Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

টিউশন নয়, শিক্ষকদের মুচলেকা দিতে নির্দেশিকা

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের টিউশনের রমরমা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপানউতোর চলছে জেলায়। মাসখানেক আগে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির তরফে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের আবেদন করা হয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

স্কুল শিক্ষকদের টিউশন বন্ধ করতে উদ্যোগী হল পশ্চিম বর্ধমান জেলা শিক্ষা দফতর। সম্প্রতি জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয় পাল প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ করেছেন, তাঁরা যেন সহ-শিক্ষকদের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেন, স্কুলের শিক্ষকেরা কোনও ভাবেই টিউশন করতে পারবেন না। শিক্ষকদের কাছ থেকে এই মর্মে মুচলেকাও নিতে হবে। চিঠি পাওয়ার পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকারা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তার বিশদ রিপোর্ট সাত দিনের মধ্যে জেলা স্কুল পরিদর্শককে পাঠানার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের টিউশনের রমরমা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই চাপানউতোর চলছে জেলায়। মাসখানেক আগে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির তরফে জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপের আবেদন করা হয়েছিল। অনেক অভিভাবকও অভিযোগ করেন, জেলায় এমন বেশ কিছু শিক্ষক আছেন, যাঁদের স্কুলে পড়ানোর তুলনায় টিউশনেই বেশি মনোযোগ। কয়েকজন গৃহশিক্ষকেরও অভিযোগ, পরীক্ষার খাতায় কিছু নম্বর বেশি পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে স্কুল শিক্ষকদের একাংশ টিউশনের ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন। বিভিন্ন মহলে এ রকম অভিযোগ উঠতে শুরু করায় উদ্যোগ শুরু হয়েছে বলে জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।

যদিও স্কুল শিক্ষকদের অনেকেরই দাবি, তাঁরা মোটেই টিউশন করতে চান না। কিন্তু অনেক অভিভাবক এত জেদ ধরেন যে তাঁরা পড়াতে বাধ্য হন। অভিভাবকদের অনেকের মতে, স্কুলের শিক্ষকেরা বোর্ডের খাতা দেখেন। তাই তাঁরা জানেন, কোন প্রশ্নের উত্তর কী ভাবে লিখলে বেশি নম্বর পাওয়া সম্ভব। তাই তাঁরা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে সন্তানদের টিউশনে পাঠান।

এই যুক্তি, পাল্টা যুক্তির মাঝেই সোমবার জেলার প্রত্যেক স্কুলে চিঠি পাঠিয়ে শিক্ষকদের টিউশন বন্ধে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর। জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয়বাবু বলেন, ‘‘এটা নতুন কিছু নয়। সরকারের এই নির্দেশনামা আমরা আর এক বার স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্মরণ করিয়েছি।’’ তিনি জানান, মঙ্গলবার থেকে স্কুলের প্রধানেরা রিপোর্ট পাঠাতে শুরু করেছেন। বারাবনির একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ উপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশ তো মানতেই হবে। নির্দিষ্ট সময়েই রিপোর্ট পাঠাব।’’

জেলা শিক্ষা দফতরের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাল পদক্ষেপ। আমরা জেলা শিক্ষা দফতরকে এ বিষয়ে ভেবে দেখার অনুরোধ করেছিলাম।’’ তাঁর দাবি, এই ব্যবস্থা কড়া ভাবে পালিত হলে স্কুলের পঠনপাঠনের উন্নতি হবে। এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ।

আসানসোলের একটি স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সাউ অভিযোগ করেন, অনেক স্কুলশিক্ষক টিউশন করেন বলে পড়ুয়ারা স্কুলে যায় না। এই প্রথা বন্ধ হলে স্কুলে পড়ুয়াদের উপস্থিতি বাড়বে। প্রাক্তন শিক্ষক প্রদীপ মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘বামফ্রন্টের আমলে প্রথম এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। জেলা শিক্ষা দফতরের পদক্ষেপ ভাল। তবে প্রতি স্কুলে সব বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগও অত্যন্ত জরুরি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education Tuition Burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy