অভিষেক কি পারেন? প্রশ্ন বিরোধীদের ফাইল চিত্র
শুক্রবারই গাঁধীমূর্তির পাদদেশে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ আন্দোলন ৫০২ দিনে পা রেখেছে। সেই দিনই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা খুশি। কারণ, ‘‘অত্যন্ত ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’’
আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি শহিদুল্লাহ্ বলেন, ‘‘স্যার (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) এবং শিক্ষামন্ত্রী (ব্রাত্য বসু) আমাদের সমস্যার প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক। তাঁরা আমাদের সাহায্য করার ১০০ শতাংশ চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আমরা খুশি।’’
এই ‘ইতিবাচক আলোচনা’ নিয়েই তৈরি হয়েছে নতুন রাজনৈতিক প্রশ্ন। বিরোধীদের বক্তব্য, চাকরির প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস দিতে পারে সরকার। দিতে পারে শিক্ষা দফতর। অভিষেক সরকারের কোনও পদে নেই। তিনি শাসকদলের একজন সাংসদ। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে তিনি সরকারি চাকরি পাওয়ার আশ্বাস দিতে পারেন কি? তৃণমূলের তরফে বলা হচ্ছিল, অভিষেকের সঙ্গেই ওই বৈঠকে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তিনি তো সরকারের প্রতিনিধি।
কিন্তু তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, অভিষেকের দফতর, যা আদতে দলীয় দফতর, সেখানে বসে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যই বা কী করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করলেন? শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্রাত্যের ওই বৈঠক করার কথা তাঁর সরকারি দফতরে।
বিরোধী বিজেপি এবং সিপিএম এমন প্রশ্ন তুললেও শাসক তৃণমূল প্রত্যাশিত ভাবে মনে করছে, এর মধ্যে ‘অন্যায় বা অস্বাভাবিক’ কিছু নেই। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের শাসকদলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এমন বৈঠক করতেই পারেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছিল এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনে পুরোভাগে-থাকা প্রতিনিধিদের। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যের উপস্থিতিতে নিয়োগ সংক্রান্ত দাবি এবং সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় অভিষেক এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে। বৈঠকের পর বেরিয়ে তাঁরাই জানান, ২০১৬ সালের এসএলএসটির প্রথম তালিকাভুক্ত সকলকে চাকরি দেওয়ার ১০০ শতাংশ চেষ্টা করবেন বলে বৈঠকে জানিয়েছেন অভিষেক। সেই সঙ্গে আগামী ৮ অগস্ট শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বৈঠকের ব্যবস্থাও করেছেন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগের ব্যবস্থা করার পরিপূর্ণ আশ্বাসও দিয়েছেন।
তবে ওই বৈঠক নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘সরকার এবং দলের মধ্যে যে একটা পার্থক্য রয়েছে, সেটাই তৃণমূল মানে না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও তা মানেন না। তাঁর দলও নয়। আসলে এটা আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা। আর শিক্ষামন্ত্রীও দলীয় দফতরে বসে চাকরির আশ্বাস দিতে পারেন না।’’
প্রায় একই সুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেন, ‘‘অসংবিধানিক বিষয়কে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়াই তৃণমূলের কাজ! অতীতেও এমন কাজ হয়েছে। নিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা দলীয় দফতরে হয়েছিল বলেই তো এত বড় দুর্নীতি হয়েছে। বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘরেও চাকরি বিলি হয়েছে। সেই রীতিই বহন করছেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী।’’
তবে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অভিষেকের বৈঠক বা সেখানে ব্রাত্যর উপস্থিতির মধ্যে কোনও ‘ভুল’ দেখছেন না প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘এর মধ্যে অন্যায় কী রয়েছে? শাসকদলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এমন বৈঠক করতেই পারেন। বাম আমলেও সমস্যা মেটাতে রাজনৈতিক পদাধিকারী অনেকে অনেক বৈঠক করেছেন। আর মন্ত্রী হলেও তো ব্রাত্য দলেরই লোক। তিনি দলীয় দফতরে আসবেন না কেন? এখানে তো কোনও সরকারি কাজ হয়নি। আলোচনাই হয়েছে।’’ বস্তুত, তৃণমূলের একাংশ মনে করছে, অভিষেক দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার পর আন্দোলনকারীরা ‘সন্তুষ্টি’ প্রকাশ করায় বিষয়টি বিরোধীদের হাতের বাইরে যেতে বসেছে। অভিষেক তথা শাসকদলের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে সমস্যা মিটে গেলে বিরোধীদের হাত থেকে এমন ‘হাতে গরম’ রাজনৈতিক বিষয় বেরিয়ে যাবে। সে কারণেই অভিষেকের মধ্যস্থতা নিয়ে তাদের আপত্তি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy