Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বেহাল বাজার, দখলের রাস্তায় আটকে শহর

বছর পনেরো আগে জলের পাইপলাইন পেতেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। ঠিক মতো জল মিলেছিল বছর দুয়েক। তার পরে অনিয়মিত সরবরাহই যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু জল নয়, নিকাশি থেকে রাস্তাঘাট— উখড়ায় উপযুক্ত পরিষেবার অভাব রয়েছে নানা ক্ষেত্রেই।

চলা দায় বাজারের রাস্তায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

চলা দায় বাজারের রাস্তায়। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
উখড়া শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৫ ০২:০১
Share: Save:

বছর পনেরো আগে জলের পাইপলাইন পেতেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। ঠিক মতো জল মিলেছিল বছর দুয়েক। তার পরে অনিয়মিত সরবরাহই যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু জল নয়, নিকাশি থেকে রাস্তাঘাট— উখড়ায় উপযুক্ত পরিষেবার অভাব রয়েছে নানা ক্ষেত্রেই।

কোথাও একেবারেই জল মেলে না। কোথাও আবার কল থেকে জল পড়লেও তা সপ্তাহে এক-দু’দিন। পনেরো দিন ছাড়া জল পাওয়া যায়, এমন এলাকাও রয়েছে বলে বাসিন্দারা জানান। তাঁরা জানান, বড়পাড়া, ময়রাপাড়া, ধীবরপাড়া, মুসলিমপাড়া, বাউরিপাড়া, দাসপাড়া, পুরনো হাটতলা, বাজপেয়ী মোড় এলাকায় আগে জল আসত। কিন্তু এখন কল শুকনোই পড়ে থাকে। অনেক জায়গায় বাসিন্দারা জল কিনে খেতে বাধ্য হন। বণিকসভার কর্তা সীতরাম বার্নোয়াল, মহাদেব দত্তেরা জানান, ৪৫ টাকা দিয়ে ১২ টিন জল কিনতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ রায়চৌধুরী, বুম্বা মুখোপাধ্যায়দের দাবি, জল নিয়ে এত দুর্ভোগ পোহাতে হয় যে তা যেন গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে এলাকার মানুষের।

পরিকল্পিত ভাবে বাজার গড়ে তোলা ও তার ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পঞ্চায়েতের। কিন্তু উখড়া বাজারে গেলে কোনও রক্ষণাবেক্ষণের চিহ্ন চোখে পড়ে না। এলাকাবাসী জানান, আশপাশ মিলিয়ে প্রায় ৫৬টি গ্রামের ভরসা উখড়ার বাজার। কিন্তু সেই বাজারে কোনও শৌচাগার নেই। বাজার করতে আসা মানুষজন, বিশেষত মহিলা ও বয়স্ক লোকজনকে রীতিমতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বাজারের নর্দমাও পরিষ্কার করা হয় না। দুর্গন্ধে সমস্যায় পড়েন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বাজারের দু’টি রাস্তাই জবরদখলের দাপটে সরু হয়ে গিয়েছে। পুরনো ব্যবসায়ীরা জানান, দখলদারি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বাজারের কোথাও যদি কখনও আগুন লাগে তবে দমকলের গাড়ি পৌঁছলেও ভিতরে ঢুকতে পারবে না। এর সঙ্গে রয়েছে পর্কিংয়ের সমস্যা। এলাকায় কোথাও নির্দিষ্ট কোনও পার্কিং জোন নেই। ইচ্ছে মতো যেখানে-সেখানে গাড়ি রাখা হয় বাজার এলাকায়। তার ফলে বাজারে মাঝে-মধ্যে যানজট তৈরি হয়। কিন্তু তা প্রতিকারের ব্যাপারে কোনও পক্ষেরই হেলদোল নেই বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

এ সবের সঙ্গে রয়েছে বেহাল রাস্তার সমস্যা। বাজার যাওয়ার এক দিকের রাস্তা শঙ্করপুর মোড় থেকে উখরা পেট্রোল পাম্প পর্যন্ত বেশ খারাপ। উখরা বাজার লাগোয়া বাজপেয়ি মোড়ে তিন মিনিট অন্তর একটি করে বাস আসার কথা। কিন্তু, অনেক সময়ে দেখা যায় তিনটি বাস এক সঙ্গে এসে দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীদের অভিযোগ, আগে যাত্রী তোলার তাগিদে চালকেরা সময়ের আগেই বাস নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার জেরেও যানজট হয়। এর পরে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পোঁছনোর তাগিদে দ্রুত চলতে গিয়ে ছোটখাট দুর্ঘটনাও ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে ব্যবসায়ী মহল, সকলেরই দাবি, এ ব্যাপারে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত প্রশাসনের। এ ছাড়া মালবাহী ভারী গাড়ি চলাচলের সময়ও নির্দিষ্ট করা জরুরি। সিমেন্ট, বালি, ইট, কয়লার মতো নানা সামগ্রী বোঝাই ট্রাক বা ডাম্পার চলাচলের জন্য দুপুর ২টো থেকে বিকেল ৪টে এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাতে যান চলাচল সুস্থ-স্বাভাবিক রাখা যাবে বলে তাঁদের দাবি।

রাস্তায় নানা সমস্যা থাকলেও সড়ক পরিবহণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা উখড়ায় রয়েছে বলে মনে করেন বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁদের আক্ষেপ, উখড়া স্টেশনের উপর দিয়ে দিনে ১৩টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন যাতায়াত করলেও কোনওটি সেখানে দাঁড়ায় না। এই স্টেশনে টিকিট সংরক্ষণের কাউন্টার থাকলেও দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে যেতে হয় আসানসোল বা দুর্গাপুরে। এলাকার কংগ্রেস নেতা কৃষ্ণ রায়ের দাবি, অন্তত দু’টি এক্সপ্রেস ট্রেন যাতে এই স্টেশনে দাঁড়ায়, সে আর্জি বারবার জানানো হলেও ফল হয়নি।

পরিষেবার এমন অবস্থার পাশাপাশি ছবিটা বিশেষ উজ্জ্বল নয় খেলাধুলোর ক্ষেত্রেও।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Vegetable market road parking Ukhrah daspara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE