বৃহস্পতিবার রাজভবনে হাতে খড়ি অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। অন্যদিনে এবিভিপি-র সরস্বতী পুজোয় মানিকতলার দফতরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মুখে ‘জয় বাংলা’ শব্দবন্ধে আপত্তি রাজ্য বিজেপির। ‘বাংলাদেশের স্লোগান’ কেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের মুখে, সে প্রশ্ন তুলে অনুযোগ জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, রাজ্যপালকে ভুল বুঝিয়ে তাঁকে দিয়ে ওই শব্দবন্ধ বলিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর পর ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’দের পরামর্শে যে রাজ্যপাল ‘ভারত মাতার জয়’ বলবেন, সেই দাবিও করেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবার বাংলা ভাষায় ‘হাতেখড়ি’ ছিল রাজ্যপালের। সেই অনুষ্ঠানেই তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি। রাজ্যপালের মুখে ওই ধ্বনি শুনে শুভেন্দুর অনুযোগ, ‘‘জয় বাংলা ভারতের স্লোগান নয়। রাজ্যপাল মহোদয়কে বোঝানো হয়েছে, জয় বাংলা স্লোগান মানে বাংলার জয়। তা তো নয়।’’
রাজ্যপালের ‘হাতেখড়ি’ পর্ব শেষে রাজভবনের অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বক্তৃতা করেন। তার পরে রাজ্যপালও কয়েকটি বাক্য বলেন বাংলায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি বাংলা শিখব। বাংলা সুন্দর ভাষা। আমি বাংলাকে ভালবাসি। আমি বাংলার মানুষকে ভালবাসি। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস আমার নায়ক। জয় বাংলা, জয় হিন্দ।’’ এই ‘জয় বাংলা’ শব্দবন্ধেই আপত্তি বিজেপির। যদিও বাংলা ভাষায় ‘হাতেখড়ি’ নিয়ে বৃহস্পতিবার এমনিতেই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন রাজ্যপাল। অনেকের মতে, রাজ্যপালের বক্তব্যে এই ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি সেই আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ।
বৃহস্পতিবার রাজভবনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেল শুভেন্দু। তবে তিনি সেখানে যাননি। রাজভবনে অনুষ্ঠান যখন শেষ হয়, শুভেন্দু তখন মানিকতলায় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সরস্বতী পুজোয় যোগ দিতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, জয় বাংলা স্লোগান ভারতের নয়। ওটা বাংলাদেশের ‘জাতীয় স্লোগান’। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘এটা প্রথমে মুজিবুর রহমান, পরে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ব্যবহার করেন। এখন হাসিনার দল আওয়ামি লিগ তাদের সভা, সমিতি, মিটিং, মিছিলে এই স্লোগান দেয়। ওরা সরকারি অনুষ্ঠানেও ওই স্লোগান দিয়ে থাকে। কিন্তু ভারত বা পশ্চিমবঙ্গে এই স্লোগান চলে না।’’ রাজ্যপালকে দায়ী না করে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্যপালকে বক্তৃতা লিখে দিয়েছে তাঁর অফিস। এ ক্ষেত্রে রাজ্যপালের কোনও ভুল নেই। তাঁকে দিয়ে বলিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কালে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাঁকে এটা বুঝিয়ে দেবেন। আগামী দিনে রাজ্যপাল ভারত মাতার জয় বলবেন।’’
ঘটনাচক্রে, রাজ্যের শাসক দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতার কণ্ঠেও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শোনা যায়। ২০২১ সালে বিধানসভার ভোটপ্রচারে গিয়ে তিনি এই স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। সেই সময়ে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এ রাজ্যে নিয়মিত ভোটপ্রচারে আসতেন। তাঁদের ‘বহিরাগত’ বলার পাশাপাশি, মমতা ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দেওয়া শুরু করেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মমতা ও তাঁর দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরাও এই স্লোগান দেন।
এমনিতেই গেরুয়া শিবিরে বর্তমান রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। তারা আনন্দের ভূমিকায় মোটেই খুশি নয়। ইতিমধ্যে বিজেপি প্রকাশ্যে এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দলের একাংশের মতে, রাজ্যপালের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যে ভাবে একের পর এক বিষয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ‘তালে তাল মিলিয়ে চলছেন’ আনন্দ, তাতে দলীয় নেতৃত্বের একটা অংশ খানিকটা ‘হতাশ’। মঙ্গলবারই বিজেপি নেতা স্বপন দাশগুপ্ত খোলাখুলি আনন্দকে ‘রাজ্য সরকারের ফোটোকপি মেশিন’ বলে অভিহিত করেছেন। বিজেপির একটা অংশের মত, দলীয় নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া স্বপন ওই আক্রমণ করেননি। বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের ‘হাতেখড়ি’ অনুষ্ঠানে দেখা গেল না বিজেপির কোনও নেতাকেও। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায় ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন বটে। তবে বিজেপির দাবি, তথাগত গিয়েছিলেন মেঘালয় ও ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল হিসাবে।
তথাগত রাজভবনের অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যপালের মুখে ‘জয় বাংলা’ শব্দবন্ধের সমালোচনা করেছেন। সেই সমালোচনাকে সমর্থনও করেছেন শুভেন্দু। দিনের সমস্ত কর্মসূচি শেষে শুভেন্দু বৃহস্পতিবার রাতে যান স্বপনের বাড়িতে। সেখানে দু’জনের মধ্যে দীর্ঘ ক্ষণ আলোচনা হয়। বিজেপি সূত্রে খবর, দু’জনের মধ্যে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও কথা হয়েছে।
অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন রাজ্যপাল আনন্দ। তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছে। অনেকের মতে, এটা পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি। অনেকে আবার বলছেন, জরুরি তলবেই আনন্দ যাচ্ছেন রাজধানীতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy