Advertisement
E-Paper

ছেলে ‘বেকার’, ছেনি-হাতুড়ি নিয়ে হাল ধরছেন বৃদ্ধ

ভবেন্দ্রনাথের ছেলে লিটন মণ্ডল কালনা পূর্ব চক্রের নতুনগ্রাম হাইস্কুলে শিক্ষাকর্মী হিসেবে ২০১৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৫ ১০:১১
Share
Save

ছেলে চাকরি পাওয়ায় নিজের কাজ ছেড়ে দিয়েছিলেন পেশায় কাঠমিস্ত্রি ভবেন্দ্রনাথ মণ্ডল। গত কয়েক বছরে শরীর অশক্ত হয়েছে। চার বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি চলে গিয়েছে ছেলের। বাধ্য হয়ে ফের কাঠের কাজে হাত লাগিয়েছেন তিনি। সংসারের জোয়াল টানতে, ছেলেমেয়েদের স্কুলের খরচ জোগাতে তাঁর পুত্রবধূও সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছেন।

ভবেন্দ্রনাথের ছেলে লিটন মণ্ডল কালনা পূর্ব চক্রের নতুনগ্রাম হাইস্কুলে শিক্ষাকর্মী হিসেবে ২০১৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন। স্কুল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে নাদনঘাটের চর গোপালপুরে তাঁর বাড়ি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তিনি বেকার। ফের কী ভাবে লড়াই শুরু করবেন, সেটা ভেবেই আতান্তরে পড়েছেন লিটন। তাঁর কথায়, “ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছে দিতে পারছি না। কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। আবার বাড়িতেও থাকতে ইচ্ছা করছে না। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কী জানি না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যোগ্যরাও অযোগ্য হয়ে গেল!”

চাকরি পাওয়ার পরে বাড়ি সংস্কার করেছিলেন লিটন। ব্যাঙ্কে এখনও সেই বাবদ সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। মা-ও অসুস্থ। ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর। লিটন জানান, প্রতি মাসে তিন-চার হাজার টাকা শুধু ওষুধের খরচ। এ ছাড়াও ব্যাঙ্কের কিস্তি শোধ রয়েছে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে। তাঁর কথায়, ‘‘পুরো সংসারের ভার আমার উপরে। বইয়ের সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক বছর সম্পর্ক নেই। ফের নিয়োগ হলেও নতুনদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কী ভাবে পারব?” মাধ্যমিকে প্রথম ডিভিশনে পাশ করেছিলেন লিটন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা অনার্সে উত্তীর্ণ হয়ে নাদনঘাট থানায় সিভিক ভলেন্টিয়ার হিসাবে যোগ দেন। তখন থেকেই বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসতে থাকেন। খাদ্য দফতরের সাব-ইনস্পেক্টর, দক্ষিণ ২৪ পরগণায় পঞ্চায়েতের পরীক্ষা, রেল সুরক্ষা বাহিনী বা আরপিএফের লিখিত পরীক্ষায় পাশ করেন। তার পরেই তিনি এসএসসির মাধ্যমে শিক্ষাকর্মীর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পুরুলিয়া জেলাশাসক দফতরের চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষাতেও পাশ করেছিলেন ওই সময়েই। তাঁর কথায়, “বাড়ির কাছে থাকার সুযোগ পেয়ে স্কুলেই যোগ দিলাম। পুরুলিয়ায় গেলাম না। এখন চাকরিটাই রইল না!’’

কাঠের কাজ শুরু করে বৃদ্ধ ভবেন্দ্রনাথও বলেন, “একটা বিপর্যয় এসেছে। তার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। পালিয়ে তো যেতে পারব না!” তাঁর পুত্রবধূ অর্পিতা সংসারের ভার কমাতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছেন। লিটনের আক্ষেপ, “পুরুলিয়ার জেলাশাসকের দফতরে কাজ পেয়েছিলাম। তখন যোগ দিইনি। যদি এখন সেটা ফিরিয়ে দিত কেউ!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman SSC Supreme Court

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}