বাহিনীর অপ্রতুলতায় পঞ্চায়েত ভোটে নিরাপত্তা যে বিঘ্নিত হবে, সেই আশঙ্কা বিরোধীরা গোড়া থেকেই করছিলেন। সোমবার ভোটের দিন দেখা গেল, কোথাও এক জন বা দু’জন পুলিশ। যারা বুথে গোলমাল করতে এসেছিল, তারা পুলিশের উপরেও চড়াও হয়েছে। কোথাও পুলিশের বন্দুক কেড়ে নিয়ে গিয়েছে। কোথাও আবার পুলিশের সামনেই ব্যালট বাক্স আছড়ে ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন পুলিশকর্মী। কারও মাথা ফেটেছে। কারও চোখ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলার এক সাব ইন্সপেক্টরের প্রশ্ন, ‘‘আমাদেরই যেখানে নিরাপত্তার ঠিক নেই, সেখানে অন্যকে সুরক্ষা দেব কী করে?’’ বাঁকুড়ার রাইপুরের চাকা প্রাথমিক স্কুলের ১২৪ নম্বর বুথের একটি ঘটনার উল্লেখ করে দক্ষিণবঙ্গের এক থানার মেজবাবু বলেন, ‘‘এক দল দুষ্কৃতী শূন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে বুথে ঢুকে পড়ে। এক পুলিশকর্মীকে মারধর করে তাঁর এসএলআর ছিনিয়ে নেয়।’’
সূত্রের খবর, হুগলির পুরশুড়ার ডিহিরাতপুরে দুষ্কৃতীদের ছোড়া ইটের আঘাতে দুর্গাপুর ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের জওয়ান পবিত্র মণ্ডলের একটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ক্যানিং কাঁকড়াদহে বোমার স্প্লিন্টারে জখম হয়েছেন বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্মী অসিত পোড়েল। আক্রান্ত হন ক্যানিং থানার ওসি আশিস দাস। বাসন্তীর মাহেশপুরে একটি বুথে ব্যালট ছিনতাই আটকাতে গেলে হাঁসুয়ার কোপ পড়ে বিধাননগর কমিশনারেটের কনস্টেবল জয়ন্ত নস্করের মাথায়।
আরও পড়ুন:
‘অশান্ত বাংলায় নিহত গণতন্ত্র’, পঞ্চায়েত নিয়ে চড়া আক্রমণে মোদী
১৯ জেলায় ৫৭৩ বুথে আজ ভোট
উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার রামপুরে ব্যালট বক্স ভেঙে দেওয়ার পরে পুলিশ গেলে তাদের উপরে হামলা হয়। ইটের আঘাতে জখম হন এক সাব-ইনস্পেক্টর। অশোকনগরের রাজবেড়িয়া এলাকায় দুই পুলিশকর্মী বলাই ঘোষ, গোবিন্দ পাল ও সিভিক ভলান্টিয়ার রাজু ঘোষের মাথা ফাটে। কেষ্টপুরের গৌরাঙ্গনগরে এক পুলিশকর্মীর মাথায় ইট পড়ে। মুর্শিদাবাদের ভরতপুরে বুথ দখল ঠেকাতে গিয়ে নিগৃহীত হন এক পুলিশকর্মী। নদিয়ার তেহট্টের গোবিন্দপুরেও গোলমাল ঠেকাতে গিয়ে ইটের ঘায়ে জখম হয়েছেন কোতোয়ালির আইসি।
বুথ দখলের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বাঁকুড়ার খাতড়ার সুপুরে পথ অবরোধ হয়। পুলিশের গাড়ি গেলে তাকে ঘিরে ধরেন বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘বুথ দখলের সময় কোথায় ছিলেন?’’ ইট ছুড়ে গাড়ির কাচও ভেঙে দেন তাঁরা।
নবান্নের এক পুলিশকর্তার অবশ্য দাবি, ‘‘সোমবার পুলিশ উপযুক্ত ভূমিকাই পালন করেছে। তা না হলে আগের পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলির তুলনায় এ বছরের ভোট শান্তিপূর্ণ থাকত না।’’ পুলিশকর্মীদের আহত হওয়া প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা ওঁদের কাজের অঙ্গ।’’ রাজ্যের প্রাক্তন পুলিশকর্তারা অবশ্য পুলিশের ভূমিকায় অখুশি। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী নিরপেক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার বার্তা দিয়েছিলেন। এর পরে পুলিশের দ্বিধা থাকা উচিত ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy