বাংলার বাইরে আট রাজ্যের দায়িত্ব পেলেন দিলীপ। গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্য রাজনীতি থেকে দূরত্ব বেড়ে গেল দিলীপ ঘোষের। এ বার বাংলা ছেড়ে অন্য আট রাজ্যের সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাতে হবে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতিকে। তবে দিলীপের এই দায়িত্ববৃদ্ধি রাজনৈতিক উত্থান না কি বাংলা থেকে অপসারণ তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে রাজ্য বিজেপিতে। গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে গোটা দেশেই ‘বুথ সশক্তিকরণ অভিযান’ শুরু করছে বিজেপি। আর সেই কর্মসূচিতেই বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, আন্দামান ও উত্তর-পূর্বের চার রাজ্য মণিপুর, মেঘালয়, সিকিম, নাগাল্যান্ডে সংগঠন বৃদ্ধির দায়িত্ব দিলীপকে দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে।
বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ফল হয়নি। তার পরে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আচমকা দিলীপকে রাজ্য সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেই তাঁকে সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হয়। কিন্তু তার পরেও নির্দিষ্ট করে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বাংলাতে তো নয়ই, দেশের অন্য কোনও রাজ্যেও নয়। দীর্ঘ সময় দিলীপ নিজের মতো করে রাজ্যে কাজ করেছেন। তবে ক্রমশই তাঁর সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়ছিল। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কিংবা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে তাঁর করা বিভিন্ন মন্তব্য থেকে বিতর্কও তৈরি হয়। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য বিজেপির শাসক শিবির যেমন বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে নালিশ করেছে, তেমনই জেপি নড্ডা, অমিত শাহেরাও অসন্তুষ্ট ছিলেন। মে মাসের গোড়ায় রাজ্যে এসে শাহ রাজ্যের প্রধান নেতাদের নিয়ে যে বৈঠক করেন তাতেও দিলীপকে ডাকেননি। এই পরিস্থিতিতে দিলীপকে আট রাজ্যের সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়াকে অনেকেই তাঁকে রাজ্য থেকে সরিয়ে দেওয়া বলে ব্যাখ্যা করছেন। তবে রাজ্য বিজেপির অনেক নেতারই দাবি, সর্বভারতীয় বিজেপিতে অনেক সহ-সভাপতি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দিলীপকে বাছা হয়েছে যোগ্যতার নিরিখেই। এটাকে রাজনৈতিক উত্থান হিসেবে দাবি করে তাঁরা মুকুল রায়ের তুলনা টানছেন। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূলে ফেরার আগে দীর্ঘ দিন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি থাকলেও মুকুলকে কোনও দায়িত্বই দেননি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
বিজেপিতে সাধারণ ভাবে কোনও সর্বভারতীয় নেতাকে নিজের রাজ্যে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হয় না। যেমন ভাবে অতীতে বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পাওয়া অনুপম হাজরা রাজ্যে কোনও দায়িত্ব পাননি। তবে দিলীপ অনুগামীরা অনুপমের সঙ্গে তুলনা টানতে রাজি নন। তাঁদের বক্তব্য, অনুপম এসেছিলেন তৃণমূল থেকে। বিজেপিতে তেমন সাফল্যও নেই। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পরাজিত হন। আর সঙ্ঘ পরিবারের আদি সদস্য দিলীপ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে পরেই রাজ্য সভাপতি হয়েছিলেন। তাঁর আমলেই বাংলায় বিজেপি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছে। দিলীপ নিজেও প্রথমে বিধায়ক ও পরে সাংসদ হয়েছেন। রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ে গোটা রাজ্যে সফর করেছেন। রাজ্য বিজেপির অনেকেই দাবি করছেন, যতই অন্য রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হোক না কেন, বাংলায় সংগঠন মজবুত করতেও ‘অভিজ্ঞ’ দিলীপকে ব্যবহার করতে চাইবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
দিলীপের এই দায়িত্ব বৃদ্ধিতে রাজ্য বিজেপির একাংশ অবশ্য বেজায় খুশি। ওই অংশের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘দিলীপদা মাঝেমাঝেই এমন কিছু মন্তব্য করে বসেন যে, সমস্যা হয়ে যায়। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বেশ কয়েক বার তাঁর সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে। রাজ্যের শীর্ষ নেতারাও বলেছেন। এ বার বড় দায়িত্ব পাওয়ায় তিনি বাংলার খুঁটিনাটি নিয়ে আশা করি আর খুঁত ধরে বেড়াবেন না।’’
এই প্রসঙ্গে দিলীপ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি সংগঠনের লোক। আমার কাছে সবার আগে দল, তার পরে ব্যক্তি। নেতৃত্ব যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করাই আমার কাজ। চিরকাল তাই করেছি। এখনও করে যাব।’’ তাঁকে বাংলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও মানতে নারাজ দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো বাংলার সাংসদ। মেদিনীপুর লোকসভা এলাকায় বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচি তো আমাকেই করতে হবে। এটা ঠিক যে, আমায় এখন বিভিন্ন রাজ্যে খুব বেশি সফর করতে হবে। তবে বাংলার যে কোনও জায়গায় নেতৃত্ব চাইলেই আমি হাজির হয়ে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy