বৈঠক শেষে মহকুমাশাসকের সঙ্গে দেখা করলেন বেশ কিছু চাষি। বুধবার ছবিটি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
জোরাজুরি নয়, আলোচনার ভিত্তিতেই প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকার ভিতরে চাষ বন্ধ করতে চায় কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন। জমির সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতেও চাষিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হবে। আজ, বৃহস্পতিবার কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখবেন বলে ঠিক হয়েছে।
বাম আমলে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হলেও এত দিন সেখানে দিব্যি চাষ করে এসেছেন চাষিরা। কিন্তু এ বার যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার কাজ শুরু করতে চাইছে এনটিপিসি। তার মধ্যেই কিছু চাষি চাষের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ায় মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে বিহিত চেয়েছিলেন গত ৫ জুলাই সংস্থার কাটোয়া প্রকল্পের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু।
বুধবার দুপুরে নিজের দফতরে এনটিপিসি-র প্রতিনিধি, পুলিশ, বিডিও, বিএলএলআরও এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানকে নিয়ে বৈঠক করেন মহকুমাশাসক। পরে তিনি বলেন, “প্রকল্প এলাকার মধ্যে কয়েক জন চাষ করছেন। তাঁদের আমরা চিহ্নিত করেছি। তাঁরা যাতে প্রকল্প এলাকার মধ্যে চাষ না করেন তার জন্য বোঝানো হবে।”
মহকুমাশাসককে লেখা চিঠিতে এনটিপিসি কর্তা জানিয়েছিলেন, পুরো প্রকল্প এলাকা প্রায় সাড়ে দশ কিলোমিটার। তার মধ্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার পাঁচিল দিয়ে ঘেরা নেই। আগামী অগস্টের মধ্যে তাঁরা ফাঁকা জায়গা ঘিরে নিতে চাইছেন। কিন্তু প্রকল্প এলাকার মধ্যে চাষ হওয়ার ফলে প্রকল্প এলাকা ঘিরতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর তার ফলে সেপ্টেম্বর থেকে তাঁরা যে কাজ শুরু করতে চাইছেন, তাতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বৈঠকে ঠিক হয়, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ বিএলএলআরও এবং পুলিশকে নিয়ে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখার সময়েই প্রকল্প এলাকার ভিতর চাষ না করার জন্য প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করবেন মহকুমাশাসক। পরে চাষিদের নিজের দফতরে ডেকে আলোচনাও করবেন তিনি। চাষিদের বক্তব্য শুনে সেই মতো পরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কাটোয়ায় ১৩২০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ার জন্য বিগত বাম আমলে অধিগৃহীত জমি ১১৬ কোটি টাকায় রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের (পিডিসিএল) থেকে কিনে নিয়েছে এনটিপিসি। আরও ২২০ একর জমি চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কেনার তোড়জোড় চলছে। তার মধ্যেই গত সোমবার থেকে অধিগৃহীত জমির সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি পুততে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি।
কিন্তু সেই খুঁটি ঠিক মতো পোঁতা হচ্ছে না বলে এ দিন বৈঠকের পরে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেন চাষিরা। কোশীগ্রামের বাসুদেব সাহা, আশুতোষ সাহাদের অভিযোগ, “আমাদের মতো অনেক চাষির জমি অধিগৃহীত না হওয়া সত্ত্বেও খুঁটি পুঁতে দখল করে নিচ্ছে এনটিপিসি। জমির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে গোলমাল পাকাচ্ছে।” সে প্রসঙ্গে শিবাশিস বসু বলেন, “আমারা বিশেষজ্ঞ কর্মীদের উপস্থিতিতে জমির সীমানা নির্ধারণ করছি। তা সত্ত্বেও ভুল হয়ে থাকলে আমরা তা সংশোধন করে নেব।”
স্থানীয় শ্রীখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়তের প্রধান দীপক মজুমদার বলেন, “আমি মহকুমাশাসকের বৈঠকেই চাষিদের সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখে মেটানোর দাবি জানিয়েছি। সেই সঙ্গে চাষিদেরও অধিগৃহীত জমিতে চাষ না করার জন্য অনুরোধ করছি।” মহকুমাশাসকও চাষিদের বলেন, “অধিগৃহীত এলাকায় চাষ করবেন না। লিখিত ভাবে জমির দাগ নম্বর ও মৌজা উল্লেখ করে আপনাদের সমস্যা জানান। আগামী সপ্তাহে চিঠি দিয়ে ডেকে আপনাদের বক্তব্য শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
মৃত্যুঞ্জয় সাহা, রাজকুমার সাহার মতো কিছু চাষি আবার অভিযোগ করেন, “আমরা এখনও অধিগৃহীত জমির ক্ষতিপূরণ পাইনি।” মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৭২ জন চাষি এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি। মহকুমাশাসক জেলার ভূমি অধিগ্রহণ দফতরকে শিবির করে বিষয়টি মেটাতে অনুরোধ করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy