গত মার্চ মাসে মমতার সাক্ষাতের অপেক্ষায় শ্যামাপ্রসাদ। ফাইল চিত্র
রাজনীতিকে কিছুটা দূরে রেখে বাংলার শাসক ও বিরোধী শিবির যখন রাখিবন্ধন পালনে ব্যস্ত, তখনই রাজনৈতিক জল্পনা বিষ্ণুপুরের শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ঘিরে। রবিবার সকালে প্রায় ১০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা শ্যামাপ্রসাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে গেলেও গ্রেফতারের পরে শ্যামাপ্রসাদের দায় নিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘উনি তো এখন তৃণমূলেই। আমাদের দলে এসেছিলেন এবং ফিরেও গিয়েছেন। সুতরাং, ওঁকে বিজেপি নেতা বলাটা ঠিক নয়।’’
একই সঙ্গে রাজু মনে করাতে চাইলেন যে বিধানসভা ভোটের আগেই শ্যামাপ্রসাদ নিজেই তৃণমূলে আছেন বলে জানিয়েছিলেন। গত ডিসেম্বর মাসে প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়ার সময়েই একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। প্রথম তৃণমূল সরকারের আবাসন, বস্ত্র,নারী ও শিশু-কল্যাণ মন্ত্রী হন শ্যামাপ্রসাদ। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক হয়েছিলেন ২০১১ সালে। জিতেই মন্ত্রিত্ব পান। তবে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্র থেকেই হেরে যান তিনি। দল অবশ্য তার পরেও বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি করেছিল তাঁকে।
গত ১৫ ডিসেম্বর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার সময় শ্যামাপ্রসাদ বলেছিলেন, ‘‘‘আমি দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। দলও ছেড়েছি। শুভেন্দু অধিকারী আমার নেতা, আমার অভিভাবক। আমি শুভেন্দু অধিকারীর সৈনিক।’’ একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলে, তিনিও তাঁর সঙ্গেই গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাবেন। নামও লিখিয়েছিলেন। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও বিষ্ণুপুর আসনে বিজেপি-র টিকিট পাননি।
বিজেপি-র পক্ষে টিকিট দেওয়া সহজও ছিল না। শ্যামাপ্রসাদকে দলে নেওয়া নিয়েই বিজেপি-তে কর্মী বিক্ষোভ হয়। সেই সময় বিষ্ণুপুরের বিজেপি কর্মীরা দাবি করেন, কখনও কংগ্রেস, কখনও তৃণমূলের হয়ে বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান থেকেছেন শ্যামাপ্রসাদ। মন্ত্রীও হয়েছেন। গেরুয়া শিবিরের স্থানীয় নেতারা এমন দাবিও করেন যে, তোলাবাজি, মন্দিরের জায়গা বিক্রি করে দেওয়া, সারদার টাকা নয়ছয় করা, চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার মতো দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমন দুর্নীতিগ্রস্ত কাউকে দলে নেওয়া যাবে না। এর পরে দলে নেওয়া হলেও শ্যামাপ্রসাদকে কোনও পদ দেওয়া বা বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীও করেনি বিজেপি। সেই কথা মনে করিয়ে রাজু বলেন, ‘‘ভোটের আগে নিজেদের স্বার্থে অনেকেই আমাদের দলে এসেছেন। কিন্তু ভোটের টিকিট না পেয়ে তিনি মার্চ মাসেই ঘোষণা করেছিলেন যে তৃণমূলেই রয়েছেন তিনি।’’ প্রসঙ্গত, সেই সময় তৃণমূলে ফিরতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও গিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। কিন্তু সাড়া পাননি।
ভোটের প্রচারে মমতা দুর্গাপুরে গেলে দেখা করতে গিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। ১৬ মার্চ দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হোটেলে ছিলেন মমতা। সেই দিন শ্যামাপ্রসাদ হোটেলের বাইরে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, দিদির সঙ্গে একবার তিনি ব্যক্তিগত কারণে কথা বলতে চান। কিন্তু সে দিন দেখা হয়নি। হোটেল থেকে বেরোনোর সময় শ্যামাপ্রসাদের দিকে ফিরেও তাকাননি মমতা। বহুবার ডাকাডাকি করলেও সাড়া দেওয়া তো দূর, তাঁর দিকে ঘুরেও তাকাননি মুখ্যমন্ত্রী।
রবিবার বিজেপি নেতা রাজু বলেন, ‘‘আমি দলের রাঢ়বঙ্গ জোনের দায়িত্বে। ভোটের আগে বা পরে বিজেপি-র কোনও কর্মসূচিতেই উনি আসেননি। কিন্তু এখন গ্রেফতার হতেই বিজেপি নেতা বলা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। আর যে অভিযোগে উনি গ্রেফতার হয়েছেন তা বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার অনেক আগের। তখন কেন পুলিশ পদক্ষেপ করেনি সেটাও বড় প্রশ্ন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy