Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
সম্মেলন সিটুর

সমস্যা থেকে রেহাইয়ের পথ কী, নেই আলোচনা

সমস্যা চিহ্নিত হল। সম্পাদকমণ্ডলীর প্রতিবেদনে তা উল্লেখও করা হল। কিন্তু এক বারের জন্যও তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা হল না সম্মেলনে। সিটুর জেলা সম্মেলনের পরে এমন অভিযোগে সরব হয়েছেন সংগঠনেরই একাংশ।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০১:২২
Share: Save:

সমস্যা চিহ্নিত হল। সম্পাদকমণ্ডলীর প্রতিবেদনে তা উল্লেখও করা হল। কিন্তু এক বারের জন্যও তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নিয়ে আলোচনা হল না সম্মেলনে।

সিটুর জেলা সম্মেলনের পরে এমন অভিযোগে সরব হয়েছেন সংগঠনেরই একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, সমাধানের উপায় নিয়েই যদি আলোচনা না হয় তবে শুধু সমস্যার কথা স্বীকার করে লাভ কী? সিটুর জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য, “ত্রুটি খুঁজে বের করাই কঠিন। সমাধানের রাস্তা ঠিক বেরিয়ে যায়।”

দুর্গাপুরের সৃজনী প্রেক্ষাগৃহে সম্প্রতি শেষ হল সিটুর নবম জেলা সম্মেলন। প্রবীণ নেতা অজিত মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় নতুন জেলা সম্পাদক হলেন আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বংশগোপাল চৌধুরী। এ ছাড়া ওয়ার্কিং কমিটি, জেলা কাউন্সিলে বেশ কিছু নতুন মুখ আনা হয়েছে। সভাপতি পদে অবশ্য রয়ে গিয়েছেন বিনয়েন্দ্রকিশোরবাবু। সম্মেলনে নেতৃত্বের মধ্যে প্রকৃত শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর দাবি ওঠে। কিন্তু নতুন জেলা সম্পাদক বংশগোপালবাবুই সে দলে পড়েন না বলে সম্মেলন শেষে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংগঠনের একাংশ। তবে তাদের তার চেয়েও বেশি ক্ষোভ একাধিক শিল্পক্ষেত্রে সংগঠনের কার্যত অস্তিত্বহীন পরিস্থিতি নিয়ে। সম্পাদকমণ্ডলীর প্রতিবেদনেও সে কথা স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু তা সমাধানের জন্য কোনও আলোচনা হয়নি সম্মেলনে। সিটুর সদস্য-কর্মীদের একটি অংশের মতে, শুধু দুর্বলতা খুঁজে বের করেই দায়িত্ব ফুরোয় না। তা দূর করার রাস্তা খুঁজে বের করা বেশি জরুরি।

সিটু সূত্রের দাবি, শিল্পাঞ্চলে সিপিএমের সংগঠন অনেকাংশেই নির্ভরশীল সিটুর সংগঠনের উপর। রাজ্যে পালাবদলের পরে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। শাসকদলের সংগঠনের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সংগঠন ধরে রাখার মতো উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব বোধ করছেন নিচুতলার কর্মীরা। একের পর এক শিল্প সংস্থায় সিটুর হাত থেকে রাশ চলে গিয়েছে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের হাতে। শিল্পাঞ্চলে পরপর বিধানসভা ও লোকসভা আসন হাতছাড়া হয়েছে বামফ্রন্টের। সিটুর এ বারের সম্পাদকমণ্ডলীর প্রতিবেদনের ১৬তম পাতায় ‘চিহ্নিত যে দুর্বলতাগুলি কাটাতে হবে’ শীর্ষক অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, কাঁকসার তিন রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার তিনটি বড় টার্মিনাল রয়েছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘...এই সমস্ত কেন্দ্রে আমাদের সংগঠনের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।’ একই পরিস্থিতির কথা স্বীকার করা হয়েছে দুর্গাপুরে এক রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার বটলিং প্ল্যান্টের ক্ষেত্রেও। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দ্রত এই দুর্বলতা আমাদের কাটাতেই হবে।’ আসানসোল খনি অঞ্চলে দু’টি বেসরকারি বড় গ্যাস সংস্থা ‘কোল বেড মিথেন’ উত্তোলনের দায়িত্ব পেয়েছে। দুই সংস্থায় বহু কর্মী রয়েছেন। সম্পাদকমণ্ডলীর প্রতিবেদনে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, ‘এ ক্ষেত্রে সংগঠন গড়ার কাজে উদ্যোগ নেওয়া যায়নি।’ একই ভাবে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও সংগঠন গড়ায় সিটু উদ্যোগী হতে পারেনি বলে স্বীকার করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কিন্তু সিটু সদস্যদের একাংশের অভিযোগ, এ সব নিয়ে কার্যত কোনও আলোচনা হয়নি সম্মেলনে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটুর জেলা কাউন্সিলের এক সদস্য বলেন, “চিহ্নিত ক্ষেত্রগুলিতে সংগঠন গড়ার ভাল সুযোগ রয়েছে। ওই সব জায়গায় অন্য শ্রমিক সংগঠন নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি কাজে লাগানোর কোনও তত্‌পরতা আমাদের সম্মেলনে দেখা গেল না।” কাউন্সিলের আর এক সদস্য দাবি করেন, “সম্মেলনে স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে চলার প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, শ্রমিক সংগঠন পরিচালনায় গাছাড়া ভাব রয়েছে নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে। দুর্নীতির অভিযোগও বারবার উঠেছে। তিনি বলেন, “অথচ এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েও সে ভাবে আলোচনা হয়নি সম্মেলনে।”

সিটুর নতুন জেলা সম্পাদক বংশগোপালবাবু অবশ্য বলেন, “সম্মেলনে সার্বিক আলোচনা হয়েছে। যে সব সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে সেগুলি অবশ্যই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

subrata sheet durgapur citu convention
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy