Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
সিপিএমের জোনাল সম্মেলন

পার্টির নির্দেশ সার, সব কমিটি ভারাক্রান্ত বয়সে

তাদের উপরে আস্থা হারিয়ে মানুষ বেছে নিয়েছিল তৃণমূলকে। কিন্তু সাড়ে তিন বছরেই অনেকের মোহভঙ্গ হয়েছে বলে দাবি করছে বিরোধীরা। সারদা-সহ নানা কাণ্ডে বেকায়দায় পড়েছে শাসকদল। সেই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে সংগঠনের হাল ফেরানোর উপরে জোর দিয়েছেন সিপিএমের উচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু নিজেদের এক সময়ের দুর্গ বর্ধমান জেলাতেই সেই মতো গা ঝাড়া দিতে পারছে না তারা।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৩৫
Share: Save:

তাদের উপরে আস্থা হারিয়ে মানুষ বেছে নিয়েছিল তৃণমূলকে। কিন্তু সাড়ে তিন বছরেই অনেকের মোহভঙ্গ হয়েছে বলে দাবি করছে বিরোধীরা। সারদা-সহ নানা কাণ্ডে বেকায়দায় পড়েছে শাসকদল। সেই পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে সংগঠনের হাল ফেরানোর উপরে জোর দিয়েছেন সিপিএমের উচ্চ নেতৃত্ব। কিন্তু নিজেদের এক সময়ের দুর্গ বর্ধমান জেলাতেই সেই মতো গা ঝাড়া দিতে পারছে না তারা।

সম্প্রতি জেলায় দলের নানা লোকাল ও জোনাল সম্মেলন শেষ হয়েছে। লোকাল ও জোনাল স্তরে নতুন মুখ তুলে আনা, কমিটির আয়তন ছোট করা-সহ নানা নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল উচ্চ নেতৃত্বের তরফে। কিন্তু এখানে সে সব সংস্কার অনেকটাই অধরা রয়ে গিয়েছে বলে জেলা সিপিএম সূত্রের খবর। কী ভাবে উচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ মতো সংগঠন তৈরি করা যায়, ভেবে পাননি নেতারা।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় লোকাল কমিটি ১৩৫টি। তার মধ্যে ৫৮টিতে সম্পাদকের জায়গায় নতুন মুখ আনতে সমর্থ হয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। ২৭টি জোনাল কমিটির মধ্যে মাত্র ৮টিতে জোনাল সম্পাদক বদলেছে। বাকিগুলিতে রয়ে গিয়েছেন পুরনোরাই। দলীয় সূত্রে খবর, তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে কর্মীদের মধ্যে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও সেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অনেকে।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, বয়সজনিত কারণ, নিষ্ক্রিয়তা ইত্যাদি কারণে ৫টি জোনাল কমিটির সম্পাদক পদে বদল আনা হয়েছে। হিরাপুর জোনালে অশোক মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় দ্বীপায়ন রায়, দুর্গাপুর পূর্বে নরেন সিকদারের জায়গায় পঙ্কজ রায়সরকার, গলসিতে সৈয়দ হোসেনের জায়গায় কমল সরকার, ভাতারে বামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গায় প্রাক্তন বিধায়ক সুভাষ মণ্ডল ও কালনায় করুণা ভট্টাচার্যের জায়গায় সম্পাদক হয়েছেন সুকুল সিকদার। এ ছাড়া সম্পাদকের পদে তিন বার থাকার সময়সীমা পেরোনোর জন্য তিনটি জোনালে সম্পাদক বদল হয়েছে। আসানসোলে পার্থ মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় মনোজ মুখোপাধ্যায়, গুসকরায় অচিন্ত্য মজুমদারের বদলে স্বরণ হেমব্রম এবং কাটোয়ায় অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের জায়গায় তপন কোনার সম্পাদক হয়েছেন। বাকি সব জোনালে রয়ে গিয়েছেন আগের সম্পাদকই।

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বশেষ নির্দেশিকায় জানানো হয়, পার্টির স্বার্থে নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। বয়সজনিত কারণে কাজে গতি কমেছে, অথচ এখনও পরামর্শ দিয়ে পার্টিকে সমৃদ্ধ করতে পারেন তেমন প্রবীণ সদস্যদের কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রাখতে হবে। কিন্তু, দুর্গাপুর ইস্পাত জোনালের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম মানা হয়নি বলে অভিযোগ দলের কর্মীদের। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল কমিটিতে রয়েছেন এমন ৫-৬ জনের বয়স ৬০-৬৫ বছর। অথচ আমন্ত্রিত সদস্যদের অন্তত তিন জনের বয়স প্রায় ৫৫ বছর। এ নিয়ে ফেসবুকেও কিছু দলীয় কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

দলের কর্মীরা দাবি করেছেন, জোনাল সম্পাদক পদে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন তাঁদের বয়সও যথেষ্ট। একমাত্র দুর্গাপুর পূর্ব জোনালের সম্পাদক পঙ্কজবাবুর বয়স ৪২ এবং হিরাপুরের সম্পাদক দ্বীপায়নবাবুর বয়স বছর ৫০। বাকিরা সকলেই ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুর্গাপুরের এক সিপিএম সদস্য বলেন, “জোনাল সম্পাদক পদে কমবয়সি আরও নতুন মুখ আনতে হত। জোনাল কমিটিতেও সামিল করতে হত যুব সম্প্রদায়কে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি। তাই সাংগঠনিক কাজে যে খুব গতি আসবে, তা মনে হচ্ছে না।” আর এক জনের কথায়, “রাজ্যে পালাবদলের আগে থেকেই বহু জোনাল সদস্য কার্যত নিষ্ক্রিয়। সন্ত্রাসের এমন বহু ঘটনা ঘটেছে যেখানে স্থানীয় জোনাল সদস্যদের কেউ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়াতে যাননি। অথচ, পৌঁছে গিয়েছেন জেলা সম্পাদক। জেলা জুড়ে জোনাল কমিটির আরও বহু রদবদল দরকার ছিল।”

কমিটি আয়তনে ছোট করতে বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। দুর্গাপুর ইস্পাত জোনালে ১৭ জনের জায়গায় ২৩ জনের কমিটি গড়া হয়েছে। আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রয়েছেন আরও ৫ জন। কমিটিতে ঠাঁই হয়নি নতুন প্রজন্মের কারও। সাধারণত জোনাল সম্মেলনে জেলা কমিটি, জেলা সম্পাদকমণ্ডলী বা জেলার বাসিন্দা কোনও রাজ্য কমিটির সদস্য উপস্থিত থাকেন। সেখানে ইস্পাত জোনালের সম্মেলনে ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মদন ঘোষ। তা সত্ত্বেও বাকবিতণ্ডা এড়ানো যায়নি বলে দল সূত্রে জানা গিয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে গলসি ও বর্ধমান শহর জোনাল সম্মেলনে থাকতে হয়েছে দলের পলিটব্যুরো সদস্য নিরুপম সেনকে।

এই পরিস্থিতিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে বার্নপুরে শুরু হবে সিপিএমের জেলা সম্মেলন। বর্তমানে জেলা কমিটিতে ৮৪ জন রয়েছেন। কিন্তু রাজ্য কমিটি বলেছে, তা কমিয়ে ৭০ করতে হবে। সাধারণত, জোনাল সম্পাদকেরা জেলা কমিটিতে থাকেন। সেক্ষেত্রে নতুন ৮ জনকে জায়গা দিতে হবে। অর্থাৎ, রাজ্য কমিটির নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে অন্তত ২২ জন পুরনো সদস্যকে সরাতে হবে। এ ছাড়া দলের তরুণ প্রজন্মের চাপও রয়েছে। কী ভাবে তা করা যায় তা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে দলে। তবে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলছেন, “রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে নতুন জেলা কমিটি গঠনে কোনও সমস্যা হবে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

subrata sheet durgapur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy