লকেট চট্টোপাধ্যায় ও সুবীর নাগের মধ্যে বিরোধ নতুন নয়। ফাইল চিত্র।
বিধানসভা নির্বাচনে লক্ষ্য বড় থাকলেও তার থেকে অনেক দূরেই আটকে যায় বিজেপি। ফল ঘোষণার পর থেকেই রাজ্য বিজেপি-র বিপর্যস্ত চেহারা সামনে আসতে থাকে। এ বার তা যেন বড় আকার নিতে চলেছে। তারই ফল দেখা গিয়েছে শুক্রবার। হুগলি লোকসভা এলাকার সাংগঠনিক বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে চুঁচুড়ায় কর্মী বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। প্রকাশ্যেই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় থেকে রাজ্য সম্পাদক দীপাঞ্জন গুহের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের অপসারণের দাবিও ওঠে। নিরাপত্তারক্ষীদের সাহায্যে বিক্ষোভ সামলে দিলীপ বেরিয়ে এলেও বিতর্ক সামলাতে পারেননি।
বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় অনেক জেলায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন কর্মীরা। কিন্তু তাকে গুরুত্ব দেননি নেতৃত্ব। যেটা খুবই বেশি হয়েছিল বিজেপি-র হুগলি সাংগঠনিক জেলায়। বিক্ষোভ সামলাতে লকেটকে চুঁচুড়ায় প্রার্থী করা হয়। দীপাঞ্জনকে প্রার্থী করা হয় চন্দননগরে। আর এই দু’জনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব জেলার প্রাক্তন সভাপতি সুবীর নাগকে তারকেশ্বরে নির্বাচনের তদারকিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সেই সুবীরের বিরুদ্ধেই গোলমালে উস্কানির অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতাদের দাবি, সুবীরের অনুগামীরাই বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। যদিও সুবীর বলেন, ‘‘এই জেলায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কর্মীই তো আমার হাত ধরে বিজেপি-তে এসেছেন। ফলে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আমার পরিচিতেরা থাকতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই সাংগঠনিক জেলায় একটি আসনেও দল জিততে না পারার জন্য ৩ জন দায়ী।’’ সুবীর প্রকাশ্যেই ‘লকেট-দীপাঞ্জন-গৌতম’ এই ত্রয়ীর নাম বলছেন।
লকেট ঘনিষ্ঠরা অবশ্য বলছেন, একটা সময় দীপাঞ্জন ও সুবীর একসঙ্গে ছিলেন। এখনও তাঁরা আড়ালে একসঙ্গেই আছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ না হওয়াতেই এখন দুই শিবিরে ঢুকে গোলমাল পাকাতে চাইছেন। লকেট নিজে অবশ্য এই বিতর্কে ঢুকতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি একটা বড় দল। কর্মীদের মধ্যে মান-অভিমান থাকেই। ফল খারাপ হওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলছেন। এটাকে এত গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই।’’
তবে সুবীর অনুগামীদের স্পষ্ট বক্তব্য, লকেটের জন্যই জেলায় এত খারাপ ফল হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনে জয়ের পরে তিনি এলাকায় কাজ করেননি। আর সেই সময় তাঁকে জেতাতে যাঁরা দিনরাত এক করেছিল তাঁদেরই সাংসদ হওয়ার পরে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এই অভিযোগ নিয়ে লকেটের বক্তব্য, ‘‘সংগঠনের কোন পদে কে থাকবেন সেটা ঠিক করার দায়িত্বই আমার নয়। এমনকি পরামর্শ দেওয়াও নয়। এটা রাজ্য নেতৃত্ব করেন।’’
চুঁচুড়া বিধানসভা আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন সুবীর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে পরেই তিনি রাজনৈতিক সন্ন্যাস নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। চুঁচুড়ায় লকেট প্রার্থী হচ্ছেন জানার পরেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘কোথাও যেন দল আমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না। তেমনই মনে হয়েছে আমার। এখনও দলের আদর্শ মাথায় নিয়েই রয়েছি। কিন্তু যে পরিশ্রম করে দলকে দাঁড় করিয়েছি, তার মূল্যায়নটা কোথাও যেন হল না!’’ এখন সেই সুবীর-লকেট বিরোধ নতুন করে বিজেপি-র মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই জেলার সপ্তগ্রাম আসনের প্রার্থী নিয়েও অনেক ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। জেলার বাকি আসনের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হলেও বিলম্বিত হয় সপ্তগ্রামের প্রার্থী ঘোষণা। শেষ পর্যন্ত যাঁকে নিয়ে ক্ষোভ, তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে আসা সেই দেবব্রত বিশ্বাসকেই প্রার্থী করা হয়। ভোটে হারার পরে তিনি আদৌ বিজেপি-তে আছেন কিনা তা নিয়েও দলে অনেক প্রশ্ন। শুক্রবার দিলীপের বৈঠকে হুগলি লোকসভা আসনের ৭ বিধানসভা আসনের প্রার্থীরা হাজির হলেও ছিলেন না দেবব্রত। এ নিয়েও নানা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে সুবীর গোষ্ঠী।
লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে এই জেলা থেকে ভাল ফলের আশা ছিল বিজেপি-র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১৮টি আসনের মধ্যে ৪টিতে জয় পায় তারা। তার সবগুলিই আরামবাগ লোকসভা এলাকার অন্তর্গত। সেখান শনিবার সাংগঠনিক বৈঠক করেন দিলীপ। তাতে কোনও গোলমাল না হলেও শুক্রবার শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলার বৈঠকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় নেতৃত্বকে। সেই বৈঠকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়াদের মধ্যে একমাত্র চাঁপদানির দিলীপ সিংহ হাজির ছিলেন। শ্রীরামপুর ও উত্তরপাড়ার প্রার্থী কবীরশঙ্কর বসু, প্রবীর ঘোষালরা আমন্ত্রণ পেয়েও আসেননি। এই দু’জনকে প্রার্থী করা নিয়ে ক্ষোভ ছিল রাজ্য ও জেলার অনেক নেতার মধ্যেও। অনুপস্থিতির কারণ হিসাবে বিজেপি-র তরফে পারিবারিক অসুবিধার কথা জানানো হয়। কিন্তু প্রবীর তার আগেই আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছিলেন, বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেছিল বটে,তবে তিনি এখন আর রাজনীতিই করছেন না। শুক্রবার দিলীপের বৈঠকে ছিলেন না চণ্ডীতলার অভিনেতা প্রার্থী যশ দাশগুপ্তও।
শুধু হুগলি নয়, অনেক জেলাতেই এখন সাংগঠনিক গোলমাল নিয়ে বিপর্যস্ত বিজেপি। দলের রাজ্য কমিটির এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘ভোটের আগে পুরনো কর্মীদের কথায় কান না দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে। হুগলি তো একটা নমুনা মাত্র। সব জেলাতেই কম-বেশি চলছে। তৃণমূল থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁরা এখন ফিরে যেতে তৈরি। অন্য দিকে, দলের পুরনো কর্মীদের অভিমান কমানো যাচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy