অরুণাভ ঘোষ এবং বিকাশ ভট্টাচার্য। অরুণাভর সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিবাদ নিয়ে কিছু না বলতে চেয়েও, আইনজীবীদের কাজ নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন বিকাশ। ফাইল চিত্র
তাঁর সামনেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মধ্যে তুমুল বিতণ্ডা হয় হাই কোর্টে। গত বৃহস্পতিবার হওয়া সেই অস্বস্তিকর পরিবেশের সাক্ষী ছিলেন তিনি। কিন্তু তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতেই রাজি ছিলেন না আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। হাই কোর্টে শুনানি চলাকালীন গোলমাল থামানোর চেষ্টা করতেও দেখা যায় তাঁকে। একটা সময় চেষ্টায় কাজ হচ্ছে না দেখে এজলাস থেকে চলেও যান। শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনের ‘অ-জানাকথা’য় বিকাশকে প্রশ্ন ছিল, ওই দ্বন্দ্বকে কি আপনি সমর্থন করেন? প্রশ্ন শুনেই বিকাশ বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করব না। আমি আইনজীবী হিসাবে যে হেতু এই মামলায় রয়েছি তাই কোনও মন্তব্য করব না। এটা আমাদের আইন পেশার একটা সৌজন্যের ব্যাপার। সেটাকে আমি মেনে চলি।’’ তবে বলব না বলেও, এই প্রসঙ্গেই একজন আইনজীবী হিসাবে নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি যা মন্তব্য করলেন তা তাৎপর্যপূর্ণ। বিকাশের কথায়, ‘‘আমরা বিচারালয়ে যাই যুক্তি, তর্ক দিয়ে বিষয়টা বোঝানোর জন্য। এটাই আমাদের কাজ। এর বাইরে তো আমাদের কোনও কাজ নেই।’’
ঠিক কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার? হাসিমুখে ভিড় থিকথিকে এজলাসে আসেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সবাই উঠে দাঁড়ান। এর পরেই বিচারপতি বললেন, ‘‘আজ আমি মামলা শুনব না, শরীরটা ভাল না। অরুণাভ কোথায়?’’ তখনই গান গেয়ে ওঠেন অন্য আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়— ‘‘তুমি আসবে বলেই কোর্টে রুমে এত ভিড় হয়ে গেল...’’ এর পর অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে সুকন্যার আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আপনিও নাকি ভাল গান করেন!’’
এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। এজলাসে সে দিন খুবই ভিড় ছিল। যা দেখে অরুণাভ বলেন, ‘‘আদালত যেন ছাতুবাবুর বাজার হয়ে গিয়েছে। এত ভিড়!’’ এর পর পরই অরুণাভ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উদ্দেশে আচমকা বলেন, ‘‘আপনি আইন জানেন না। আপনাকে কী করে ডিল করতে হয় জানি। সাংবাদিকরা আপনার চেম্বারে যান। আপনি অনেক কথা বলেন।’’
নিমেষে উত্তাপ ছড়ায় এজলাসে। বিচারপতি তখন আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে জানান, এই ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা যাবে। তিনি বলেন, ‘‘লাইভস্ট্রিমিং করা যাবে না, সকলে ভিডিয়ো করতে পারেন।’’ তার পরেই অরুণাভের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনি তো সংবাদমাধ্যমে অনেক কিছু বলেছেন, এই নিয়ে রুল জারি করে জেলে পাঠাব। আমার শরীর ভাল না, আসতাম না। কিন্তু না এলে অনেকে ভাবতেন আমি ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছি। তাই এলাম।’’ অতীতেও এজলাসে অরুণাভ বনাম বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সব কিছু ছাপিয়ে যায়। দেখা যায়, অন্য দিকে দাঁড়িয়ে অরুণাভর উদ্দেশে ‘থামুন, থামুন’ বলে চিৎকার করে চলেছেন বিকাশ। কিন্তু প্রবল চেঁচামেচির মধ্যে বিকাশের গলা অরুণাভ পর্যন্ত পৌঁছয় কি না বোঝা দায় হচ্ছিল। আচমকাই অরুণাভ বিচারপতির উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার থেকে বেশি আইন বোঝেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।’’ এর কিছু ক্ষণ পরেই বিকাশকে এজলাস ছেড়ে চলে যেতে দেখা যায়।
শুক্রবার ‘অ-জানাকথা’ অনুষ্ঠানে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলেও মুখ খুলতে রাজি হননি বিকাশ। তিনি শুধু বলেন, ‘‘ঘটনা যা ঘটেছে তা ঠিক না ভুল তা আপনারা বিচার করবেন, সাধারণ মানুষ বিচার করবেন। আমরা বিচারালয়ে যাই যুক্তি, তর্ক দিয়ে বিষয়টা বোঝানোর জন্য। এটাই আমাদের কাজ। এর বাইরে তো আমাদের কোনও কাজ নেই।’’ ‘আমাদের’ বলতে তিনি যে আইনজীবীদের কথা বলেছেন তা স্পষ্ট। বিচারপতি বনাম আইনজীবী বিতণ্ডায় এর বেশি আর কিছু তিনি বলেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy