সূর্যকান্ত মিশ্র
বহু বছরের স্বপ্ন, ছেলেটা বড় হয়ে কলেজে পড়াবে। আপাতত সে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় বর্ষ। অজানা কোনও ঠিকানা থেকে সেই ছেলেরই ফোন এসেছিল। ‘‘মা, তুমি যদি নাম তুলে না নাও, আমার পড়াশোনা এখানেই শেষ।’’ অগত্যা চোখে জল নিয়ে গন্তব্য বিডিও দফতর এবং প্রত্যাহারের কাগজে সই।
পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়েও ‘চাপের মুখে’ নাম তুলে নিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের কাঁকসার মুন্নি হাঁসদা। অভিযোগ, আদিবাসী ওই মহিলা সিপিএমের প্রতীকে লড়তে দাঁড়িয়েছেন খবর পেয়ে প্রথমে তাঁদের ঘরে হুমকি দেওয়া হয়। তাতে কাজ হচ্ছে না দেখে মোক্ষম চাল একেবারে হস্টেল থেকে তাঁর কলেজ প়়ড়ুয়া ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং তাকে দিয়েই মা-কে ফোন করানো। ব্যালটে এর পরে মুন্নির নাম থাকছে না। কিন্তু ময়দানে তিনি আছেন। দলের নেতাদের বলেছেন, বেইমানি করেছি, ভাববেন না। ছেলেটার মুখ চেয়ে প্রার্থী থাকতে পারলাম না। কিন্তু লড়াইয়ে আছি। ওই কাঁকসারই ছবি ওরাং আবার প্রার্থিপদ তোলেননি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে শাসক দলের মিছিলে হাঁটানো হয়েছিল। কিন্তু ফিরে এসে তিনি জানান দিয়েছেন, জোর করে রং তাঁর বদলানো যায়নি!
মু্ন্নি, ছবিরা সংখ্যায় এ বার কম। কিন্তু তাঁরা আছেন। পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে ‘উন্নয়নে’র তাণ্ডবের অভিযোগ এবং বিতর্কের আড়ালে তাঁরা দাঁত চেপে লড়ছেন। জীবিকা বিপন্ন, পরিবার সঙ্কটে। তবু তাঁরা আছেন। রাজ্য জুড়ে বিরোধীদের সংগঠনই এখন বেহাল। ব্যক্তির হিম্মতে ভরসা রেখেই বিরোধী নেতৃত্ব এ বারের পঞ্চায়েতে লড়াইটা টানছেন।
সিপিএমের মুন্নিদের মতো বিজেপির আছেন পশুপতি দেবসিংহ বা নিরাপদ মাহাত। চার পাশে গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধীরা যখন ‘নিরাপদ’ মনে করছে না নিজেদের, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদে তৃণমূলের রমাপ্রসাদ গিরির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন নিরাপদবাবু। জোর গলায় বলছেন, ‘‘বিনা লড়াইয়ে এক ইঞ্চি জমিও ছা়ড়ব না!’’
মুর্শিদাবাদের বানজেটিয়ায় মনোনয়ন নিয়ে গোলমালের জেরে দলীয় প্রতীকের ‘ফর্ম বি’ জমাই দিতে পারেননি ফুলি রায়। হাতের বদলে শেষমেশ জুটেছে মই। তাই নিয়েই লড়ে যাচ্ছেন ফুলি। জুঁই মণ্ডল, সোমা সাহা চন্দ্র বা মৌসুমী বেগমও মাথা নুইয়ে ময়দান ছাড়েননি।
এঁদের কারও কারও অভিযোগ পুলিশে এবং কমিশনে পাঠানো হয়েছে, আবার অনেকে পুলিশে যাওয়ার সাহস পাননি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বা বিজেপির দিলীপ ঘোষ বলছেন, শাসকের চোখ রাঙানির মধ্যেও যাঁরা লড়ে যাচ্ছেন, তাঁদের কুর্নিশ। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘বুক চাপড়ালেও বিরোধীদের সঙ্গে লোক নেই। এর মধ্যেও যে ক’জন আছে, আমরা চাই তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটে লড়ুন।’’
সংগঠনের জোর নেই, শাসক-প্রশাসকের পাল্লা বিপুল ভারী। তাঁদের লড়াই তো কঠিন? সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘লড়াই যদি কঠিন না হয়, তা হলে আর কী লড়লাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy