দুই মহকুমা জুড়ে রেশনে নিম্নমানের চাল মেলার অভিযোগ উঠছিল। উপভোক্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়ে দোকানে ভাঙচুর বা আরও কোনও বিপদের আশঙ্কাও করছিলেন ডিলারেরা। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গ এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা জেলা খাদ্য নিয়ামক দফতরকে সাফ জানিয়েদিলেন গুদাম থেকে নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হলে তা তুলবেন না রেশন ডিলারেরা।
তবে পাল্টা কৌশল নিয়েছে খাদ্য নিয়ামক দফতরও। কর্তারা জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির গুদাম থেকে চাল নিলে সরবরাহকারী সংস্থা ও রেশন ডিলারদের ‘ভাল চাল পাওয়া গেল’ বলে মুচলেকা দিতে হবে। জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধন পাঠক বলেন, “নিম্নমানের চালের বস্তাগুলি গুদাম থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাল চালের বস্তা রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই জানা যাবে কত বস্তা নিম্নমানের চাল মজুত ছিল।” আজ, শনিবার থেকে নিম্নমানের চালের বস্তাগুলি সরিয়ে ভাল চাল গুদামজাত করা হবে বলেও তাঁর দাবি। উপভোক্তাদের আশা, রেশন ডিলার ও খাদ্য নিয়ামক দফতরের টানাপোড়েনে সামনের সপ্তাহ থেকে তাঁরা তুলনামূলক ভাল চাল পাবেন।
শুক্রবার সকালে জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধনবাবু পশ্চিমবঙ্গ এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা কাটোয়ার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি পরিদর্শনে যান। সেখানে খাদ্য দফতরের ১১টি গুদাম রয়েছে। ওই গুদামে মজুত থাকা চালই কাটোয়া ও কালনা মহকুমার রেশন দোকানগুলিতে সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি নিম্নমানের চাল সরবরাহ করার জন্য কাটোয়া আরএমসি গুদামের এক পরিদর্শক ও পূর্বস্থলী ২ ব্লকের এক চাল সরবরাহকারী সংস্থাকে ‘শো কজ’ করেছে খাদ্য নিয়ামক দফতর।
জেলা খাদ্য নিয়ামক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া মহকুমায় রেশন ডিলার রয়েছেন ২৯২ জন এবং কালনায় রয়েছেন ২৭৮ জন। দুই মহকুমা মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক এপিএল উপভোক্তা রয়েছেন। আর বিপিএল উপভোক্তা রয়েছেন তিন লক্ষেরও বেশি। এ ছাড়া অন্ত্যোদয় যোজনায় রয়েছেন আরও দুই লক্ষ উপভোক্তা। ডিলারেরা জানান, অন্ত্যোদয় যোজনার অন্তর্ভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক উপভোক্তারা ২ টাকা মূল্যে ১ কেজি ২৫০ গ্রাম চাল পান। আর অন্য উপভোক্তারা রেশনে মাথাপিছু ৯ টাকা কিলোগ্রাম দরে ২৫০ গ্রাম করে চাল পান। তবে বেশ কয়েক মাস ধরেই নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হচ্ছে বলে ডিলাররা অভিযোগ তুলছিলেন। জেলা খাদ্য নিয়ামক দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে চালের বস্তা গুদামজাত হয়ে থাকাই এই সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
এ দিন সকালে চাল সরবরাহকারী, রেশন ডিলারদের সংগঠনের কর্তাদের নিয়ে গুদাম মজুত থাকা চালের বস্তাগুলি একের পর এক পরীক্ষা করেন সাধনবাবু। পরে দফতরের কর্মী ও ওই দুই সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও করেন। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের বর্ধমান জেলার সম্পাদক পরেশ হাজরা বলেন, “কাটোয়া ও কালনা মহকুমার কোনও ডিলার নিম্নমানের চাল তুলবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর পরেও কোনও ডিলার নিম্নমানের চাল তুলে উপভোক্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়লে তার দায়িত্ব সংগঠন নেবে না।” জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধন পাঠকও বলেন, “চাল সরবরাহকারী বা রেশন ডিলারকে চাল নেওয়ার পরে গুদাম পরিদর্শকের কাছে ‘আমি ভাল চাল নিলাম’ বলে লিখিত ভাবে জানাতে হবে। তাহলে আমরাও আর নিম্নমানের চাল সরবরাহ করার কোনও অভিযোগ শুনব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy