মার্কশিট হাতে উমারানী গরাই মহিলা কল্যাণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। শুক্রবার আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
মাধ্যমিকের ১১৮ জনের মেধাতালিকায় পশ্চিম বর্ধমানের এক জন ছাত্রছাত্রীও জায়গা পায়নি। শুধু তাই নয়, গত বারের তুলনায় পাশের হার কমেছে চার শতাংশেরও বেশি। ঘটনা হল, গত বার পাশের হারে বিভিন্ন জেলার নিরিখে, রাজ্যে শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় হয়েছিল পশ্চিম বর্ধমান। এ বার শেষ দিক থেকে চতুর্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অত্যন্ত চিন্তায় জেলার শিক্ষক মহল। কেন এই পরিস্থিতি, তা নিয়ে শুরু হয়েছে কাটাছেঁড়া। মূলত তিনটি কারণ সামনে আনছেন শিক্ষকেরা।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-এ রাজ্যে মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ১০০ শতাংশ। ২০২২-এ পশ্চিম বর্ধমানে তা ছিল, ৭৮.৮২ শতাংশ। এ বার সেটাই হয়েছে ৭৪.১৫ শতাংশ। মেধাতালিকায় ২০২১-এ প্রথম, ২০২২-এ তৃতীয় ও ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিল জেলার ছেলেমেয়েরা। এ বার কেউ নেই।
এই অবস্থার জন্য কয়েকটি কারণ উঠে আসছে। প্রথমত, আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্বামী ভারূপানন্দ মনে করছেন, “কোভিড পরবর্তী সময় থেকে পড়াশোনায় ঘাটতি হয়েছে। এ বারেও সেটাই ঘটেছে। মেধাকে যত্ন করার ক্ষেত্রে অনেক খামতি রয়েছে।” পাশাপাশি, পড়ুয়াদের মোবাইল-আসক্তি কাটানোর জন্য অভিভাবকদেরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। দ্বিতীয়ত, বারাবনির আরকেএস ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় দায়ী করছেন সরকারের নীতিকেই। তাঁর ক্ষোভ, “শিক্ষকদের বিভিন্ন সরকারি কাজ এত বেশি করানো হচ্ছে যে, তাঁরা ছাত্র পড়ানোর উৎসাহ হারাচ্ছেন। এর ফলে সবার ক্ষতি হচ্ছে। সরকার-পোষিত স্কুলগুলির শিক্ষকদের শুধুমাত্র পড়ানোর কাজেই ব্যবহার করা হোক।” তৃতীয়ত, নবম শ্রেণি থেকে মেধাবী পড়ুয়াদের বাড়তি ক্লাস একাংশের বাধায় করানো যায়নি বলে সমস্যা হয়েছে বলে মনে করছেন উমারানী গরাই মহিলা কল্যাণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) পাপড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সংযোজন: “বিষয়টি নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলব। টিউশন নেওয়া হলেও স্কুলে বাড়তি ক্লাস করা খুবই দরকার। কারণ, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষার খাতা দেখেন। কী ভাবে বেশি নম্বর তোলা যায়, তাঁরা তা খুব ভাল করে জানেন। তাঁরা পড়ুয়াদের প্রয়োজন অনুযায়ী সতর্ক করতে পারবেন।”
বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। জেলার মাধ্যমিকের ফলাফল জানার পরেই জেলা শিক্ষা দফতরের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করেছিলেন বলে জানান পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি রাজীব মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগে যৌথ কনভেনশন ডেকে বিস্তারিত পর্যালোনা করে খামতি দূর করার প্রস্তাব দিয়েছি। জেলায় ইংরেজিমাধ্যমের পড়ুয়ারা ভাল ফল করলেও মাধ্যমিকে তা হচ্ছে না কেন, সেটা ভেবে দেখা উচিত।” পাশাপাশি, এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক অমিতদ্যুতি ঘোষ জানান, ২২ মে তাঁরা সাংগঠনিক ভাবে আলোচনা করবেন। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব ঠিক করে প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। এ দিকে, বিজেপির শিক্ষা সেলের জেলা আহ্বায়ক বিকাশ বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়া, “জেলায় বহু স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। শিক্ষার মান অত্যন্ত নেমে গিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিয়োগ-দুর্নীতি। বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে তুলে ধরতে ইচ্ছা করে সরকার এই পরিস্থিতি তৈরি করছে।” যদিও, এই অভিযোগে আমল দেননি রাজীব।
শিক্ষা দফতরের জেলা আধিকারিক তমোজিৎ চক্রবর্তী জানান, বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। শিক্ষা দফতর ও বিভিন্ন স্কুলের প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দিষ্ট কিছু পরিকল্পনা করা হবে। পড়ুয়াদের পঠনপাঠন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান এবং স্কুলের পাঠাগারগুলির উন্নতির আশ্বাস দিয়েছেন তমোজিৎ। পাশাপাশি, অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা) সঞ্জয় পালের বক্তব্য, “শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy