বাড়ির ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে আকাশ ভেঙে পড়েছিল তাঁদের মাথায়। তবে মাঝে খানিকটা স্বস্তি মিলেছিল একটি প্রতিশ্রুতিপত্রে। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সেই প্রতিশ্রুতিও ভেঙে গিয়েছে। ইস্কোয় দুর্ঘটনায় মৃত চার শ্রমিকের পরিবারে এখন শুধু সব কূল হারানোর যন্ত্রণা। কী ভাবে দিন চলবে, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।
৬ মে ইস্কোর স্টিল মেল্টিং বিভাগে গলানো লোহা ছিটকে পড়ায় মৃত্যু হয় পাঁচ ঠিকা শ্রমিকের। কর্মস্থলে শ্রমিক নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকার জেরেই এমন ঘটেছে অভিযোগে সরব হয় নানা শ্রমিক সংগঠন। ইস্কো কর্তৃপক্ষ তার পরেই মৃত শ্রমিকদের পরিবারগুলিকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন, প্রত্যেকের এক পরিজনকে চাকরি দেওয়া হবে।
কিন্তু শনিবার সংস্থা কর্তৃপক্ষ সেই আশ্বাস থেকে সরে এসে জানান, একমাত্র শেখ শাহনওয়াজের পরিবারকে চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু মৃত শ্রমিক সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কর নাগ, আশিস সাউ ও আশিস সিক্কার স্ত্রী-সন্তান না থাকায় তাঁদের কোনও নিকটাত্মীয়কে চাকরি দেওয়া হবে না। শুধু পরিবার পিছু আট লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ইস্কো কর্তৃপক্ষের এই ঘোষণার পরেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে। আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে নানা সংগঠন।
বার্নপুরের সূর্যনগর কলোনিতে থাকেন মৃত সন্দীপবাবুর মা সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘আমার একমাত্র রোজগেরে ছেলে মারা গিয়েছে। ওরা (ইস্কো) আমার মেয়েকে চাকরি দেবে বলেছিল। এ বার সেই আশাটুকুও গেল। চাকরি না পেলে অনশনে বসব।’’ ছোট এক কামরার ঘরে অশীতিপর মাকে নিয়ে থাকতেন শঙ্কর নাগ। বয়সের ভারে চলতে পারেন না মমতাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আমি চাইলে নিকটাত্মীয় হিসেবে জামাইয়ের নাম দিতে পারি, বলেছিল সংস্থা। কিন্তু এখন বলছে চাকরি দেবে না। কী খাব, কোথায় থাকব বুঝতে পারছি না।’’
আশিস সিক্কার পরিবার। বার্নপুরে।
দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল আশিস সিক্কার। ছেলের বিকৃত দেহ দেখে শিউরে উঠেছিলেন মা সংযুক্তা সিক্কা। এখন পরিবারের কারও চাকরি পাবেন না শুনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার বড় ছেলে চাকরি পাবে ভেবেছিলাম। আমরা টাকা চাই না, চাকরি চাই। না হলে চলবে কী ভাবে!’’ বার্নপুরের ৮ নম্বর বস্তিতে একটা ঝুপড়ি ঘরে ছোট ছেলেকে নিয়ে থাকেন আশিস সাউয়ের মা মধুকুমারীদেবী। ছেলের মৃত্যুর খবরে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ছোট ছেলের চাকরি হবে। চাকরি না হলে সংসারটা বাঁচবে না।’’
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ক্ষতিপূরণ বাবদ মৃতদের পরিবারকে এখনও পর্যন্ত পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন। শনিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা স্থানীয় সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় ইস্কোর আধিকারিকদের নিয়ে মৃতদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সেই টাকার চেক পৌঁছে দেন। পরিবারের সদস্যেরা চাকরির দাবিতে সেই চেক ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য মন্ত্রীর অনুরোধে চেক নিয়েছেন। তবে চাকরির দাবিতে অনড়ই রয়েছেন তাঁরা। যদিও ইস্কো কর্তৃপক্ষ জানান, চাকরি নয়, ক্ষতিপূরণ দেওয়ারই সিদ্ধান্ত হয়েছে পরিবারগুলিকে।
— নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy