আঁধারের প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র।
মণ্ডপে সানাই বাজবে না। কোনও গানও নয়। ভেসে আসবে কান্নার আওয়াজ। গোটা মণ্ডব কালো কাপড়ে তৈরি। আর মণ্ডপের ভিতরে আঁধারে উমা। এমনই এক মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে কাঁকুড়গাছিতে। উদ্যোক্তা, ‘শ্রী শ্রী সরস্বতী ও কালীমাতা মন্দির পরিষদ’ নামের এক বারোয়ারি। সরস্বতী এবং কালীপুজোর সঙ্গে দুর্গাপুজোও করে এই ক্লাব। কাঁকুড়গাছি রেল কেবিনের উল্টো দিকের এই পুজোর বিষয়, ‘ভোটপরবর্তী সন্ত্রাস’। থিমের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘মায়েদের কান্না, রক্তাক্ত বাংলা’। এই থিমের উপরে নির্ভর করেই মণ্ডপ, আবহ, প্রতিমা। আসলে এই পুজো ওই ক্লাবের নামে হলেও পিছনে রয়েছে বিজেপি।
বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিনেই মৃত্যু হয়েছিল বিজেপি কর্মী অভিজিৎ সরকারের। তিনিই ছিলেন এই পুজোর প্রধান কর্তা। এখন দায়িত্বে মৃত অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ। তিনিই জানালেন, এই পুজোর ভাবনায় কেন এমন আঁধারের কথা বলা হচ্ছে। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘আমাদের প্রতিমা রুদ্ররূপের নন। তিনি করুণাময়ী রূপে বাংলার মানুষকে শান্তি দিতে আসবেন। তবে আমরা গোটা মণ্ডপ জুড়ে এক শোকের পরিবেশ তৈরি করেছি। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতেই এই ভাবনা। ধর্ষিতা নারীর আর্তনাদ, সন্তান হারানো মায়ের কান্না শোনা যাবে। দেবীমূর্তির কোলে থাকবে মাতৃহারা সন্তান। পায়ের কাছে থাকবে ধর্ষিতা নারী।’’ জানা গিয়েছে, শুধু এটুকুই নয়, বিজেপি ঠিক যেমন যেমন অভিযোগ তোলে তেমন ভাবেই ভোটপরবর্তী সন্ত্রাসের প্রদর্শন থাকবে মণ্ডপে। উদ্বোধন করার কথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। উপস্থিত থাকতে পারেন বিজেপির অন্য রাজ্য নেতারাও।
এমন আয়োজনের কথা শুনে আক্রমণ করছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপি এ সব যা প্রদর্শনী করবে সবটাই আসলে ‘ডাস্টবিন’। দলটার কোনও জনভিত্তি নেই বলেই এমন করতে চাইছে।’’ বিশ্বজিৎ অবশ্য এই পুজোকে বিজেপির তকমা দিতে রাজি নন। তবে এটা স্বীকার করেছেন যে, রাজনৈতিক ভাবনা থেকেই গোটা আয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাই খুন হয়েছিল। আমরা কেউ সেটা ভুলতে পারিনি। মণ্ডপের ভিতরে একটা শহিদ বেদিও থাকবে।’’
শুধু এই পুজোতেই নয়, রাজ্য বিজেপির উদ্যোগে বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (ইজেডসিসি)-তে যে পুজোর আয়োজন তাতেও ‘বাংলায় নারী নির্যাতন’-কে থিম করেছে গেরুয়াশিবির। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আগেই বলেন, ‘‘বাংলায় মায়েদের উপরে যে অত্যাচার তার প্রতিবাদ জানাতেই আমাদের দলের পুজোয় এ বার মহিলা পুরোহিত থাকবেন।’’ পুজোর সময় বাংলার চাকরি না-পাওয়া যোগ্য প্রার্থীদের কান্নার কথা যে দলের নেতারা বলতে থাকবেন তেমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে একাধিক দলীয় নেতার কথায়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের পুজো প্রাঙ্গনেও নিহত দলীয় কর্মীদের উল্লেখ থাকবে। মহালয়ায় মৃত দলীয় কর্মীদের জন্য তর্পণ করে বিজেপি নেতারা বুঝিয়েছেন পুজোর মধ্যে রাজনীতি থেকে সরছে না গেরুয়া শিবির।
কলকাতায় বিজেপি নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পুজো সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ এই পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা। একটা সময় পর্যন্ত সজল দাবি করেছিলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আসবেন পুজোর উদ্বোধনে। তবে শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় উদ্বোধন করছেন রাজ্যপাল লা গনেশন। থাকবেন, রাজ্য বিজেপির নেতারাও। লেবুতলা পার্কের ওই পুজো কলকাতাকে অনেক চমক উপহার দিয়েছে। কিন্তু এ বার রাজনৈতিক রংবদল করা সজলের পুজোয় থিম ‘স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব’। আসলে সজল সাড়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকে। মোদী চেয়েছিলেন নানা ভাবে পালিত হয় স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি। সেটা মাথায় রেখেই এখানে ‘আলোয়-আবহে’ তুলে ধরা হচ্ছে, দিল্লির ইন্ডিয়া গেট, লালকেল্লা এবং সংসদভবন। আবার আর এক বিজেপি নেতা উমাশঙ্কর ঘোষ দস্তিদারের পুজো বিধাননগরের বিজে ব্লকে এ বার মণ্ডপ হয়েছে অযোধ্যার নির্মীয়মাণ রামমন্দিরের অনুকরণে।
এই সব আয়োজন নিয়েও আক্রমণ করতে ছাড়েননি কুণাল। তিনি বলেন, ‘‘এত দিন তো বিজেপি বলত, এই রাজ্য দুর্গাপুজো করাই যায় না। আগে সেই ভুল স্বীকার করুক, তার পর পুজো করবে। বিজেপি নেতাদের যে এতটুকু জনভিত্তি নেই তার প্রমাণ হচ্ছে, কেউ কোনও পুজোর সঙ্গে যুক্ত নন। সরকারি হল ভাড়া করে পুজো করতে হয়। ফলে ওঁরা দুর্গাপুজো নিয়ে রাজনীতি করতে চাইলে বাংলার মানুষ সেটা মেনে নেবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy