মৃতের বাবা। —নিজস্ব চিত্র।
এ বার আলু চাষে বিপর্যয়ের দিকে আঙুল উঠল চাকরি না পাওয়া এক ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেমারির আলিপুরে নিজের বাড়িতে ঝুলন্ত দেহ মেলে ওই যুবকের। শুক্রবার তাঁর বাবা দাবি করেন, চাকরি না পেয়ে এমনিতেই অবসাদে ভুগছিলেন তাঁর ছেলে। এ বার আলু চাষেও ক্ষতির মুখে পড়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। পুলিশ-প্রশাসন অবশ্য এই ঘটনার সঙ্গে আলু চাষের কোনও যোগের কথা মানেনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় প্রবীণকুমার লাহা (২৭) নামে ওই যুবকের দেহ মেলে। মেমারি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে জানান ডাক্তারেরা। শুক্রবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হয়। মৃতের বাবা, অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক গঙ্গাধর লাহা বলেন, ‘‘২০১০ সালে আমার ছেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে। চেষ্টা করেও কোনও চাকরি পায়নি সে। আমাদের জমি রয়েছে। এ বার সে নিজেই সাড়ে চার বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিল।’’
গঙ্গাধরবাবুর দাবি, মাঝে নাবিধসা রোগ হওয়ায় ফলন কম হয়। সাড়ে চার বিঘাতে যেখানে প্রায় সাড়ে তিনশো বস্তা আলু পাওয়ার কথা ছিল সেখানে মাত্র ২২০ বস্তা পাওয়া গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সব মিলিয়ে আমাদের প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। তার উপরে যেটুকু আলু হয়েছে, তা-ও বিক্রি হচ্ছে না। তাতেই হতাশ হয়ে ছেলে আত্মঘাতী হয়েছে।’’ তবে তিনি জানান, বাজারে তাঁদের কোনও ঋণ নেই।
গঙ্গাধরবাবুদের প্রতিবেশী তথা আলুচাষি আশিস কোনারের বক্তব্য, ‘‘গোটা এলাকায় আলু চাষ এ বার মার খেয়েছে। যে সামান্য আলু ফলেছে, তারও খদ্দের মেলেনি। তাই আমাদের প্রত্যেকেই প্রচণ্ড বিপদে পড়েছি।” তিনি আরও দাবি করেন, ‘‘চাকরি না পেয়ে প্রবীণ হতাশায় ভুগছিল। তার উপরে আলু চাষে ক্ষতির ধাক্কা ও সামলাতে পারেনি। তাই আত্মঘাতী হয়েছে।” প্রতিবেশী অরুণকান্তি ঘোষ, বটকৃষ্ণ মালিকদেরও বক্তব্য, ‘‘প্রবীণ খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিল। মানসিক অবসাদেও ভুগছিল। তবে আলু চাষে ব্যর্থ হয়েই সে আত্মহত্যা করেছে। আলুর তো বাজার নেই। এটাতেই চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।”
সারা ভারত কৃষকসভার বর্ধমান জেলা সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘এই নিয়ে আমাদের জেলায় সাত জন আলুচাষি আত্মঘাতী হলেন। একে তো ইঞ্জিয়ারিং পাশ করা ছাত্রকে রাজ্য সরকার চাকরি দিতে পারে না, তার পরে আবার সে যে চাষ করে ভাল থাকবে, সেই ব্যবস্থাও করতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে মানুষ তো হতাশ হবেনই।”
মেমারির তৃণমূল বিধায়ক আবুল হাসেম মণ্ডল অবশ্য দাবি করেন, “ওই যুবক মানসিক অসুখে ভুগছিলেন। বেশ কয়েক বার তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর আত্মহত্যার সঙ্গে আলু চাষের কোনও সম্পর্ক নেই।” মেমারি থানার পুলিশেরও দাবি, মৃত যুবক চাষি পরিবারের ছেলে নন। তাঁর বাবা ও মা দু’জনেই শিক্ষকতা করেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভাল। অন্য কোনও মানসিক চাপে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে পুলিশের অনুমান। মৃতের পরিবার যদিও ওই যুবককে মানসিক অসুখের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করার কথা মানতে চায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy