ইভটিজিং রুখতে নজর দিতে হবে সচেতনতা বাড়ানোয় শিল্পাঞ্চলের রাস্তায় ছাত্রীদের হেনস্থার বেশ কয়েকটি ঘটনার পরে এমনই মনে করছেন নানা স্কুল কর্তৃপক্ষ। রাস্তার পাশে জটলা করে দাঁড়িয়ে কটূক্তি করা থেকে ছেলেদের বিরত করা বা ইভিটিজিংয়ের শিকার হয়ে ছাত্রীরা যাতে হতাশায় না ভোগেন, তা নিশ্চিত করতে কাউন্সেলিংয়ে জোর দিতে চাইছে অন্ডাল-রানিগঞ্জের নানা স্কুল।
সম্প্রতি অন্ডালের উখড়ায় কটূক্তি জেরে এক ছাত্রী আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় সাত নাবালক-সহ আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেয়েটির পরিবারের দাবি অনুযায়ী, এই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল স্কুলে যাওয়ার পথে কটূক্তি থেকেই। বছর দেড়েক আগে রানিগঞ্জে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুল থেকে ফেরার পথে ধর্ষণের অভিযোগ হয়েছিল কয়েক জন যুবকের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল রানিগঞ্জ। নানা স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, স্কুল যাওয়া-আসার পথে ছাত্রীদের কটূক্তি সহ্য করা প্রায় রোজকার ঘটনা। কোনও বিপদ হলে তার পরে কিছু দিন পুলিশি টহল, নিরাপত্তার উপরে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু দিন কয়েক যেতে না যেতেই ফের এক চিত্র।
অন্ডালের নবম শ্রেণির ছাত্রীটি যে স্কুলে পড়ত, সেখানকার প্রধান শিক্ষিকা গীতা ভট্টাচার্যের মতে, বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েরা বিভ্রান্ত হয়ে নানা ভুল করে বসে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। দর্শনের এই শিক্ষিকার কথায়, “১৪ বছর এই স্কুলে রয়েছি। এর মধ্যে অন্তত ৩০ জন ছাত্রীকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাস্তা থেকে ফিরিয়ে এনেছি। এই সব ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে মেয়েদের কাউন্সেলিং করেছি। আমাদের অভিজ্ঞতা, অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কিছুটা বন্ধুর মতো মিশলেই সমস্যা অনেকটা বুঝতে পারেন। সমাধানও হয় সহজে।” তিনি জানান, স্কুলে সামনে এখন ছেলেদের ভিড় করতে দেখলেই পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তাতে সাময়িক সমস্যা মেটে। তবে পাকাপাকি সমাধানের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি।
রানিগঞ্জের বাসন্তীদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শ্রুতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, একাধিক বার পুলিশকে বিদ্যালয়ের সামনে ছেলেদের ভিড় করে থাকা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন তাঁরা। একটি অপ্রীতিকর ঘটনার পরে কয়েক জন পুলিশকর্মী স্কুল চালু ও ছুটির সময়ে মোতায়েন করা হত। বেশ কিছু দিন আর তাদের দেখা যাচ্ছে না ফের কোনও ইভটিজিংয়ের ঘটনা ঘটলে পুলিশে অভিযোগ করবেন বলে জানান তিনি।
উখড়ার ঘটনার পরে কাউন্সেলিং করে বোঝানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রানিগঞ্জ অঞ্জুমান বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইশরত আরা বলেন, “এটা একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রীদের বোঝাতে হবে, এমন ঘটনায় যাতে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। মেয়েদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে।” অন্ডাল বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তপতী ভট্টাচার্য জানান, বছরখানেক আগে তাঁদের স্কুলের সামনে ছেলেদের ভিড় লেগে থাকত। মোটরবাইক নিয়ে স্কুলের সামনে ঘুরে বেড়াত অচেনা যুবকেরা। পুলিশের সাহায্য নেওয়ায় ফল মিলেছে। স্কুল লাগোয়া ডাকঘরের কর্মী, ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও পাশে দাঁড়ানোয় এখন সমস্যা অনেকটা মিটেছে বলে জানান তিনি।
রানিগঞ্জের পুরপ্রধান অনুপ মিত্র বলেন, “এই সমস্যা শুধু এই এলাকা, সারা রাজ্যেই বাড়ছে। তা রুখতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ দরকার।” তৃণমূলের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক গোপাল আচার্য আবার দাবি করেন, “পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা কমছে। অনেক সময় আবার অভিভাবকরা সব জেনেও ব্যবস্থা নেন না। এ সবের জন্যই ইভটিজিংয়ের সমস্যা বাড়ছে।”
কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “ইভটিজিং রুখতে ইতিমধ্যে পুলিশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে।” তিনি জানান, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ‘ডায়াল ১০০’-র সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি নম্বর যোগ করা হয়েছে। এর ফলে একই সময়ে বেশি সংখ্যক খবর পাওয়া যাবে। ২০টি থানায় ‘আলফা কার’ নামে বিশেষ ধরনের গাড়ি রাখা হয়েছে, যেগুলি জিপিএস পদ্ধতির মাধ্যমে দ্রুত কোনও জায়গা চিহ্নিত করতে পারবে। মহিলা পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তাঁদের অনেকে সাধারণ পোশাকে এলাকায় ঘুরছেন। সুনীলবাবুর আশ্বাস, “খবর পাওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে আমরা যে কোনও জায়গায় পৌঁছে যেতে পারব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy