স্বাস্থ্য সঙ্কটে উদ্বিগ্ন হয়েই মমতাকে চিঠি হর্ষ বর্ধনের।
রাজ্য জুড়ে স্বাস্থ্য-সঙ্কট নিয়ে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের মারধরের ঘটনায় গত তিন দিন ধরে উত্তাল কলকাতা-সহ গোটা রাজ্য। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও তার আঁচ পৌঁছেছে। আন্দোলনকারীদের সমর্থনে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন সমস্ত হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়েই এ দিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন হর্ষ বর্ধন। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে, চিকিৎসা কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মমতাকে অনুরোধ জানান তিনি।
চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে বাংলায় যে স্বাস্থ্য-সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তার জন্য শুক্রবার দুপুরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছিলেন হর্ষ বর্ধন। মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির জন্যই চিকিৎসকেরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার পরেই মমতার উদ্দেশে চিঠি লেখেন হর্ষ বর্ধন। তাতে তিনি লেখেন, ‘‘এনআরএস-এ ডাক্তারদের উপর হামলা এবং তা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে আপনাকে চিঠি লিখছি। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আন্দোলনে নেমেছেন রেসিডেন্ট ডাক্তাররা। ওপিডি পরিষেবা দিচ্ছেন না। এতে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে আসা রোগী এবং দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।’
এর আগে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে এনআরএস-এ আন্দোলকারীদের সঙ্গে কথা বলতে পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতে সমস্যার সমাধান না হওয়ায়, বৃহস্পতিবার নিজে এসএসকেএম-এ হাজির হন। কিন্তু মীমাংসায় আসার বদলে সেখানে অবিলম্বে কাজে না ফিরলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলে ডাক্তারদের হুঁশিয়ারি দেন তিনি। তাতে পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নেয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ‘নিরাপত্তার আশ্বাস’ পেলে তাঁরা আন্দোলন তুলে নিতে রাজি ছিলেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে বেঁকে বসেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন। তার পরেই আন্দোলন বিরাট আকার ধারণ করে। আন্দোলনকারীদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিদ্বজনেরা।
মুখ্যমন্ত্রীকে এই চিঠি দিয়েছেন হর্ষ বর্ধন। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: এ বার চিত্তরঞ্জন মেডিক্যালে ইটের ঘায়ে জখম জুনিয়র ডাক্তার, জরুরি বিভাগ বন্ধের হুঁশিয়ারি
আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার বদলে, এ ভাবে চারিদিকে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় চিঠিতে উদ্বেগও প্রকাশ করেন হর্ষ বর্ধন। তিনি লেখেন, ‘‘এই মুহূর্তে বাংলায় কোনও সমাধান চোখে পড়ছে না, বরং তা ক্রমশ তীব্র আকার ধারণ করছে। এমনাবস্থায় ডাক্তারদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখা দরকার। তাতে এই সঙ্কট কাটিয়ে বেরিয়ে আসা যাবে।’’
আরও পড়ুন: আন্দোলন চলছে, অন্যত্র দেখুন! মুখ ফেরাল হাসপাতাল
মমতার উদ্দেশে হর্ষ বর্ধন আরও লেখেন, ‘‘চিকিৎসকরা আমাদের সমাজের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। সারা পৃথিবীর মধ্যে তাঁরা শ্রেষ্ঠ। তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিদেশ সুনাম অর্জন করেছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অত্যন্ত চাপের মধ্যে কাজ করতে হয় তাঁদের। রোগীদের জন্যা সারা ক্ষণ সংগ্রাম করতে হয় তাঁদের। তাই কর্মক্ষেত্রে তাঁদের জন্য ভাল এবং নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। ডাক্তারদের গায়ে হাত তুললে, নিগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ডাক্তারদেরও রোগীদের সৌজন্য দেখানো এবং তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।’’ এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যক্তিগত ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্যোগীহতে অনুরোধ জানান হর্ষ বর্ধন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy