প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়। ফাইল ছবি
মৌখিক বিবৃতি, চিঠির পরে চিঠি দেওয়ার পরে কাজ না হওয়ায় এ বার শক্তি প্রদর্শনের পথে হাঁটতে চলেছেন বঙ্গ বিজেপির বিক্ষুব্ধদের একাংশ। জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে চিন্তন বৈঠকে বসতে চলেছেন তাঁরা। উদ্যোক্তাদের দাবি, বৈঠকে থাকার কথা দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়, প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতি চন্দ্র বসু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী, এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল, উদ্বাস্তু শাখার প্রাক্তন আহ্বায়ক মোহিত রায়, রাজ্য বিজেপির নীতি-গবেষণা শাখার ইনচার্জ অম্বুজ মহান্তি, সংখ্যালঘু শাখার প্রাক্তন রাজ্য সহ-সভাপতি শামসুর রহমানের। থাকার কথা ‘অভিমানী’ বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডলেরও। আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে রীতেশ তিওয়ারি, রাহুল সিংহ, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুদের।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে ভাবে দলের দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হয়েছিল, তাতে ক্ষুব্ধ ছিলেন দলের আদি নেতারা। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নিশ্চিত না থাকায় সে সময় তাঁরা ভেতরে-বাইরে খুব বেশি প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরেই প্যান্ডোরার বাক্স খুলে যায়। মুকুল রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্জুন সিংহ, সব্যসাচী দত্তের মতো নেতারা ফের তৃণমূলে ফিরে যাওয়ায় আদি নেতাদের অভিযোগই অক্সিজেন পায়। সাংগঠনিক রদবদলের পরে নয়া রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়েন দলের একাধিক পুরনো নেতা। এতেই জ্বলতে থাকা আগুনে ঘি পড়ে। দিকে দিকে বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধদের চিহ্নিত করে দলীয় স্তরে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অনেকে বসে যান। কেউ কেউ দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। মূলত সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে সরানোর দাবি উঠতে থাকে। এমনকি, রাজ্য দফতরের বাইরেও বিক্ষোভ হয়। বিক্ষুব্ধেরা সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষকে একাধিক চিঠিও পাঠান। কিন্তু কিছুতেই কাজ না হওয়ায় এ বার একত্রিত হয়ে সমান্তরাল সাংগঠনিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিলেন বিক্ষুব্ধেরা।
সূত্রের খবর, বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রথমত, বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ ফলাফল হওয়ার পরেও কেন এক বারও তার বিশ্লেষণ হল না? দ্বিতীয়ত, নির্বাচনের পর থেকে কর্মীদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। তার পরেও কেন নেতারা কর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না? তৃতীয়ত, বাংলায় বিজেপির ভবিষ্যৎ কী? সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বারবার লড়াইয়ের বার্তা দিলেও কেন আন্দোলনে নামা যাচ্ছে না? এই নিয়ে বৈঠকে যা মতামত উঠে আসবে, তা রিপোর্ট আকারে পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে।
ইতিমধ্যেই বিজেপির বেশ কয়েক জন প্রাক্তন জেলা সভাপতি তলায় তলায় বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদ, হুগলি, হাওড়া ও উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলার নেতারা এই বৈঠকে আসার বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। প্রথমে উদ্যোক্তারা বৈঠকের জন্য ভারতসভা হল ভাড়া করার চিন্তাভাবনা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কালে বৈঠকে যোগ দিতে চাওয়া নেতা-কর্মীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মহাজাতি সদন ভাড়া করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। শামসুর বলেন, ‘‘আমরা দল-বিরোধী কোনও কাজ করছি না। দলের যাতে ভাল হয়, তাই এই উদ্যোগ। আমরা এই বৈঠকে প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, অমিতাভ চক্রবর্তীকেও আমন্ত্রণ করব।”
এই বৈঠকের পরিকল্পনা স্বীকার করে নিয়েছেন চন্দ্রবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘অনেক তো চিঠি দেওয়া হল, মতামত নেওয়া হল, কী লাভ হল? দেখা যাক এ বার যদি সবাই মিলে পাল্টা কোনও পথ বার করা যায়।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ ধরনের ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়। সম্পূর্ণ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দল নির্দিষ্ট গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বিষয়টি বিবেচনা করবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy