বিধানসভা ভোটের পরে তিন বছর পার। এর মাঝে দুর্গাপুর দেখে ফেলেছে আরও দু’টি ভোট। সবেতেই জয়ের ধারা ধরে রেখেছে তৃণমূল। কিন্তু পুরসভার ভোট ও শহর লাগোয়া গ্রামীণ এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটদু’ক্ষেত্রেই অনেক এলাকায় বিধানসভা ভোটের নিরিখে ভোটের হার কমেছে তৃণমূলের। আর এই তথ্যে আশায় বুক বাঁধছে বিরোধী দলগুলি। তৃণমূল নেতারা অবশ্য বলছেন, এতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বাকি দলগুলি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারানোয় ঢেলে ভোট পাবেন তাঁরাই, দাবি ওই নেতাদের।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে, দুর্গাপুর পুরসভার প্রথম ১০টি ওয়ার্ডের ফলাফল অনেকটাই তৃণমূলের অনুকূলে। বিধানসভার নিরিখে সেগুলির মধ্যে মাত্র দু’টি ওয়ার্ডে তাদের ভোট কমেছে। তবে বাকি ৩৩টি ওয়ার্ডের ২৪টিতেই ভোটের হার কমেছে ঘাসফুলের। এর মধ্যে ১৫ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৯%, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১৫%, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ১৬% শতাংশ ভোট কমেছে। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল পেয়েছিল ৫২.৪% ভোট। পুরসভায় তা দাঁড়ায় ৭.২ শতাংশে। এই ওয়ার্ডে দলের স্থানীয় নেতা অরবিন্দ নন্দীকে প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তিনি নির্দল হিসেবে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৩.২৫% ভোট পেয়ে জেতেন। পরে তিনি তৃণমূলেই যোগ দেন।
নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, অন্তত চারটি ওয়ার্ডে বিধানসভার নিরিখে পুরভোটে ভোট বাড়ে সিপিএমের। ১১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৬ শতাংশ। ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছিল সিপিএম। সেখানেও সিপিএমের ভোট সামান্য বাড়ে। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট বাড়ে প্রায় ৪%। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে দুর্গাপুর শহর লাগোয়া জেমুয়া পঞ্চায়েতেও কিছু জায়গায় ভোট বেড়েছে সিপিএমের। ওই পঞ্চায়েতের সব আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। তবে জেমুয়া গ্রামের তিনটি আসনে বিধানসভার নিরিখে যথাক্রমে ১৩.০৩ শতাংশ, ১৭.৮৭ শতাংশ এবং ৭.৬৭ শতাংশ বেশি ভোট পায় সিপিএম।
সিপিএমের নেতাদের দাবি, বিধানসভা ভোটের পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পুরভোট ও তার এক বছর পরে পঞ্চায়েত ভোটে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, শাসক দল নিজের ভোট ধরে রাখতে পারছে না। তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের’ পরেও বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু জায়গায় সিপিএমের ভোট বেড়েছে। তবে তা যথেষ্ঠ নয় বলে মেনে নিয়ে দলের এক জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, “তৃণমূলের ভোট কমেছে মানেই সে ভোট যে আমাদের ঘরে ঢুকছে, তা তো নয়। তবে পরিস্থিতি আশাব্যাঞ্জক। এই ভোট নিজেদের দিকে টানার জন্য আমরা পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচার করছি।” এই পরিস্থিতিতে ‘মোদী হাওয়া’য় তাঁদের বাক্সেও বেশি ভোট পড়বে বলে আশা করছেন বিজেপি নেতারা। পুরভোটে দুর্গাপুরে মাত্র ৪ শতাংশ ভোট পেলেও লোকসভায় তা অনেকটা বাড়বে বলে দাবি তাঁদের। দলের অন্যতম জেলা সম্পাদক অখিল মণ্ডলের দাবি, “এ বার প্রচারে বেশি সাড়া পাচ্ছি। ভোট তো বাড়বেই।”
তবে বিরোধীদের উল্লসিত হওয়ার কারণ দেখছেন না তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, পুরসভা বা পঞ্চায়েত ভোটে প্রথম চতুমুর্খি লড়াই হয়েছিল। ভোট ভাগাভাগির ফলে তৃণমূলের কিছু ভোট কমেছিল। তবে লোকসভায় সেই ভোট তাঁদের দিকেই ফিরে আসবে বলে দাবি অপূর্ববাবুর। তিনি বলেন, “প্রচারে যা সাড়া পাচ্ছি, তাতে বোঝা যাচ্ছে বাকিরা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই লোকসভায় আমাদের ভোট বাড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy