Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

বিজেপির ‘চমক’ সুকান্তের ছাত্রী, দলের দুর্গাপুজো করবেন উত্তরবঙ্গের ‘মণ্ডলবাড়ির কন্যা’ সুলতা

২০২০ সালে বিধানসভা নির্বচনের আগে শুরু হয়েছিল বিজেপির দুর্গাপুজো। ২০২১ সালে তা নিয়ে অনেক বিতর্কের শেষেও হয় উমার আরাধনা। সুকান্তের ঘোষণামতো, এটাই শেষ বারের পুজো। আর সেই পুজোতেই পুরোহিত সুলতা।

পুরোহিতের ভূমিকায়।

পুরোহিতের ভূমিকায়। — ফাইল চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৫:৩২
Share: Save:

বিজেপির উদ্যোগে দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আর রাজ্য বিজেপির উদ্যোগে কলকাতায় দলীয় পুজোর পুরোহিত সুলতা মণ্ডল!

বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে সুলতা জানালেন, তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত এই সুযোগ পেয়ে। আগামী সোমবার নবরাত্রির প্রথম দিনেই কলকাতায় আসবেন তিনি। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে পুজোর আয়োজন নিয়ে কথা বলবেন। ফিরে গিয়ে আবার আসবেন চতুর্থী বা পঞ্চমীর দিনে। সুলতা বলেন, ‘‘আমি স্যারকে (বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার) আগেই জানিয়েছি, সব রকম শাস্ত্রীয় রীতিনীতি মেনে পুজো করতে চাই। সে কারণেই যাঁরা আয়োজনের খুঁটিনাটি দেখবেন তাঁদের সঙ্গে আগেই এক বার কথা বলতে যাচ্ছি।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত ছিলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি বটানির শিক্ষক হলেও বাংলার বিভাগের ছাত্রী সুলতা তাঁকে ‘সুকান্তস্যার’ হিসাবেই চেনেন। সেই সুলতা এ বার গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন। এক বছর আগে পুজোর মুখে মুখে রাজ্য বিজেপির সভাপতি হলেও তখনও সে ভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে ছিল না সুকান্তের। কিন্তু এ বার রাজ্য সভাপতি আগেই ঠিক করেছিলেন, কোনও মহিলা পুরোহিতই দলের হয়ে উমার আরাধনায় যোগ দেবেন। দলের পক্ষে ঠিক হয়েছে, সুকান্তের সেই ছাত্রী সুলতাই হবেন পুরোহিত।

হোমযজ্ঞ থেকে চণ্ডীপাঠ সবেতেই পারদর্শী সুলতা।

হোমযজ্ঞ থেকে চণ্ডীপাঠ সবেতেই পারদর্শী সুলতা। — ফাইল চিত্র।

সুকান্তর জেলা দক্ষিণ দিনাজপুরেরই কন্যা সুলতা। গঙ্গারামপুর থানার বাতাসকুড়ি গ্রাম। বয়স আঠাশের আশপাশে। মণ্ডলবাড়ির একমাত্র মেয়ে। বাবা বা দুই দাদা কখনও পুজো না করলেও সুলতা ছোট থেকেই এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। বাংলার পাশাপাশি শিক্ষাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শেষ করে বিএড এবং এমএড পাশ করেন। পেশা হিসাবে শিক্ষকতাই ছিল লক্ষ্য। আর ‘নেশা’ না হলেও ‘ভাল লাগা’ পুজো করা। এখন জেলারই কুশমুণ্ডি হাই স্কুলে অতিথি শিক্ষক হিসাবে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার ক্লাসের ফাঁকেই কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে। বললেন, ‘‘আমি ছোট থেকেই দেখে এসেছি বাড়িতে ঠাকুরমা, মা পুজো করেন। বাড়ির রোজকার পুজো মায়েরাই করতেন। তার পরে আমি। বাবা, দাদারা নয়। সেটা থেকেই আমার মনে হয় বাড়ির পুজোর দায়িত্ব মেয়েদের হাতে থাকলে বারোয়ারি পুজোয় শুধু পুরুষের অধিকার থাকবে কেন? নিজেকে ধীরে ধীরে তৈরি করতে থাকি। শাস্ত্র পড়ে পুজোর নিয়মকানুন শিখি। অন্য পুরোহিতদের থেকেও রীতি শিখি। সংস্কৃত মন্ত্র অধ্যয়নের সঙ্গে সঙ্গে চণ্ডীপাঠের অভ্যাসও শুরু করি। তার পরে এক দিন সাহস করে বারোয়ারি পুজো করা শুরু করে দিই।’’

প্রথম দিকে অনেকেই ‘মণ্ডল’বাড়ির ‘অব্রাহ্মণ মেয়ে’-কে পূজারি হিসাবে মানতে পারেননি। সুযোগটা এসে যায় ২০১৮ সালে। মালদহ কলেজের সরস্বতী পুজোয় পুরোহিত হন সুলতা। দুর্গাপুজো, কালীপুজো আগেই করেছেন। রায়গঞ্জে এবং কলকাতার যাদবপুরে বিয়েতেও পৌরোহিত্য করেছেন। কিন্তু এই প্রথম বার গোটা রাজ্যের নজরে থাকা কোনও পুজোর দায়িত্বে সুলতা।

২০২০ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে রাজ্য বিজেপি পুজো শুরু করেছিল। মূল উদ্যোগী ছিলেন তখন বিজেপিতে থাকা সব্যসাচী দত্ত, মুকুল রায়রা। ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে আশাভঙ্গের পরে গত বছরে বিজেপি দুর্গাপুজোয় ভাঙাহাট ছিল। অনেক বিতর্কও হয়। শেষমেশ পুজো হলেও জৌলুস ছিল না। সুকান্ত ঠিক করেছেন, এ বছরই শেষ বারের দলীয় পুজো। হিন্দু রীতি অনুযায়ী কোনও ব্রত বা পুজো এক বার শুরু করলে টানা তিন বার করতেই হয়। সেই রীতির বাধ্যবাধকতা মেনেই হচ্ছে এ বারের পুজো। প্রথমে ঠিক ছিল নমো-নমো করেই হবে সবকিছু। কিন্তু পরে ঠিক হয় ‘চমক’ থাকুক। সেই চমক নিয়েই বিধাননগরের পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্র (ইজেডসিসি)-তে শেষ বারের মতো আসছেন পদ্মের উমা।

পুরোহিত সুলতা মনে করেন, ‘‘নারী, পুরুষ বা জাত দিয়ে পূজারিকে ভাগ করা উচিত নয়। পুজোর অধিকারী তিনিই, যাঁর ব্রহ্মজ্ঞান রয়েছে। যিনি ব্রাহ্মমুহূর্তে ঘুম থেকে ওঠেন এবং নিত্য গীতাপাঠ করেন, তিনিই পূজার অধিকারী।’’ বয়স খুব বেশি না হলেও সেই সব তিনি মেনে চলেন বলেই জানিয়েছেন সুলতা। তিনি বলেন, ‘‘সব পুরুষ পুরোহিতরা কি সব নিয়ম মেনে চলেন? কিন্তু আমি নিত্য পূজা করি। সব নিয়ম মেনে চলি। তবে আমি বাইরে গিয়ে কেন পুজো করতে পারব না?’’

সেই জেদ নিয়েই বারোয়ারি পুজো শুরু করেন সুলতা। এ বার ‘সুকান্তস্যার’-এর হাত ধরে আসছেন কলকাতায়। বিজেপি সূত্রে খবর, ঠিক হয়েছে সুলতার সঙ্গে যাতে ‘তন্ত্রধারক’ হিসাবেও মহিলাদেরই রাখা যায়। ইতিমধ্যেই সেই খোঁজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সুলতার পছন্দের কেউও আসতে পারেন। জানা গিয়েছে, সুলতা-সহ তন্ত্রধারকদের থাকার ব্যবস্থাও করবে রাজ্য বিজেপি।

এই আয়োজন ও উদ্যোগ নিয়ে কী বলছেন সুলতার? আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপিকে নিয়ে অনেক মানুষের অনেক ধারণা রয়েছে। অনেকেই অনেক ভুল ধারণা পোষণ করেন। আমি শুধু এটুকুই বলব যে, আমরা ঠিক কোন দর্শনে বিশ্বাস রাখি এটা তারই একটা উদাহরণ।’’

কলকাতার দুর্গাপুজোয় মহিলা পুরোহিত গত বছরেই দেখা গিয়েছে। কলকাতার ৬৬ পল্লির শারদোৎসব কমিটির পুজোয় মহিলা পুরোহিতরা ছিলেন। তা নিয়ে কিছু বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। তবে সেই পুজোর পিছনে ওই কমিটির প্রেরণা ছিল একটি চলচ্চিত্র। পরিচালক অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবি দেখেই সেই ভাবনা আসে। শোনা যায়, পুজো কমিটি যোগাযোগ করেছিল ছবিটির প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে। তাঁদের থেকেই কর্তারা জানতে পারেন মহিলা পুরোহিতদের দল ‘শুভমস্তু’-র কথা। দলটি চার মহিলা পুরোহিতকে নিয়ে তৈরি। নন্দিনী, রুমা, সেমন্তী ও পৌলমী। সেই দলের নন্দিনীর জীবন থেকেই তৈরি হয়েছে ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবিটি। সুলতা অবশ্য ছবিটি দেখেছেন। আর বলছেন, ‘‘ওই ছবি মুক্তির অনেক আগে থেকেই কিন্তু আমি পুরোহিত।’’

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Durga Puja Durga Puja 2022 Sukanta Majumdar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy