অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
ইডি-র দফতরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তোপ দেগেছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্থা এবং বিজেপির বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাঁকে এবং তৃণমূলকে নিশানা করা হচ্ছে। নারদ-কাণ্ডে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দিয়ে শুরু করে সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার চ্যালেঞ্জও দিয়েছিলেন তিনি। অভিষেকের সেই তোপের বিরুদ্ধে এ বার পাল্টা সরব হল বিজেপি। তাদের প্রশ্ন, অভিষেকের এত ভয় কেন? শুভেন্দুকে সামনে রেখে তিনি কি আসলে নারদ-কাণ্ডে নিজের দলের পুরনো নেতাদেরই ‘অস্তাচলে’ পাঠাতে চান? পাশাপাশিই, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সমন্বয় কমিটির বৈঠকের দিনেই ইডি-র তলব এবং ইডি থেকে বেরিয়ে অভিষেকের তোপ— এই গোটা ঘটনাপ্রবাহের নেপথ্যে ‘গুঢ় রহস্য’ আছে কি না, প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী।
কলকাতায় এসে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনাবশ্যক বিচারক হওয়ার দরকার নেই! তিনি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির ইন-চার্জও নন। তাঁর এত ভয় কীসের? তাঁর কথা শুনে মনে পড়ে যাচ্ছে, মন্দিরে কে, আমি তো কলা খাইনি!’’ নারদ-কাণ্ড নিয়ে অভিষেকের দাবির জবাবে ধর্মেন্দ্রের বক্তব্য, ‘‘শুধু সারদা বা নারদ নয়, বাংলায় কয়লা, গরু পাচার-সহ নানা রকম কেলেঙ্কারি আছে। বাংলা এখন দুর্নীতিগ্রস্তদের হাতে। আপনার ঘরে কোটি কোটি টাকা পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় সংস্থা তো তাদের কাজ করবেই!’’
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এই আক্রমণের জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী, তৃণমূলের নেত্রী শশী পাঁজার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অভিষেক মোটেও ভীত নন। তাঁকে যখনই সিবিআই বা ইডি ডেকেছে, তিনি গিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ওঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি তারা!’’ সেই সঙ্গেই শশী বলেন, ‘‘বিজেপির তো দুর্নীতি নিয়ে কথা বলাই উচিত নয়। বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীকে ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে। তৃণমূলে যখন ছিলেন, তখনকার সেই ছবি তো বিজেপিই সমাজমাধ্যমে প্রচার করেছে। শুভেন্দু বিজেপিতে চলে গেলেন, তখন সেই ছবি মুছে দেওয়া হল! সারদা, নারদ মামলায় নাম থাকা সত্বেও কেন শুভেন্দুকে কেন্দ্রীয় সংস্থা ডাকছে না? তা নিয়ে ধর্মেন্দ্র প্রধান কিছু বলুন!’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কেন বাঁকুড়ায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে দলের কর্মীরা তালাবন্ধ করে রেখে দিলেন, তা নিয়ে কিছু বলুন!’’
এই প্রসঙ্গে এ দিন মুখ খুলেছেন শুভেন্দু নিজেও। নারদ কেলেঙ্কারিতে কেন তাঁর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সংস্থা ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এই সংক্রান্ত প্রশ্নে নদিয়ায় বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘ফাটা রেকর্ড! উনি (অভিষেক) কে ডি সিংহের কাছে টাকা দিয়ে এক সঙ্গে ১৩ জনের বিরুদ্ধে এক দিনে করিয়েছিলেন। ভাইপোর রচিত ষড়যন্ত্র! এটা সবাই জানে। যার বৌয়ের নামে কয়লার টাকা ব্যাঙ্ককে যায়, যার শ্যালিকা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে, ভারত ছেড়ে পালায়। যার বাবা-মা লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ড্স-র অধিকর্তা। সেই সংস্থার মোটা মাইনে পাওয়া চাকুরে জেলে থাকে। তিনি ২০১১ সালের পর এসে পশ্চিমবঙ্গে মধু আর ক্ষীর খাচ্ছেন! আগে কোথায় ছিলেন?’’ শুভেন্দুর অভিযোগ, বাংলায় ২২ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এবং তার ঘনিষ্ঠেরা। বিরোধী নেতার কথায়, ‘‘এটা ‘ওপেন সিক্রেট’ বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আবার এ দিনই বলেছেন, ‘‘নারদ-কাণ্ডে বিরোধী দলনেতাকে ভাইপো সামনে রেখেছেন। কিন্তু আসল নিশানা তিনি নন। ভাইপো আসলে চান, সৌগত রায়, ফিরহাদ হাকিম, কাকলি ঘোষ দস্তিদারদের মতো তৃণমূলের পুরনো নেতারা অস্তাচলে যান! তা হলে তিনি ও তাঁর শাগরেদেরা আরও জাঁকিয়ে বসে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারেন।’’ ইডি-সিবিআইয়ের কর্মীরা ‘রাজনৈতিক প্রভুদের সন্তুষ্ট’ করতে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিষেক। সুকান্তের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে হলে তো ওঁকে জেলে থাকতে হত এত দিনে!’’
ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে অধীর-সহ বাংলার কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাদেরও এক হাত নিয়েছিলেন অভিষেক। বহরমপুরে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের বক্তব্য, ‘‘কয়লা চুরি, বালি চুরি, পাথর চুরি, গরু পাচার, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি সব কিছুতে কাদের নাম? অনুব্রত মণ্ডল, পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের জেলে ভরে দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য দিদির মাথা ব্যথা নেই। দিদির মাথাব্যথা খোকাবাবুর জন্য। কারও দিকে আঙুল তোলার আগে নিজেরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদেরকে জিজ্ঞেস করুন।’’ প্রদেশ সভাপতির আরও মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেসকে সারা ভারতবর্ষে খতম করতে খোকাবাবুর পিসি অনেক দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যখন বুঝেছেন কংগ্রেস না থাকলে আর গতি নেই, তখন কংগ্রেসকে তিনি আশ্রয় করতে চাইছেন। এই ১৩ তারিখ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কমিটির বৈঠক ছিল, ১৩ তারিখেই ইডি-র ডাকার দরকার পড়ল কেন? এগুলোর পিছনে গুঢ় রহস্য আছে কি না, জানতে হবে!’’
দিল্লিতে কমিটির বৈঠকের পরে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেনুগোপাল অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্যই অভিষেককে ইডি ডেকেছে। জোটের ‘নিয়ম রক্ষার্থে’ এআইসসি নেতৃত্বকে এমন বলতে হয়েছে বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধীর। আর বাংলার ‘বাস্তবতা’র প্রেক্ষিতে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার দাবি জানিয়ে বেনুগোপালকে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচী। একই দিনে ইডি-র ডাক এবং দিল্লির ‘ইন্ডিয়া’ বৈঠকে অভিষেকের নামে ফাঁকা চেয়ার রাখা, এ সব ঘটনাপ্রবাহ এক সূত্রে বাঁধা কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। সেই সঙ্গেই নারদ-প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা চাই, সকলকে ধরা হোক, শুভেন্দুকেও। কাকে আগে ধরা হবে, কাকে পরে, অভিযুক্তেরা এ সব ঠিক করে দিতে পারে না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy