উপাচার্যের বাংলোর বাইরে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ কলেজের পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠন নিয়েও প্রকাশ্যে চলে এল টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে উপাচার্য পদাধিকারীদের নাম ঘোষণা করে বেরোতেই তাঁকে আটকে কয়েকজন টিএমসিপি-র ছাত্র ওই প্যানেল তিনি কোথা থেকে পেলেন এবং তাঁদের নাম কেন নেই সে প্রশ্ন করেন। উপাচার্য অবশ্য কোনও উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যান। ক্যাম্পাসে হাজির প্রচুর পুলিশ ও র্যাফ আটকে দেয় ওই পড়ুয়াদের।
রাজ কলেজেও কিছুদিন আগে ছাত্র সংসদ গঠন নিয়ে টিএমসিপি-র দ্বন্দ্ব বাধে। এক গোষ্ঠীর দেওয়া প্যানেলে নাম না থাকায় বিক্ষোভ দেখায় আরেক পক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিকেলের ওই অনুষ্ঠানে উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে খন্দকার আমিনূল ইসলাম, সভাপতি হিসেবে দীপক পাত্র, সহ-সভাপতি হিসেবে প্রদীপ বাজপেয়ী, ক্রীড়া সম্পাদক পদে প্রসেনজিৎ মাজি, সাংস্কৃতি সম্পাদক রিন্টু লায়েক ও সহ সম্পাদক হিসেবে সাদ্দাম হোসেনের নাম-সহ মোট ১৪ জনের নাম ঘোষণা করেন। অভিযোগ, বেরোনোর সময় কিছু ছাত্র তাঁকে আটকে বলেন, এই প্যানেল তাঁরা দেখতে চান। ওই প্যানেল তিনি কি করে পেলেন সে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। উপাচার্য অবশ্য বলেন, “এই কৈফিয়ত আমি দেব না। আমাকে ওই প্যানেল রাজ্য সভাপতি পাঠিয়েছে।” তখন টিএমসিপি নেতা তথা ক্লাস প্রতিনিধি মনোজ মাহাতো, অচিন্ত্য পণ্ডিতেরা উপাচার্যকে বলেন, “আপনি তো কোনও প্যানেল চাননি। প্যানেল ক্লাস প্রতিনিধিদের কাছ থেকে যাওয়ার কথা।” কিন্তু উপাচার্য তাঁদের কথার উত্তর না দিয়ে গাড়িতে চড়ে চলে যান। অনেকে গাড়ির পিছনে ছোটার চেষ্টা করলেও প্রচুর পুলিশ ও র্যাফ মোতায়েন থাকায় টিএমসিপি-র বিক্ষুদ্ধ নেতারা আটকে যান।
পরে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র বলেন, “আমার কাছে ১৪৪জন ক্লাস প্রতিনিধির সই একটি প্যানেল জমা পড়েছিল। আমি তা অনুমোদন করেছি।” তাঁর আরও দাবি, “ওই প্যানেলের কাগজ জমা দিয়েছিলাম ক্লাস প্রতিনিধিদের কাছে। উপাচার্যকে কোনও প্যানেল পাঠাইনি। তবে যে নামগুলি উনি ঘোষণা করেছেন, সেগুলি প্যানেলে ছিল।”
বিক্ষুব্ধ টিএমসিপি-র ক্লাস প্রতিনিধিদের অবশ্য অভিযোগ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অজয় দাসের নাম প্রস্তাব করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তাঁকে সোসাল ওয়েলফেয়ার সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি ঘোষণা শুনে হল ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেই গোলমাল শুরু হয়। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও নতুন প্যানেলে থাকা সভাপতি দীপক পাত্র বলেন, “ওই প্যানেল নিয়ে ক্ষোভ হওয়াই স্বাভাবিক। নিয়ম হল চারভাগের তিনভাগ ক্লাস প্রতিনিধিদের সমর্থন থাকতে হবে এবং নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও কনভেনারের সই থাকতে হবে। তবেই প্যানেল বৈধতা পাবে। ওই প্যানেলে সে সব ছিল কি না আমরা দেখতে পাইনি।” তাঁদের দাবি, “উপাচার্য একটি কাগজ বের করে নাম ঘোষণা করেই আবার তা পকেটে ঢুকিয়ে নেন। তাতে রাজ্য সভাপতির সই ছিল কি না তাও দেখতে দেওয়া হয়নি।” তবে নতুন সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আমিনূল ইসলাম ও টিএমসিপি নেতা অর্ণব মণ্ডলের দাবি, “যোগ্য লোকারাই নতুন প্যানেলে স্থান পেয়েছেন। এটাই রাজ্য সভাপতির পাঠানো প্যানেল।”
পরে রাতের দিকে বিক্ষুব্ধ ক্লাস প্রতিনিধিরা গোলাপবাগ থেকে রাজবাটিতে মিছিল করেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। প্যানেল বাতিল করার দাবিতে উপাচার্যের বাংলো ঘেরাও করেন তাঁরা। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অবশ্য পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy