Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘রাজনীতির জন্য আর কত রক্ত’

এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব এবং এলাকাবাসীর একাংশের মুখে এ দিন বারবার সুশীলবাবুর সংগঠক হিসেবে ভূমিকার কথাও ফিরে এসেছে।

পাণ্ডুগ্রামে তদন্তে পুলিশকর্মীরা। চলছে টহলও। নিজস্ব চিত্র

পাণ্ডুগ্রামে তদন্তে পুলিশকর্মীরা। চলছে টহলও। নিজস্ব চিত্র

সুচন্দ্রা দে
কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৯ ০২:২৩
Share: Save:

বিজেপি কর্মী সুশীল মণ্ডল (৫২) যেখানে খুন হয়েছিলেন, তার এক হাতেরও কম দূরত্বে বিদ্যুতের একটি খুঁটি। সেখানে রক্তের ছিটে। রক্তের দাগ, কাঁচা নর্দমার গায়েও। প্রায় ফাঁকা গ্রামের রাস্তায় যেতে যেতে দু’জন যুবক চাপা স্বরে বললেন, ‘রাজনীতি করার জন্য আর কত রক্ত ঝরবে!’— থমথমে কেতুগ্রামের পাণ্ডুগ্রামের অলিন্দে এলাকাবাসী, নিহতের পরিবারে মধ্যে বৃহস্পতিবার এ প্রশ্নই যেন ঘুরপাক খেয়েছে দিনভর।

গ্রামের পূর্বপাড়ার এক প্রান্তে সুশীলবাবুর একতলা মাটির বাড়ি। টিন, খড়ের ছাউনির ওই বাড়ির উঠোনেই ঘটনার পরে সুশীলবাবুকে উদ্ধার করে গ্রামবাসী নিয়ে আসেন, জানান তাঁর স্ত্রী অপর্ণাদেবী। পরে কেতুগ্রাম ২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, যেখানে আনা হয় সুশীলবাবুকে, সেখানেই ছিলেন অপর্ণাদেবী। কথা বলতে বলতে বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন। চোখ মেললেই কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘‘সকালে জলখাবার খেয়ে বেরোল। আর ফিরল না। দুপুরের ভাত হাঁড়িতেই থেকে গেল।’’ তাঁকে সামলানোর চেষ্টা করছিলেন পড়শি মহিলারা। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুশীলবাবু ও অপর্ণাদেবীর দুই ছেলে, এক মেয়ে। মেয়ে রটন্তীর বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রাম নিরোলে। দুই ছেলে অভিজিৎ ও প্রসেনজিৎ হায়দরাবাদে একটি বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানে কর্মরত। ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা গ্রামে ফিরছেন।

এলাকার বিজেপি নেতৃত্ব এবং এলাকাবাসীর একাংশের মুখে এ দিন বারবার সুশীলবাবুর সংগঠক হিসেবে ভূমিকার কথাও ফিরে এসেছে। বিজেপির কেতুগ্রাম ১ মণ্ডল সভাপতি বুদ্ধদেব রায় জানান, নিজের গ্রাম তো বটেই, পাণ্ডুগ্রাম পঞ্চায়েতের ১৮টি গ্রামেই দলের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন সুশীলবাবু।

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, কেতুগ্রাম ১ ব্লকে দলের সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তার মধ্যেও লোকসভা ভোটের আগে নাওয়াখাওয়া ভুলে প্রচারের কাজ, মিছিল সংগঠন, পতাকা টাঙানো-সহ নানা কাজ করেছিলেন সুশীলবাবু। লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের সময়ে দিনভর তাঁর নজর ছিল টেলিভিশনে। দেশের পাশাপাশি রাজ্যেও দলের ভাল দেখে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন তিনি। তার পরে নিজেই এ দিন মিছিলের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেই মতো পতাকা কেনার কাজও সেরে ফেলেন। কিন্তু এ দিন এই ঘটনার পরে গ্রামে বিজেপি আর মিছিল করেনি।

কুমোরপুর হাটতলা থেকে পাণ্ডুগ্রামে ঢুকতেই কিছুটা গিয়ে বাঁ দিকে পূর্বপাড়া। এ দিন সেই পাড়া তো বটেই, পাশাপাশি গ্রামও ছিল থমথমে। গলির মোড়ে, যেখানে সুশীলবাবু খন হন, সেখানেই রয়েছে একটি দোকান। সেটি দুপুরের পরে খুললেও ক্রেতা নজরে পড়েনি। এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে। ঘটনাস্থলে আসেন এএসপি সৈকত ঘোষ, এসডিপিও (কাটোয়া) ত্রিদিব সরকার-সহ অন্য পুলিশকর্তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Political Violence BJP Ketugram Political Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE