বেলকাশে মাঠে পড়ে রয়েছে আলু।
উৎপাদন ব্যপক, ফলে দাম তলানিতে ঠেকেছে বলে অভিযোগ তুলছিলেন আলুচাষিরা। কিছুদিন ধরে জেলার নানা জায়গায় বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। দাবি ছিল, সরকারকে দ্রুত আলু কেনার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বুধবার ঘোষণা করেন, সরকারের তরফে আলু কেনা শুরু হবে। এমনকী ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোয় যে নিষেধাজ্ঞা ছিল তা-ও তুলে নেন তিনি। কিন্তু ক্ষুদ্র চাষিরা কী ভাবে অন্য রাজ্যে আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন সে প্রশ্নও উঠছে।
বর্ধমান জেলার অধিকাংশ আলু চাষিদের দাবি, এ মরসুমে আলুর বস্তা প্রতি যে দাম পাচ্ছেন তাঁরা তাতে চাষের খরচ তো দূর, আলু হিমঘরে নিয়ে যাওয়ারও খরচ উঠছে না। বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভও দেখাতে শুরু করেছেন তাঁরা। বুধবার কালনা ১ ব্লকের লিচুতলা ও কালনা ২ ব্লকের সিঙ্গেরকোন এলাকায় রাস্তায় আলু ফেলে বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। বিডিওদের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয় সিপিএমের তরফে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে প্রগতিশীল আলু ব্যাবসায়ী সমিতির বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য তথা কালনা মহকুমা কমিটির সম্পাদক আনন্দ সাঁতরার আশ্বাস, “এত দিন ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিয়ে আলু কিনতে পারছিলেন না। এ বার ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় তাঁরা স্বতস্ফূর্ত ভাবে আলু কিনতে পাববেন। দাম বাড়ারও সম্ভবনা রয়েছে।”
এ জেলার শীতকালীন অর্থনীতি অনেকটাই আলু চাষের উপর নির্ভর করে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার ৭০ হাজার হেক্টরেরও বেশ জমিতে আলু চাষ হয়েছে। তার মধ্যে বর্ধমান সদরের দুই মহকুমা ও কালনায় চাষের পরিমাণ বেশি। সপ্তাহ খানের ধরেই আলু তোলার কাজ শুরু করেছেন চাষিরা। চাষিদের দাবি, সাধারণত মাঠ থেকেই সরাসরি ফড়েরা আলু কিনে নিয়ে যান। অথবা আলু হিমঘরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু এ বার মরসুমের শুরু থেকেই আলু মাঠে পড়ে থাকছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা জানান, গত বছর মাঠ থেকে তোলার পরে ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ৩৬০ টাকা দাম মিলেছিল। পরে তা পৌঁছেছিল ৪৪০ টাকা পর্যন্ত। ফলে এ বার আরও বেশি জমিতে আলু চাষ হয়। এমনকী অনেক নিচু জমি যেখানে মূলত ধান চাষ হয়, সেখানেও অনেক চাষিই এ বার আলু লাগিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার কোথাও দেড়শো টাকা কোথাও বা আর একটু বেশি ছাড়া দাম মিলছে না বলে চাষিদের দাবি।
কিন্তু এমন পরিস্থতি? বিশেষজ্ঞরা জানান, অতিরিক্ত ফলনই দাম কমার কারণ। তাঁদের দাবি, এ বার আলু চাষের শুরু থেকে ভাল শীত ছিল। রোগপোকার আক্রমণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হওয়ার ঘটনাও ঘটেনি। ফলে রাজ্য জুড়েই আলুর ফলন ভাল হয়েছে। তবে ভাল ফলনই মুশকিলের হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে চাষিদের একাংশের দাবি। জেলা কৃষি বিপণন দফতরও মেনে নিয়েছে অতিরিক্ত ফলনে আলু দাম কমে যাওয়ার কথা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানোর আশ্বাসও দেন তাঁরা। বর্ধমানের বেলকাশ গিয়ে দেখা গিয়েছে, মাঠে আলু স্তুপ করে রেখেছেন চাষিরা। অনেকের খেতে ওই আলু পড়ে রয়েছে দু-তিন দিন ধরেই। স্থানীয় বোধপুরের চাষি শেখ লালটুর দাবি, “১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ কিলো আলুর বস্তা। তাতেও খদ্দের নেই। তার উপর বস্তার দাম, মুটে ভাড়া, পরিবহণ খরচ গুণে আলু হিমঘরজাত করতেই ২০০ টাকা খরচ পড়ে যাচ্ছে।” চাষিদের দাবি, এখন আলুর যা দাম তাতে এক বিঘে জমির আলু বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৯৬০০ থেকে ১০০০০ টাকা। অথচ বিঘে পিছু আলু চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকার মতো। তাই মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে চাষিদের। অভাবি বিক্রি রোধে সরকার না এগিয়ে এলে বাঁচার কোনও উপায় নেই বলেও তাঁদের দাবি। চাষিরা জানান, বীজ, সার, প্রতিষেধক, মজুরি সবেরই খরচ বেড়েছে এবার। ফলে দাম না পেলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হতে পারে। অনেক চাষিই আলু বিক্রির টাকায় মহাজনের দেনা মেটান। দাম না পেলে ধারের বোজা বাড়বে বলেও তাঁদের আশঙ্কা। এ পরিস্থিতিতে সরকারের তরফে আলু কেনার আশ্বাস দিয়েছেন কর্তারা সকলেই।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা শুনে কৃষক সভার নেতা আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের কটাক্ষ, “যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চপ, ফুলুরি বিক্রি করে দশতলা বাড়ি তৈরির কথা বলেন, সেখানে এ ঘোষণা স্বাভাবিক।” তাঁর দাবি, “ক্ষুদ্র চাষির পক্ষে একা ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। সরকারকেই এ দায়িত্ব নিতে হবে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “ধান, আলু কিছুই বিক্রি হচ্ছে না। চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় ইউরিয়াও মিলছে না। অথচ জেলা প্রশাসন বলছে সারের কোনও সমস্যা নেই।”
যদিও সারের সমস্যার কথা মানতে চায়নি জেলা প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy