শোকার্ত পরিবার। —নিজস্ব চিত্র।
ছেলে-মেয়েকে নিয়ে খালে স্নান করতে গিয়েছিলেন বাবা। হঠাৎই জোয়ারের জলের স্রোতে তলিয়ে যাওয়া মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হল বাবা-মেয়ে দুজনেরই। মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তমলুকের দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া এলাকার ষোলোফুকার গেটের কাছে রূপনারায়ণ নদী সংলগ্ন শঙ্করআড়া খালে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সৌমেন্দু জানা (৪৫) ও সুস্মিতা জানা (৯) আসানসোলের ডিপোপাড়ার বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার দোলের ছুটিতে তমলুকে শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন আসানসোল পুর নিগমের জল বিভাগের অস্থায়ী কর্মী সৌমেন্দুবাবু। তাঁর স্ত্রী কাকলিদেবী মেয়ে সুস্মিতা ও বছর ছয়েকের ছেলে কৃষ্ণেন্দুকে নিয়ে প্রায় এক বছর ধরে তমলুকে বাপের বাড়িতেই থাকতেন। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সুস্মিতা স্থানীয় দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। কাজের ফাঁকে প্রায়ই তমলুকে আসতেন সৌমেন্দুবাবু।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে একটা নাগাদ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে কিছু দূরে শঙ্করআড়া খালে স্নান করতে যান সৌমেন্দুবাবু। এ দিন রূপনারায়ণ নদীর জোয়ারের জলের স্রোত ষোলোফুকার গেট দিয়ে ভিতরে ঢোকায় শঙ্করআড়া খালে জলস্তরের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। কৃষ্ণেন্দুকে খালের পাড়ে দাঁড় করিয়ে বাবা-মেয়ে মিলে খালে স্নান করছিলেন। হঠাৎই জলের স্রোতে ডুবে যাচ্ছিল সাঁতার না জানা সুস্মিতা। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে তলিয়ে যান সৌমেন্দুবাবুও। সেই সময় খালে স্নান করতে এসেছিলেন মঙ্গল দাস নামে এক স্থানীয় যুবকও। কৃষ্ণেন্দুর চিৎকার শুনে জলে ঝাঁপ দিয়ে তিনি দু’জনকে তুলে আনেন। পরে সৌমেন্দুবাবু ও সুস্মিতাকে তমলুক জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।
ঘটনার পর ওই কলোনিতে গিয়ে দেখা যায় সৌমেন্দুবাবুর স্ত্রী কাকলিদেবী বাড়ির সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ঘটনায় আকস্মিকতায় কোনও কথা বলতে পারছে না ছোট্ট কৃষ্ণেন্দু। কাকলীদেবী বলেন, “ঘটনার কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত আমি গিয়ে দেখেছি বাবা-মেয়ে স্নান করছে। সাঁতার না জানায় আমি ওদের উঠে আসতে বলি। কিন্তু ওরা কথা শোনেনি। কিছুক্ষণ পরেই পাড়ার লোকজনের কাছে দুর্ঘটনার খবর পাই।” স্থানীয় বাসিন্দা বাসিন্দা মিনু চৌধুরী, সবিতা রায়রা জানান, দোলের ছুটিতে আসা সৌমেন্দুবাবু গত কয়েকদিন ধরেই এখানে ছিলেন। পাড়ার দোল উৎসবেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy