Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪

খড়্গপুরে ভাঙন নিয়ে অসন্তোষ বিজেপিতে

ফল প্রকাশের পরে বেশ প্রত্যয়ী গলাতেই তৃণমূলের দলনেত্রী জানিয়েছিলেন, ত্রিশঙ্কু বোর্ডগুলিও তৃণমূলের হাতেই আসবে। যা শুনে, সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন বিরোধীরা। যেন তেন প্রকারে ত্রিশঙ্কু বোর্ড দখলে শাসক দলের সেই ‘অভিযান’ অবশ্য শিলিগুড়িতে আটকে গিয়েছিল। তবে, সেই ‘অঘটনে’ সামিল হতে পারেনি, রামজীবনপুর, বাঁকুড়া, কাটোয়া কিংবা ধুলিয়ান। বিরোধী ভাঙিয়ে তৃণমূলের পুরবোর্ড কব্জা করার এই অভিযানে পথ দেখিয়েছিল মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০৩:৫২
Share: Save:

ফল প্রকাশের পরে বেশ প্রত্যয়ী গলাতেই তৃণমূলের দলনেত্রী জানিয়েছিলেন, ত্রিশঙ্কু বোর্ডগুলিও তৃণমূলের হাতেই আসবে। যা শুনে, সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন বিরোধীরা।

যেন তেন প্রকারে ত্রিশঙ্কু বোর্ড দখলে শাসক দলের সেই ‘অভিযান’ অবশ্য শিলিগুড়িতে আটকে গিয়েছিল।

তবে, সেই ‘অঘটনে’ সামিল হতে পারেনি, রামজীবনপুর, বাঁকুড়া, কাটোয়া কিংবা ধুলিয়ান। বিরোধী ভাঙিয়ে তৃণমূলের পুরবোর্ড কব্জা করার এই অভিযানে পথ দেখিয়েছিল মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান।

বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা মুর্শিদাবাদের সেই পুরসভায় বিজেপির ঘর ভেঙেই সাফল্যের মুখ দেখেছিল শাসক দল। ফল প্রকাশের পরেই, জয়ী ৪ বিজেপি কাউন্সিলরের তিন জনই তৃণমূলে যোগ দিয়ে সহজ করে দিয়েছিল তৃণমূলের বোর্ড দখলের প্রক্রিয়া।

দীর্ঘ সওয়া এক মাসের নাটক শেষে, বৃহস্পতিবার শাসক দলের, ১৯-১৫ ফলে তৃণমূলের খড়্গপুর পুরবোর্ড জয়ের পিছনে সেই বিজেপির ঘর ভাঙার সাফল্যই কাজ করেছে।

তবে, রেলশহরে তৃণমূল পুরসভা দখল করার পরে বিজেপির অন্দরে বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছে একই সঙ্গে। নিচুতলার কর্মী-সমর্থকরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন, বিস্তর চাপের মুখেও কংগ্রেস কাউন্সিলরদের ঐক্য অটুট থাকলেও, বিজেপি কেন দলের কাউন্সিলরদের ধরে রাখতে পারল না?

দলের কর্মীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব, কাউন্সিলরদের ধরে রাখতে না পারার দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মেনে নিচ্ছি। এই পরিস্থিতির অনেকটা দায়ই আমার। আমরা কাউন্সিলরদের ধরে রাখতে পারিনি।’’ মানছেন, নতুনদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রেও আরও বেশি ‘সতর্ক’ হওয়া উচিত ছিল।

বিজেপির টিকিটে জয়ী বেলারানি অধিকারী সদ্য যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার কিছু করার ছিল না। ক্রমাগত মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ভরার ভয় দেখানো হয়েছিল। তখন জেলা সভাপতিকে জানিয়েও ফল পাইনি।”

পুরভোটের প্রার্থী বাছাই নিয়ে বিজেপিতে যে চাপা অসন্তোষ ছিল তা বোঝা গিয়েছিল, কলকাতায় রাজ্য সদর দফতরেই। দলেরই নেতা-কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভ সামাল দিতে খোদ রাজ্য নেতৃত্বকেও হিমশিম খেতে হয়েছিল। সে বিতর্ক এখনও চলছে।

শিলিগুড়িও সাক্ষী থেকেছে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দলীয় কর্মীদের তুমুল ক্ষোভের। পুর নির্বাচনের ঘোষণার পরে খড়্গপুরেও ছবিটা অন্যরকম ছিল না। দলের এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘ভোটের অনেক আগে থেকেই দলীয় কর্মীদের অসন্তোষটা সামনে এসে পড়ছিল। অভিযোগ উঠেছিল, টাকার বিনিময়ে প্রার্থী করা হচ্ছে। অথচ সে সময়ে জেলার এমন কোনও নেতার দেখা মেলেনি যিনি এগিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেবেন।’’

ছবিটা এখানেই অন্য রকম ছিল শিলিগুড়িতে। দলীয় কর্মী এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের হুমকি দেওয়া থেকে প্রলোভন দেখানোর কম অভিযোগ ওঠেনি শাসক দলের বিরুদ্ধে। সেখানে অবশ্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তা সামাল দিয়েছিলেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। রেল শহরের বিজেপি নেতাদের অনেকেরই আক্ষেপ, গত এক মাস ধরে তৃণমূলের চোখ রাঙানি এবং প্রলোভনের সামনে কোনও ‘অশোক ভট্টাচার্য’-এর দেখা পাননি তাঁরা।

প্রার্থী বাছাই নিয়েও রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। বিজেপি কর্মীদের অনেকেরই অভিযোগ, দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে রয়েছেন, এমন নেতা-কর্মীকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল একেবারে আনকোরা মুখ। এক জেলা নেতা বলছেন, ‘‘কর্মী কেন, খড়্গপুরের মানুষও তাঁদের মেনে নিতে পারেননি।’’

দলে প্রশ্ন উঠেছে রেল-মাফিয়া শ্রীনুর স্ত্রীকে প্রার্থী করা নিয়েও। দলের অনেকেই মনে করছেন, এটা আসলে খাল কেটে কুমির আনার সমান। বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যের কথাতেও স্পষ্ট হতাশা, ‘‘দলের সর্ব স্তরেই গভীর আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন।’’

ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। জেলা বিজেপি নেতাদের একাংশের অভিযোগ, একেবারে অচেনা প্রার্থী দেখে বিজেপি সমর্থকদের অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের পরে বিজেপির পালে যে হাওয়া ছিল, পুরভোটে তার অনেকটাই তাই স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল।

গত লোকসভা ভোটে খড়্গপুর সদর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু পুরসভার ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, ৩৫টি-র মধ্যে মাত্র ৭টি আসন পেয়েছে তারা।

প্রার্থী বাছাই নিয়ে কোনও ত্রুটি অবশ্য মানতে রাজি নন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘তুষারবাবু যা বলেছেন সেটা ওঁর ব্যক্তিগত মত। আর প্রার্থী তো ওঁরাই বেছেছেন।’’ দলে ভাঙনের ব্যাপারে পুলিশ থেকে রাজ্যপাল কাউকে বলেই সাড়া পাননি বলেও তাঁর আক্ষেপ, ‘‘রাজ্যপাল থেকে পুলিশের শীর্ষ কর্তা কাউকে জানিয়েই লাভ হয়নি। খোদ মুখ্যমন্ত্রী তো ওই পুরসভা দখল করার দায়িত্ব জেলার পুলিশ সুপারকে দিয়েছিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kharagpur BJP Trinamool congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE