স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন শুক্রবার স্পষ্ট করে দিলেন তাঁর লক্ষ্যের কথা।
চাইলেই চাকরি হবে না। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগই আসল দাবি। সেই দাবিতেই আদালতে লড়াই। স্কুল নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ শুক্রবার স্পষ্ট করে দিলেন তাঁর লক্ষ্যের কথা। তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম মেনে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা হওয়া দরকার। তার মধ্যে যাঁরা মেধাতালিকায় উপর দিকে থাকবেন তাঁদেরই চাকরি হবে।’’
শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভ অনুষ্ঠান ‘অ-জানাকথায়’ যোগ দেন বিকাশরঞ্জন। সেই সময়ে দর্শকদের প্রশ্নেরও উত্তর দেন তিনি। তবে প্রশ্নের থেকে বেশি ছিল তাঁর কাছে অনুরোধ। চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেই একের পর এক মন্তব্যে বুঝিয়ে দেন তাঁরা বিকাশরঞ্জনের উপরে ভরসা করছেন। এমনকি এসএসসি পরীক্ষার মেধাতালিকায় যাঁরা ওয়েটিং লিস্টে রয়েছেন তাঁদেরও যাতে চাকরি হয় এমন আব্দার করতে থাকেন অনেকে। যা দেখে বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘সবাইকে নিয়োগ দাও এই দাবিটা তো আরও একটা দুর্নীতি।’’ সেই সঙ্গে জানান চাকরিপ্রার্থীদের এই দাবিকে তিনি সমর্থন করেন না। বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘সব ওয়েটিংকে নিয়োগ করবে কী করে? নিয়োগের তো একটা পদ্ধতি রয়েছে। নিয়োগের সময়ে যে বিজ্ঞপ্তি জারি হয় সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে।’’
এই দাবি নিয়ে একটি চালাকি হয়েছিল বলেও দাবি করেন বিকাশরঞ্জন। বলেন, ‘‘মামলা চলাকালীন একজন আমায় বলেন, রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে আমার কাছে নির্দেশ আছে, সবাইকে আমরা নিয়োগপত্র দিয়ে দেব, তুমি এই মামলা শেষ করে দাও। মানে দুর্নীতির তদন্ত দরকার নেই, সকলকে চাকরি দিয়ে দেওয়া হবে। আমি তাতে আপত্তি করি। তার মানে, আদালতকে ওরা আরও একটা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল। আদালত যখন একটা দুর্নীতিকে উন্মোচন করছেন, দুর্নীতির মূল সূত্রটা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছেন, তখন সবাইকে চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব মানে হচ্ছে আরও একটা দুর্নীতি।’’
চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে এই আশা তৈরি হওয়া নিয়ে বিকাশের দাবি, এই দুর্নীতি চক্রের বাইরে কেউ বের হতে পারছে না। সেই কারণেই কিছু মানুষের মধ্যে মিথ্যা আশা তৈরি হচ্ছে। দাবি উঠছে, ওয়েটিং লিস্টে থাকা সবাইকে চাকরি দিতে হবে। বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘আমি চাই সবাই চাকরি পান, কিন্তু সেটা মেধার ভিত্তিতে। এখনও বহু শূন্যপদ রয়েছে। সেই পদ পূরণ করার জন্য নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করুক সরকার। স্বচ্ছতার সঙ্গে। দেখিয়ে দিক, আমরা এই ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এই ভাবে গুণমান বিচার করছি। সরকারের এতে আপত্তি বা ভয়ের কী আছে?’’ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশাসনের অভিভাবক হিসাবে সরকারের নজর রাখা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গাঁধী মূর্তির পাদদেশে চাকরিপ্রার্থীদের যে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে তাতেও তাঁর মত নেই বলে জানান বিকাশরঞ্জন। তিনি সেই মঞ্চে বহু বার গিয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘‘তাঁরা স্বচ্ছতার সঙ্গে চাকরি চান। দরখাস্ত করলেই চাকরি পাবেন এটা কেউ চায় না।’’ একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, বিক্ষোভ দেখিয়ে কাজ হবে না। আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। মেধাতালিকার উপরে যাঁরা থাকবেন তাঁরাই যাতে চাকরি পান সেটা দেখার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন তৈরি হয়েছিল বলে দাবি করে বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘যাঁরা পাবেন না তাঁদের রাগ হতে পারে কিন্তু এটাও বুঝবেন যে, যাঁরা চাকরি পেল তাঁরা কেউ দশ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকরি পাননি।’’ রাজ্যের প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতার চাকরির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যোগ্যতার নিরিখে চাকরি না পাওয়ার জন্যই টাকা ফেরত দিতে হল। এটাই আইন। বিচারপতি সেই আইনটাকে কার্যকর করেছেন। বেআইনি পদ্ধতিতে যদি নিয়োগ হয়ে থাকে তবে সেটা প্রথম দিন থেকেই বেআইনি। সুতরাং, সেই কাজ থেকে কোনও ফসল তুমি পেতে পারো না। যোগ্য প্রার্থী তো চাকরি পেয়েছেন।’’
রাজ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া কেন চালু হচ্ছে না তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিকাশরঞ্জন বলেন, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায়িত্ব সরকারের। সরকার সেটা করছেন না। আমাদের সকলকে মিলে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। আসলে শিক্ষক নিয়োগ করলে বেতন দেওয়া এবং চাকরির পরের জীবনে পেনশন দেওয়ার মতো আর্থিক অবস্থা সরকারের নেই। সরকার আমাদের রাজ্যটাকে একেবারে ঋণে ডুবিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন ‘শ্রী’ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘কুশ্রী’ করে তুলেছেন।’’ এর জন্য রাজনৈতিক আন্দোলন দরকার বলে মন্তব্য করে বিকাশরঞ্জন জানান, এর সমাধান আদালতে হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy