ফাইল চিত্র।
গত কয়েক বছর ধরে অনেক বিধায়কই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। এর বড় সংখ্যাটাই আবার তৃণমূল থেকে। তাঁদের অনেকেই গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে জয় পেয়েছেন ৫ জন। কিন্তু যাঁরা জিততে পারেননি তাঁরা কি এখনও বিজেপি-তে থেকে যাবেন? আর যাঁদের দলে নিলেও বিজেপি প্রার্থী করেনি তাঁরাই বা কী করবেন? ইতিমধ্যেই এমন ৫ জন পাকাপাকি ভাবে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলের দিয়ে পা বাড়িয়েছেন। কিন্তু যাঁরা এখনও রয়েছেন তাঁদের তালিকা নিয়েও চিন্তিত বিজেপি। কে থাকবেন আর কে থাকবেন না, এই ভাবনা চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ, বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যেই দলের সঙ্গে দূরত্ব গড়ে বেসুরো গাইছেন। আবার কয়েকজনের বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ নেই।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জয় পেয়েছিল ৩টি আসনে। খড়্গপুর সদর, বৈষ্ণবনগর এবং মাদারিহাটে। এর মধ্যে আবার দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুর থেকে সাংসদ হয়ে যাওয়ার পরে একটি আসন কমে যায়। উপনির্বাচনে খড়্গপুর সদরে জিতেছিল তৃণমূল। তবে ভাটপাড়া, দার্জিলিং, কৃষ্ণগঞ্জ এবং হবিবপুরে উপনির্বাচনে জয় পায় বিজেপি। সেই হিসেব ধরলে আগের বিধানসভায় বিজেপি-র টিকিটে জেতা বিধায়কের সংখ্যা ছিল ৬। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দল থেকে বিজেপি-তে আসেন ৩৩ জন। সেই জোরেই গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের সঙ্গে ৩৯ জন বিধায়ক রয়েছেন বলে গেরুয়া শিবিরের দাবি ছিল। যদিও শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে বিধায়ক পদ ছেড়ে দেন।
২০১৭ সালে বিজেপি-তে যোগ দেন মুকুল রায়। তৃণমূল ছেড়ে তিনি পদ্ম শিবিরে আসার পরেই শুরু হয় অন্য দল থেকে বিধায়ক আনার প্রক্রিয়া। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করায় সেই যোগদানের ধারা আরও এগিয়ে যায়। আর বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে এক ঝাঁক বিধায়ক আসেন। তৃণমূল প্রার্থী না করায় অভিমানে বিজেপি-তে যোগ দেন সিঙ্গুরের রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য থেকে সাতগাছিয়ার সোনালি গুহরা। এঁরা কেউ পদ্মের টিকিটে প্রার্থী হতে পেরেছিলেন, কেউ পারেননি।
হিসেব বলছে, অন্য দল থেকে বিজেপি-তে এসে প্রার্থী হয়েছিলেন ১৮ জন। জয় পেয়েছেন ৫ জন। শুভেন্দু অধিকারী, বিশ্বজিৎ দাস, মিহির গোস্বামী, তাপসী মণ্ডল এবং সুদীপ মুখোপাধ্যায়। বাকি ১৩ জন পরাজিত। এই তালিকায় রয়েছেন শুভ্রাংশু রায়, সুনীল সিংহ, সব্যসাচী দত্ত, সৈকত পাঁজা, শীলভদ্র দত্ত, বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, অরিন্দম ভট্টাচার্য, দীপক হালদার, প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এঁদের মধ্যে রাজীব, সব্যসাচীর মতো কয়েকজন নেতার সঙ্গে ইতিমধ্যেই বিজেপি-র দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে কারও কারও সঙ্গে পদ্ম শিবিরের যোগাযোগই নেই বলে দাবি দলের নেতাদেরই। ইতিমধ্যেই শুভ্রাংশুকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এখন আর বিজেপি করছেন না জানিয়ে দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রবীর।
ভোটের ফল ঘোষণার পরে ৫ প্রাক্তন বিধায়ক সোনালি গুহ, দীপেন্দু বিশ্বাস, বাচ্চু হাঁসদা, অমল আচার্য, শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপি ছেড়ে দিয়েছেন। আগেই বিজেপি ছেড়েছেন লাভপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা তেহট্টের প্রাক্তন বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্তের।
বাকিদের তালিকা নিয়ে চিন্তিত বিজেপি হিসেব কষছে কারা থাকতে পারেন, কারা নয়। ভোটের আগে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া শিবপুরের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ি ফল ঘোষণার পরে আর সে ভাবে বিজেপি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না বলেই দাবি দলের। যদিও জটু আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, তিনি বিজেপি-তেই থাকছেন। অন্য যে যা ভাবে ভাবুক তিনি তৃণমূলে ফিরতে চান না।
রাজ্য বিজেপি-র এক নেতা জানিয়েছেন, দলবদলে বিজেপি-তে আসা ৬ জন বিধায়কের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগই নেই দলের। তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। তাঁদের মধ্যে অন্যতম উইলসন চম্প্রমারি। কালচিনির প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের যে ফোন নম্বর বিজেপি নেতৃত্বের কাছে রয়েছে সেটিও নাকি এখন কাজ করে না। এই তালিকায় রয়েছেন নাগরাকাটার প্রাক্তন বিধায়ক সুক্রা মুন্ডা। গত ১৯ ডিসেম্বর শুভেন্দুর হাত ধরে মেদিনীপুরে অমিত শাহর সভায় বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সুক্রা যোগ দিতেই বিক্ষোভ শুরু হয় বিজেপি-র অন্দরে। তার জেরে আলিপুরদুয়ার জেলা বিজেপি-র কয়েকজনকে শো-কজ করে রাজ্য নেতৃত্ব। যদিও প্রার্থী না করায় বিধানসভা নির্বাচন পর্বে সুক্রাকে দলের কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন দলের উত্তরবঙ্গের এক নেতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy