ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে রাজনীতিক অগ্নিমিত্রা। বদল অনেক। ফেসবুক
ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল। বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। আরও পরিচয় রয়েছে অগ্নিমিত্রার। তিনি বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রীও। রাজনীতিকে প্যাশন বানিয়ে ফেলা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ককে বিধানসভাতেও দলের মহিলা মুখ হিসেবে গুরুত্ব দিতে চায় বিজেপি। এত কিছুর মধ্যে অগ্নিমিত্রার আসল পরিচয় কি তবে ব্রাত্য হয়ে যাবে?
এমন প্রশ্নের জবাব যেন নিজেই খুঁজছেন অগ্নিমিত্রা। বললেন, ‘‘ওটাই তো আমার পরিচয়। রাজনীতিতে আজ যে গুরুত্ব পাচ্ছি তার জন্যও তো আমার পেশার কাছে আমার ঋণ আছে। তাই তাকে একেবারে ছেড়ে দিতে চাই না।’’ রাজনীতির সঙ্গে পেশা সামলানো হয়তো যাবে না, তবু মনের দোটানা থেকেই ফ্যাশন আর প্যাশনকে মেলানোর ভাবনা রয়েছে অগ্নিমিত্রার।
আসানসোলের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে পাপাইয়ের ‘অগ্নিমিত্রা পল’হয়ে ওঠার লড়াই কম ছিল না। ডাক্তার বাবার মেয়ে হয়ে ওঠেন ‘নামী’ ফ্যাশন ডিজাইনার। শিল্পপতি থেকে বিনোদন জগতের অনেক বিখ্যাতদের কাছেই অগ্নিমিত্রার ডিজাইনার পোশাক ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’ হয়ে ওঠে। খ্যাতি পৌঁছে যায় বলিউডেও। শুধু সিনেমার কস্টিউম ডিজাইন নয়, শ্রীদেবী থেকে মিঠুন চক্রবর্তীরা হয়ে ওঠেন অগ্নিমিত্রার পোশাকের ফ্যান। আমেরিকার প্রাক্তন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টনের গায়েও উঠেছে এই বাঙালি কন্যার ডিজাইন করা শাল।
কিন্তু এখন তো তিনি আর শুধু ধনীর চেনা ‘ইঙ্গা’ ব্র্যান্ডের মালকিন নন। ডিজাইনার পোশাকের বদলে তাঁকে এখন ঘর হারানো মানুষের হাতে ত্রিপল তুলে দিতে হয়। অগ্নিমিত্রার কথায়, ‘‘আমার আগের জীবন আর এখনকার জীবনের মানুষদের মধ্যে দূরত্ব যেন উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু। তবে আমাকে এখন দক্ষিণ মেরুই বেশি টানছে।’’
২০১৯ সালে রাজনীতিতে আসার পর থেকেই ‘ফ্যাশন’-এর থেকে দূরত্ব বাড়তে থাকে। ২০২০ সালেই রাজ্যে মহিলা মোর্চার শীর্ষ দায়িত্বে। আর প্রথমবার নির্বাচনে নেমেই সাফল্য। তবে কি সেই আলোর বৃত্ত থেকে ক্রমেই দূরে আরও দূরে চলে যাবেন তিনি? অগ্নিমিত্রার জবাব, ‘‘আলোর বৃত্ত কি না জানি না, তবে এখন যেখানে আছি সেটাও আমার কাছে রূপকথার জগত। কোনও দিন যেমন ফ্যাশন দুনিয়ার রূপকথা সত্যি হবে ভাবিনি তেমন এই জীবনটাও ভাবিনি। এত মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পাব সত্যিই স্বপ্নে ভাবিনি।’’ একই সঙ্গে অগ্নিমিত্রার সংযোজন, ‘‘আমাদের পরিবারের কেউ কোনও দিন রাজনীতি করেননি। সেখান থেকে আমি বিধানসভায় পৌঁছেছি। আমি সত্যিই আমার দলের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন দিলীপদা, শুভেন্দুদার কাছে শিখছি, ‘জিরো আওয়ার’ কাকে বলে, কেমন করে বিধানসভায় ‘মেনশন’ করতে হয়। কলিং অ্যাটেনশন, প্রিভিলেজ, স্ট্যান্ডিং কমিটি ছাড়াও অনেক নতুন নতুন শব্দ আমার এখনকার জীবনে। সেটাও খুব এনজয় করছি।’’
রাজনীতি যে এখন তাঁর প্যাশন হয়ে উঠেছে সে কথা স্বীকার করেই অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘তা বলে ফ্যাশন থেকে দূরে চলে যাব সেটা হবে না। কারণ, ওই পরিচয়টা আমার জীবনের সঙ্গে এক হয়ে আছে। তাই এ বার নতুন কিছু ভাবছি। আমার ফ্যাশন জগতের যে অভিজ্ঞতা তা সাধারণ মহিলাদের উন্নতিতে কাজে লাগাতে চাই।’’ কেমন পরিকল্পনা করেছেন অগ্নিমিত্রা? বললেন, ‘‘বিধানসভার একটি কমিটিতে আমি থাকতে পারি। সেটা সম্ভবত নারী ও শিশু কল্যাণ বিষয়ক। ওই দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভাল। আমি ভাবছি, গ্রামের মহিলাদের ডিজাইনার পোশাক তৈরি শেখাব। সেই পোশাকের বাজার তৈরি হলে তা আর্থিক উন্নয়নে তা কাজে লাগবে।’’
অগ্নিমিত্রা জানিয়েছেন, আপাতত আসানসোল থেকেই শুরু করবেন তাঁর নতুন উদ্যোগ। কারণ, বিধানসভার অধিবেশন ছাড়া কলকাতায় খুব একটা থাকার ইচ্ছা নেই তাঁর। মহিলা মোর্চার কাজে তো গোটা বাংলায় ঘুরতে হয়। আজ কালনা তো কাল কালিয়াচক। তাই স্বীকার না করলেও তাঁর কথায় এটা স্পষ্ট যে, অগ্নিমিত্রার নতুন ‘রূপকথা’য় সুয়োরানি প্যাশন, আর দুয়োরানি ফ্যাশন। তাঁর নিজের স্টাইল স্টেটমেন্টও যে বদলে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy