নম্বর প্লেট ছাড়াই অবাধ যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।
কারও নম্বর প্লেট নেই। কেউ আবার অন্ধকারে পিছনের আলো জ্বালে না। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে এই ধরনের ডাম্পারের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। পথচলতি মানুষজনকে ধাক্কা মেরে অনায়াসে পালিয়ে যায় সেগুলি। বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ডাম্পারের অনিয়ন্ত্রিত চলাচলে রাশ টানতে সরকারের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। পরিবহণ দফতরের আশ্বাস, শীঘ্র এ ব্যাপারে অভিযানে নামা হবে।
শহরবাসীর দাবি, গত পাঁচ বছরে এই অঞ্চলে ডাম্পার চলাচল বেড়েছে কয়েক গুণ। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। শহরের বিভিন্ন অংশে নতুন-নতুন আবাসন তৈরি হচ্ছে। তার জন্য ইট-পাথর-বালি সরবরাহের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয় ডাম্পার। শিল্পাঞ্চলে বিভিন্ন কল-কারখানার জিনিসপত্র আনা-নেওয়ার জন্যও ডাম্পার ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এখন জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সে জন্যও প্রচুর ডাম্পার যাতায়াত করছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ডাম্পারগুলি এমনিতেই বেপরোয়া ভাবে যাতায়াত করে। প্রায় দিনই বিভিন্ন এলাকায় ডাম্পারের ধাক্কায় অনেকে জখম হচ্ছেন। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে গত এক বছরে ডাম্পারের ধাক্কায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে।
পথচারীদের অভিযোগ, বহু ডাম্পারকেই নম্বরপ্লেট ছাড়া চলাচল করতে দেখা যায়। গাড়ির অন্য কোনও অংশেও নম্বর লেখা থাকে না। ফলে, কাউকে ধাক্কা মেরে দ্রুত গতিতে পালিয়ে গেলে আর সেই ডাম্পারকে ধরার উপায় থাকে না। দিন কয়েক আগে দুর্গাপুরের বাসিন্দা শুভদীপ রায়ের মোটরবাইকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে চলে যায় একটি ডাম্পার। তিনি জখম হন। কিন্তু ডাম্পারটির নম্বরপ্লেট না থাকায় সেটি পুলিশকে জানাতে পারেননি বলে অভিযোগ শুভদীপবাবুর। বছরখানেক আগে শহরের ফুলঝোড়ের কাছে একটি ডাম্পার এক মোটরবাইক আরোহীকে ধাক্কা মারে। এলাকাবাসী ডাম্পারটি তাড়া করেও ধরতে পারেননি। নম্বরপ্লেট না থাকায় সেটিকে পরে আর ধরতে পারেনি পুলিশও। গত বছর অক্টোবরে এ রকমই একটি ডাম্পারের ধাক্কায় আহত হন কাঁকসার বাসিন্দা স্বদেশ সাহা। তাঁরও মোটরবাইকের পিছনে ধাক্কা মেরে চম্পট দেয় একটি ডাম্পার। স্বদেশবাবু দাবি করেন, “নম্বরপ্লেট ছিল না। নম্বর না দেখতে পাওয়ায় আর পুলিশের কাছে যাইনি। কারণ, অভিযোগ করলেও লাভ হত না। তবে এরকম বেপরোয়া ভাবে ডাম্পার চলাচল বন্ধ করতে প্রশাসনের নজর দেওয়া দরকার।”
সমস্যার এখানেই শেষ নয়। অনেক সময় লরি বা ডাম্পারের পিছনের আলো জ্বলে না। এর ফলে রাতের দিকে অনেক দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি নিত্যযাত্রীদের। তাঁরা জানান, দুর্গাপুর শহরে বেশির ভাগ রাস্তায় আলো থাকার জন্য তেমন অসুবিধা হয় না। কিন্তু জাতীয় সড়কের সব জায়গায় আলো থাকে না। সেখানে রাস্তার পাশে কোনও গাড়ির পিছনের আলো না জ্বললে দুর্ঘটনার রীতিমতো আশঙ্কা থাকে। এ দিকেও প্রশাসনিক নজরদারি দরকার বলে দাবি করেছেন গাড়ি-মোটরবাইক আরোহীরা।
পরিবহণ দফতরের এক অফিসার জানান, নম্বরপ্লেট ছাড়া ডাম্পারগুলির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে কি না, সে নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকি যাচ্ছে বলেও তাঁদের ধারণা। দুর্গাপুর মহকুমা পরিবহণ দফতরের আধিকারিক সজল মণ্ডল জানান, এ ব্যাপারে অভিযানে নামা হবে। পুলিশ-প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy