বাজল ছুটির ঘণ্টা।
সেই ঘণ্টা বাজানোর লোকই আর নেই। স্কুলে কর্মীর অভাব ছিলই। এসএসসি-র প্যানেল বাতিলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে সে সঙ্কট আরও বাড়তে চলেছে বলে বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন। কর্মীর এমন অভাবে জেলার বেশ কিছু স্কুল চিরাচরিত ঘণ্টা তুলে দিয়ে বৈদ্যুতিন ঘণ্টা (বেল) বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবারও জেলার বেশ কিছু স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর অভাবে শিক্ষকেরাই ঘণ্টা বাজিয়েছেন।
আদালতের রায়ে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর সঙ্গে চাকরি যেতে চলেছে চতুর্থ শ্রেণির অনেক কমীরও। তার জেরে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বেশ কিছু স্কুলে ফাঁকা হয়ে গেল চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। কিছু স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কমে যাওয়ায় স্কুলগুলি অসুবিধার মধ্যে পড়ছে। এই কর্মীরা মূলত স্কুলের দরজা-জানলা খোলা, ঘণ্টা বাজানোর মতো দৈনন্দিন নানা কাজ করেন। পরীক্ষার সময়েও বিভিন্ন বাড়তি দায়িত্ব থাকে তাঁদের।
মন্তেশ্বরের ভেলিয়া পঞ্চপল্লি হাই স্কুলে শুক্রবারই মূল্যায়ন পরীক্ষার সময়ে শিক্ষকেরা ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন। এ দিন স্কুল শুরুর সময়ে মেমারির সাতগেছিয়ার বাসিন্দা, ওই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সোমনাথ দে ঘণ্টা বাজান। প্রধান শিক্ষক মোল্লা
আখতার হোসেন বলেন, “শুধু ঘণ্টা বাজানো নয়, স্কুলের গেটও শিক্ষকদের খুলতে হচ্ছে। আমাদের স্কুলে আর শিক্ষাকর্মী রইল না!” রায়না ২ ব্লকের গোতান হাই স্কুলের এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ায় পরীক্ষা শেষে ঘণ্টা দেওয়া, শ্রেণিকক্ষ খোলা-বন্ধ— সবই শিক্ষকদের করতে হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৈকত নন্দী বলেন, “চতুর্থ শ্রেণির কর্মী না আসায় আমরাই পালা করে তাঁর কাজগুলি করব বলে ঠিক করেছি।”
কালনা ২ ব্লকের দত্তদরিয়াটন স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যামন্দিরের
দু’জন চতুর্থ শ্রেণি কর্মীর মধ্যে এক জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, আর এক জন অবসর নেওয়ার দোরগোড়ায় থাকায় তিনি ছুটি নিচ্ছেন বেশি। ফলে, ওই কর্মীদের কাজ করার কোনও লোক পাওয়া মুশকিল হতে বসেছে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিন ঘণ্টা
বাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক মৃণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই পরিচালন সমিতি এই
সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
মেমারির সাতগেছিয়া বাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও এক জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রূপক রায়ের চিন্তা, “আমাদের স্কুলে ১,২৬০ জন পড়ুয়া। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর
কাজ হয়ে যাবে। কিন্তু শিক্ষাকর্মী বিভিন্ন প্রকল্পের যে সব কাজ করতেন, তা কী ভাবে মিটবে?” বর্ধমানের তেজগঞ্জ বা কালনার শ্রীরামপুর ভারতী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়ে দু’জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর মধ্যে এক জন রইলেন। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস রায় বলেন, “মিড-ডে মিল চালানো কঠিন হয়ে গেল।” তাঁর
মতো অনেক স্কুলের প্রধান
শিক্ষকেরই দাবি, “মিড-ডে মিলের বাজার, মুদির সামগ্রী নিয়ে আসা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে সমন্বয়— এ সব চতুর্থ শ্রেণির
কর্মীরা করতেন। মিড-ডে মিলেও প্রভাব পড়বে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)