বীকার করায় ক্রমাগত তাকে এবং পরিবারের লোককে খুনের হুমকি আসায় ভেঙে পড়েন তিনি। কলেজ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ এসে ছেলেটির মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে। ওই পড়ুয়াও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। শীঘ্র কাউন্সেলিং করা হবে বলেও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি।
আরও পড়ুন: যুবতীর নগ্ন ভিডিও পর্ণসাইটে আপলোড করে গ্রেফতার যুবক
আউশগ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রের বাবা পেশায় খেতমজুর। মা অসুস্থ। কোনও রকমে সংসার চলে তাঁদের। স্বাভাবিক ভাবেই, প্রশ্ন উঠেছে এমন খেলায় ওই পড়ুয়া জড়িয়ে পড়ল কী ভাবে? ওই ছাত্রের দাবি, মাস দেড়েক আগে তাঁর মোবাইলে একটি এসএমএস আসে। তাতে জানানো হয়, সে বড় অঙ্কের টাকার একটি পুরস্কার জিতেছে। অ্যাকাউন্ট নম্বর, নাম, ঠিকানা জানতে চাওয়া হয়। লিঙ্কে পাঠানো খেলা খেললে ওই টাকা মিলবে বলেও জানানো হয়। সব তথ্য জানিয়ে খেলা শুরু করে ওই ছাত্র। তাঁর দাবি, শর্ত দেওয়া হয়, রাতে একা থেকে খেলতে হবে। এরপর থেকে যে দিন খেলা হবে সে দিন মেসেজে লিঙ্ক আসত। দেওয়ালে মাছের ছবি আঁকা, দেড় মিনিট চলন্ত গাড়ির সামনে ছোটার ছবি পাঠানোর মতো নানা চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়। সেগুলি করেও ফেলে ওই ছাত্র। কিন্তু চ্যালেঞ্জ কঠিনতর হতে থাকে। ওই পড়ুয়ার দাবি, তিনি বুঝতে পারেন ওই ফাঁদ থেকে বেরনো মুশকিল। কিছুদিন পরে খেলা ছা়ড়তে চেয়ে জানান তিনি। কিন্তু তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে খেলা চালানোর কথা বলা হয়। এরপরেই আতঙ্কে ভুগতে থাকেন ওই পড়ুয়া। এ দিন স্টাফ রুমে বসিয়ে শিক্ষিকারা জানতে চাইতেই আর নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। পরে স্থানীয় বননবগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় ওই ছাত্রকে।
গুসকরা কলেজের মর্নিং সেকশনের ইনচার্জ রঞ্জন পাল, ‘‘কলেজেই ওই ছাত্রের কাউন্সেলিং করা হয়। অন্য ছাত্রদের মধ্যেও যাতে এই প্রবণতা না ছড়ায় তার জন্য সচেতন করা হবে।’’ গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ, কলেজের ছাত্র সংসদের তরফে গণেশ পাঁজা জানান, তাঁরাও নানা ভাবে সচেতন করবেন।
এ দিন ওই পড়ুয়া বলেন, ‘‘টাকার লোভে খেলায় ঢুকেছিলাম। ভুল বুঝেছি। আর কেউ যাতে এমন না করে তার জন্য নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে প্রচার করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy