মমতার ছুটির সিদ্ধান্তের সমালোচনা বিরোধীদের। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্য জুড়ে তাপপ্রবাহের জেরে আগামী সপ্তাহে সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হল তিন বিরোধী দল। বিজেপি এই ছুটির সঙ্গে তৃণমূলের মিড ডে মিলের চাল চুরির গন্ধ পাচ্ছে। তেমনই আবার সিপিএম ও কংগ্রেস স্কুল ছুটি দেওয়ায় পঠনপাঠনে খারাপ প্রভাব পড়ার অভিযোগ তুলেছে। তবে সেই অভিযোগ খারিজ করে বিরোধী দলগুলির বাস্তব ভাবনা প্রসঙ্গেই প্রশ্ন তুলেছে শাসকদল তৃণমূল।
রবিবার এপিবি আনন্দকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সোমবার থেকে সরকারি, বেসরকারি স্কুলে ছুটি ঘোষণা করতে বলছি। মানুষের স্বার্থে একটা ব্যবস্থা করতে হবে না? সোম থেকে শনি— সব সরকারি এবং বেসরকারি স্কুল, কলেজ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করছি ছুটি দিতে। সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরেই আনন্দবাজার অনলাইনকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘এই ছুটির ঘোষণা আসলে মিড মে মিল চুরি করার জন্য করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ধরা পড়েছে। আরও টাকা কামাতে চায়। এই ঘোষণায় যে সব স্কুলে প্রাতঃকালীন বিভাগ রয়েছে, সেগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। যেনতেনপ্রকারেণ স্কুলগুলি বন্ধ করে মিড ডে মিলের চাল চুরির বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ছুটি দিয়ে স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ করে দেওয়া কোনও কাজের কথা নয়। সে ক্ষেত্রে স্কুলগুলিকে সকালের দিকে করে দিলেই ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠন বন্ধ হত না। বিকল্প পথে পঠনপাঠন চালু রাখাই সরকারের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু শিক্ষার চেয়ে চুরিই রাজ্য সরকারের কাছে বেশি প্রাধান্য পায়।’’ শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ তুলেছেন নতুন প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে তাতে আগামী দিনে গরম আরও বাড়ার সম্ভাবনা। প্রতি বারই কি পড়ুয়াদের লেখাপড়ার সময় এ ভাবে কমে যেতে পারে? বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত। আর উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়ি-সহ বিভিন্ন এলাকায় গ্রীষ্ম এবং বর্ষা একটু দেরিতে আসে। তাই সেখানে এখনই ছুটি বাড়ানোর কোনও অর্থ হয় না।’’
গত সপ্তাহেই গরমের কারণে সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি এগিয়ে আনা হয়েছে। ২৪ মে’র পরিবর্তে গরমের ছুটি শুরু হবে আগামী ২ মে থেকে। তাই ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনোর সময় স্কুলে দিন দিন কমে যাচ্ছে বলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘ছুটি দিয়ে দেওয়া কোনও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। গরমের জন্য যখন দুপুরে স্কুল করা যাচ্ছে না, তখন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় স্কুলের সময় করা যেতেই পারে। প্রাথমিক স্কুলগুলিও এই সময় বন্ধ করে দেওয়ার কোনও যুক্তি হয় না। বিকল্প পদ্ধতিতে পঠনপাঠন চালুর রাখার নীতি রাজ্য সরকারের নিতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা গেল কোনও বিকল্প নীতি তৈরি না করেই ছুটি দেওয়ার ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এমনিতে তো গরমের ছুটি এগিয়ে ২ মে থেকে করা হয়েছে। তার উপর আরও এক সপ্তাহ ছুটির ঘোষণা হয়ে গেল। তার মানে, মাঝে আর এক সপ্তাহ স্কুল হবে। এই ছুটির ফলে তাদের পড়াশুনোয় যে ঘাটতি তৈরি হবে, তা পূরণ করার জন্য কে দায়িত্ব নেবে?’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কলকাতা শহরে গত ১০ বছরে ৩০ শতাংশ সবুজ কমেছে। তাই গ্রীষ্মকালে শহরের তাপমাত্রা যে বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সব ক্ষেত্রেই সরকারের বিকল্প ভাবনা রাখা উচিত ছিল। কিন্তু কোনও বিকল্প পথ না রেখে ছুটিকেই একমাত্র রাস্তা হিসেবে বেছে নিয়েছে সরকার। কারণ মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, তিনি ডিএ দিতে পারবেন না তাই ছুটি দিয়েছেন। সেই মতো তিনি ছুটিই দিয়েছেন। তাঁর আর কিছু দেওয়ার নেই।’’
বিরোধিদের এ হেন সম্মিলিত আক্রমণের জবাবে তৃণমূল মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার দলনেতা শান্তনু সেন বলেন, ‘‘যে বিরোধীরা প্রায় প্রত্যেক নির্বাচনেই মানুষের আস্থা হারাচ্ছেন, তাঁদের বাস্তব বুদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেন, তা বার বার ঠিক প্রমাণ করেছে সময়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবে না। বাস্তব বুদ্ধিহীন, বিবেচনাহীন বিরোধীরা আবার যথা সময়ে জবাব পেয়ে যাবেন।’’ বিরোধীদের এমন সমালোচনার মধ্যে স্কুলশিক্ষকদের সংগঠন আবার আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে দ্রুত স্কুল খোলার দাবি করেছেন। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা কোনও রাজনীতির মধ্যে নেই। মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই যেন স্কুল খোলা হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy