Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
State News

প্রত্যাশিত জয়, তবু পূর্ণগ্রাস হল না 

তৃণমূলের এই জয়ের রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এবং মাওবাদী মিলে একসঙ্গে লড়েছে। রাজনীতি আদর্শের উপরে হয়। এখানে কোনও আদর্শ নেই! তবু তৃণমূল ৯০% আসনে জিতেছে।’’

হরিপালে বিজয় উৎসব। ছবি: দীপঙ্কর দে

হরিপালে বিজয় উৎসব। ছবি: দীপঙ্কর দে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেল তৃণমূল। তবে দাপটের জয়ের মধ্যেও বেশ কিছু কাঁটা থাকছে তাদের জন্য।

যেমন, যে সব জায়গায় ভোটের দিনে প্রতিরোধ দানা বেঁধেছিল, সেখানে শাসক দলকে ধাক্কা দিয়েছে বিরোধীরা। তার সুফল কোথাও পেয়েছে বিজেপি, কোথাও নির্দল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়, বীরভূমের মহম্মদবাজার, মল্লারপুর, পূর্ব বর্ধমানের ভাতার, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার কিছু অংশ— এ রকমই নানা জায়গায় ছোট ছোট ধাক্কা খেতে হয়েছে তৃণমূলকে। বাংলায় পঞ্চায়েত ভোটের ইতিহাস বলছে, মুর্শিদাবাদ, মালদহ বা উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলায় এ যাবৎ বিরোধীদেরই দাপট বেশি থাকত। সেই প্রবণতা ভেঙে এ বার সব জেলাতেই তৃণমূলের একচ্ছত্র দাপট। তবু তার মধ্যেও জঙ্গলমহল বা উত্তরবঙ্গের চা-বলয়ের পঞ্চায়েতগুলিতে বিজেপি ভাল ফল করেছে। যা পরের লোকসভা ভোটের আগে চিন্তায় রাখবে তৃণমূলকে।

এ বার মনোনয়ন থেকে শুরু করে ভোট গণনা পর্যন্ত লাগাতার অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। পুরনো নজির ছাপিয়ে ভোটের আগেই ৩৪% আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে নিয়েছে শাসক দল। সন্ত্রাসের কারণেই প্রার্থী দেওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করে আদালতে গিয়েছে বিরোধীরা। সেই সব আসনের ফল ঘোষণায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০টি জেলায় বাকি যে সব আসনে ভোট হয়েছে, সেখানে প্রত্যাশিত ভাবেই তৃণমূলের পক্ষে ঝড় চলেছে বলা চলে। জেলা পরিষদের পূর্ণাঙ্গ চিত্র স্পষ্ট হতে শুক্রবার গড়িয়ে যাবে। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের যা ফল ঘোষণা হয়েছে, তাতে শাসক দলেরই আধিপত্য।

আরও পড়ুন: গণতন্ত্র আছে এখানে তাই ভোট সুষ্ঠু : মমতা

তৃণমূলের এই জয়ের রাজনৈতিক ব্যাখ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস এবং মাওবাদী মিলে একসঙ্গে লড়েছে। রাজনীতি আদর্শের উপরে হয়। এখানে কোনও আদর্শ নেই! তবু তৃণমূল ৯০% আসনে জিতেছে।’’

তৃণমূলের চেয়ে অনেক পিছনে থাকলেও তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে এই পঞ্চায়েতে যেমন বিজেপি উঠে এসেছে, তেমনই আবার নির্দল প্রার্থীদের সাফল্যও চোখে পড়ার মতো। এই নির্দলদের অধিকাংশই তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধ’। শাসক দলের মোকাবিলায় বহু এলাকায় নির্দলদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বিরোধীরা।

তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব মানছেন, নির্দলদের অধিকাংশই আদতে শাসক দলের। মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন, ফল ঘোষণার পরেই নির্দল এবং বিজেপি প্রার্থীদের অনেকে যোগাযোগ শুরু করেছেন। দলীয় সূত্রের খবর, ওই প্রার্থীদের জন্য তৃণমূল দরজা খোলা রাখতে পারে। প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করা যাবে অগস্ট পর্যন্ত।

বিরোধীদের মধ্যে বিজেপি স্বভাবতই এই ফলে তুলনামূলক ভাবে স্বস্তিতে। তাদের দাবি, তৃণমূলের ‘হিংস্র শক্তি’র মোকাবিলা করেও এই ফলাফল তাদের পক্ষে ইতিবাচক। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘আমরা দ্বিতীয়ই ছিলাম। এ বার তৃণমূলের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলব!’’

বাকি দুই বিরোধী বাম ও কংগ্রেসের ফল আরও শোচনীয়। আর তারা এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে অভিযোগ করে ফলাফল থেকে কোনও সিদ্ধান্তে যেতে চাইছে না। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র যেমন বলেছেন, ‘‘অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেনি। ‘রেজাল্ট’ নয়, গণতন্ত্রের প্রতি ‘রি-ইনসাল্ট’ হল! বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত তৈরি করে সাত বছরে মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম কথা রাখলেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিনই রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে বাংলায় রাষ্ট্রপতির অধীনে রাজ্যপালের শাসন (৩৫৫ ধারা) বা সরাসরি রাষ্ট্রপতির শাসন (৩৫৬ ধারা) জারি করার দাবি তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গণনা কেন্দ্রের মধ্যে ঢুকে ছাপ্পা দিয়ে বৈধ ভোটকে অবৈধ করা হচ্ছে! এই নির্বাচন প্রহসন। বাংলায় স্বাভাবিক রাজনীতির পরিস্থিতি ফেরাতে হলে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’’

তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আর উন্নয়নে বাধা— এই নিয়ে কেউ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে দাঁড়াতে পারেনি! পারবেও না!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE