টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি আবাসনের তিনটি ফ্ল্যাটের একটিতে নাকি বিলাসবহুল ‘পেন্ট হাউস’ বানিয়েছিলেন পার্থ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
টালিগঞ্জের ডায়মন্ড সিটি আবাসনে প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাট। সেই ফ্ল্যাট থেকেই গত শুক্রবার নগদ ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু সেই আবাসনেই আরও তিনটি ফ্ল্যাট ‘বেনামে’ কিনেছিলেন পার্থ। এমন তথ্য হাতে পেয়েছে ইডি। আবাসনের বাসিন্দারাও বলছেন, অন্য নামে কেনা হলেও সেগুলি প্রাক্তন মন্ত্রীর বলেই জানেন তাঁরা। এর মধ্যে একটিতে নাকি বিলাসবহুল ‘পেন্ট হাউস’ বানিয়েছিলেন পার্থ।
পেন্ট হাউস সাধারণত বিলাস-ব্যসনের জন্য তৈরি করা হয়। পুরনোদিনে পেন্ট হাউসের একটি দেওয়াল ঢালু করে বানানো হত। এখন তেমন প্রায় করা হয় না। তবে পেন্ট হাউস সাধারণত হয় বহুতলের উপরে। যে বাড়িতে বিলাসের সমস্ত উপকরণ ঢালাও মজুত থাকে। আবাসন সূত্রের খবর, ১৯ এবং ২০ তলায় ওই তিনটি ফ্ল্যাটের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থাও রয়েছে।
অর্পিতা যে ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার হয়েছেন, সেটি-সহ চারটি ফ্ল্যাট নিয়ে আরও রহস্য রয়েছে। আবাসনের বিশেষ অ্যাপ-এ ওই চারটি ফ্ল্যাটের উল্লেখই নেই! তার ফলে ফ্ল্যাটে কে, কারা, কখন আসতেন-যেতেন তার তথ্য জানতে পারত না কেউই। আবাসন পরিচালন কমিটির কর্তারা বলছেন, তাঁরা কিছুই জানেন না। অনেক প্রশ্নের পর কমিটির সম্পাদক অমিতাভ ভট্টাচার্য শুধু বললেন, ‘‘বিচারাধীন বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’’ তবে আবাসনের বাসিন্দারা অমিতাভ কমিটির ‘সম্পাদক’ বলে জানালেও তিনি জানালেন, তিনি ‘অন্যতম ডিরেক্টর’।
তবে নাম গোপন রাখার শর্তে আবাসন পরিচালক কমিটির এক সদস্য শুক্রবার বলেন, ‘‘এখানে চারটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এর মধ্যে একটিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় থাকতেন। সেই ফ্ল্যাটটি টাওয়ার ২-এর ১-এ। সেখান থেকেই টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়। কিন্তু ওই টাওয়ারেরই ১৯ তলায় রয়েছে দু’টি ফ্ল্যাট। ১৮-ডি এবং ১৮-ই ফ্ল্যাট দু’টিকে এক করে এখন সেখানে রাখা রয়েছে পার্থর শখের সারমেয়দের। ওই ফ্ল্যাট থেকেই আবার উপরের তলায় ১৯-আই ফ্ল্যাটে যাওয়া যায়। সেটি বিলাসবহুল পেন্ট হাউস।’’
ওই কর্তা আরও জানিয়েছেন, দোতলার ১-এ ফ্ল্যাটটি এবং ১৯ তলার ১৮-ডি এবং ১৮-ই ফ্ল্যাটগুলি কেনা হয়েছিল বিভিন্ন সংস্থার নামে। প্রথমটির আসল মালিক ‘সেন্ট্রি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড’। ১৯তলার ফ্ল্যাট দু’টি ‘অ্যালকোভ রিয়েলটি প্রজেক্টস’ বলে একটি সংস্থার নামে। যেটিতে ‘পেন্ট হাউস’ বানানো হয়েছে, সেটির মালিক জনৈকা শর্মিষ্ঠা চৌধুরী।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সংস্থা বা ব্যক্তির নামে ফ্ল্যাটগুলি কেনা হয়েছে, তার সঙ্গে পার্থের ‘যোগাযোগ’ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্য দিকে, প্রশ্ন উঠেছে, আবাসনের অ্যাপ-এ এই চারটি ফ্ল্যাটের উল্লেখ কেন নেই। ডায়মন্ড সিটি সাউথের বাসিন্দারা ‘মাই গেট’ নামে একটি অ্যাপ ব্যবহার করেন। প্রত্যেক ফ্ল্যাট মালিককেই সেখানে নাম, কাজ, ফোন নম্বর-সহ যাবতীয় পরিচয় দিয়ে রাখতে হয়। আবাসনের এক বাসিন্দা শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে দেখান, প্রতিটি টাওয়ার অনুযায়ী অ্যাপ-এ সব ফ্ল্যাটের উল্লেখ থাকলেও ১-এ, ১৮-ডি, ১৮-ই এবং ১৯-আই ফ্ল্যাটের উল্লেখই নেই!
আবাসনের বাসিন্দারা জানান, ওই অ্যাপ-এর মাধ্যমেই সকলে জানতে পারেন, কোন ফ্ল্যাটে কে এবং কখন আসছেন। কারও বাড়িতে কোনও অতিথি বা ডেলিভারি বয় এলে নিরাপত্তারক্ষীরা ওই অ্যাপ-এর মাধ্যমেই বাসিন্দাদের তা জানান। বাসিন্দারা অনুমতি দিলে ঢোকার অনুমতি মেলে। বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্যই এমন অ্যাপ ব্যাবহার করা হয়। কিন্তু ‘মন্ত্রীর ফ্ল্যাট’ হিসাবে পরিচিত চারটি ঠিকানার কোনও কিছুই জানার উপায় ছিল না ওই অ্যাপ থেকে। এখনও নেই।
ওই অ্যাপ অবশ্য বলছে, আবাসন পরিচালন কমিটির সম্পাদক পদে রয়েছেন অনুজিত মুখোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে শুক্রবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আড়াই মাস আগেই কমিটি বদল হয়েছে। তবে কেন অ্যাপ-এ ওই চারটি ফ্ল্যাটের উল্লেখ নেই, তা বলতে পারবেন ‘মাই গেট’ কর্তৃপক্ষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy